Advertisement
E-Paper

থ্যাঙ্ক ইউ, খবর শুনে রক্ষীকে বললেন মদন

নানা সূত্রে জোরদার ইঙ্গিত মিলছিল। এমনকী, খোদ দলনেত্রীর আশ্বাসও এসে পৌঁছেছিল কারাগারের অন্দরে। তা-ও চাপা টেনশন কাটেনি। সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত মদন মিত্রের চোখে-মুখে শুক্রবার সকাল থেকে সেটাই ফুটে উঠছিল বারবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:৪৮
মদন মিত্রের কেন্দ্র কামারহাটিতে দেওয়াল লিখনে ব্যস্ত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। শুক্রবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

মদন মিত্রের কেন্দ্র কামারহাটিতে দেওয়াল লিখনে ব্যস্ত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। শুক্রবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

নানা সূত্রে জোরদার ইঙ্গিত মিলছিল। এমনকী, খোদ দলনেত্রীর আশ্বাসও এসে পৌঁছেছিল কারাগারের অন্দরে। তা-ও চাপা টেনশন কাটেনি।

সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত মদন মিত্রের চোখে-মুখে শুক্রবার সকাল থেকে সেটাই ফুটে উঠছিল বারবার।

এবং তাতে দাঁড়ি পড়ল বিকেল পাঁচটা নাগাদ। আলিপুর জেল-অফিসের চেয়ারে বসে নাতিকে নিয়ে খুনসুটির মাঝে সুসংবাদটি পেলেন সাদা পাজামা-পাঞ্জাবিতে শোভিত প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী। পাশের ঘরের টেলিভিশনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংবাদিক সম্মেলন দেখে এসে সেটি শোনালেন এক কারারক্ষী। ‘‘আপনার কামারহাটিতে তো আপনিই তৃণমূলের ক্যান্ডিডেট।’’—বললেন তিনি।

শুনে সাংবাদবাহকের সামনে মনের খুশি ও স্বস্তি উজাড় করে দিয়েছেন মদনবাবু। সহাস্যে বলেছেন, ‘‘থ্যাঙ্ক ইউ।’’

সারদা-কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হয়ে যিনি জেলবন্দি, তাঁকে ফের প্রার্থী করা নিয়ে শাসকদলের উদ্দেশে ইতিমধ্যে আক্রমণ শানাতে শুরু করেছে বিরোধীরা। তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এ দিন নিজের প্রার্থীর পাশেই দাঁড়িয়েছেন। ‘‘মদন মিত্র এমএলএ ছিলেন, থাকবেন। মানুষ ভোট দিলে জিতবেন।’’— মন্তব্য তাঁর।

এখানেই শেষ নয়। পরে সন্ধ্যায় এক চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী মদন প্রশ্নে বিরোধী ‘জোট’কে এক হাত নিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘মদন তো ২০১১-য় মন্ত্রী হয়েছে। সারদা হয়েছে তার অনেক আগে। তখন তো সিপিএম ছিল। ওরা কি ধোয়া-তুলসীপাতা?’’ মমতার এ-ও প্রশ্ন, ‘‘কেন্দ্রে তখন কংগ্রেস ছিল। তারা কিছু করেনি কেন? রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সেবি কিছু করেনি। ওকে অনুষ্ঠানে ডেকেছে। মন্ত্রী হিসেবে যেতেই পারে।’’ দলনেত্রীর পাল্টা তোপ, ‘‘মদনের অন্যায় থাকলে আইনত ব্যবস্থা হোক। তাতে কিছু বলার নেই। কিন্তু চোদ্দো-পনেরো মাস ধরে ওকে জেলে রেখেছে! চোর-ডাকাতও এর মধ্যে জামিন পেয়ে যায়। এটা তদন্ত হচ্ছে, নাকি তদন্তের নামে প্রহসন!’’

যাঁর প্রার্থিপদ ঘিরে এ হেন চাপান-উতোর, সেই মদন মিত্র এখন আর মন্ত্রী নন। ইচ্ছে হলে টিভি-ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই। তবে জেলে বসে এ দিন সকাল থেকে তিনি ঘনিষ্ঠ বন্দিদের বারবার শুনিয়েছেন একটাই কথা— ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের প্রতি আমি আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ। বিশ্বাস করি, কামারহাটির নির্বাচকমণ্ডলী আমাকে দুয়া ও আশীর্বাদ দেবেন।’’

তার মানে টিকিটপ্রাপ্তি নিয়ে তিনি মোটামুটি নিশ্চিতই ছিলেন। বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। বস্তুত মদনকে যে প্রার্থী করা হবে, নেত্রী মমতা ঘনিষ্ঠমহলে তার আঁচ দিয়েছেন অন্তত মাস চারেক আগে। তখনই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ‘‘মদনের বিরুদ্ধে যে ভাবে প্রতিহিংসামূলক আচরণ করা হচ্ছে, আমাদের রাজনৈতিক ভাবে তার জবাব দিতেই হবে।’’

সন্দেহ নেই, এ দিনের ঘোষণা সেই ‘রাজনৈতিক যুদ্ধের’ই অঙ্গ। যদিও তাকে কটাক্ষের বাণে বিদ্ধ করছে বিরোধীপক্ষ। ‘‘উনি ক্ষমতায় আসা ইস্তক বলে আসছেন, আমাদের জেলে ভরবেন। পাঁচ বছরে কাউকে ভরতে পারেননি। অথচ ওঁদেরই মন্ত্রী-সাংসদেরা জেলে। জেল থেকেই প্রার্থী! এ রাজ্যে এখন এ সবই চলছে।’’— বলেছেন বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘তৃণমূলের এই তো অবস্থা! কাকে বাদ দিয়ে কাকে প্রার্থী করবে? সবাই তো দাগি!’’

তবে বিরোধীরা যা-ই বলুন, ‘দাদা’ প্রার্থী হয়েছেন আর ‘দিদি’ পাশে দাঁড়িয়েছেন। স্বভাবতই সন্ধে থেকে কামারহাটিতে তৃণমূলকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের জোয়ার। সেখানকার মদন-ঘনিষ্ঠ নেতাদের বক্তব্য, ‘‘প্রত্যাশা ছিল, দাদা আবার প্রার্থী হবেন। দিদি তা পূরণ করলেন।’’ কামারহাটির পুরসভার দু’-এক জন কাউন্সিলর এ দিন জেলেও চলে যান ‘দাদা’র সঙ্গে দেখা করতে। তাঁদের এক জন বলেন, ‘‘একটা কাজও আমরা দাদার নির্দেশ ছাড়া করব না। দাদা নির্দেশ দিয়েছেন, এলাকার প্রতিটি ঘরে পৌঁছতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে যে, সবার পাশে মদন মিত্র ছিলেন, রয়েছেন, থাকবেন।’’ প্রসঙ্গত, গত ২৩ জানুয়ারি কামারহাটির কর্মিসভায় বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে মদনের নামই ঘোষণা করেছিলেন দলীয় সাংসদ সৌগত রায়। সভার কর্মীদের থেকেও প্রার্থী হিসেবে মদন মিত্রের নাম প্রস্তাব আকারে নিয়ে উচ্চ নেতৃত্বকে পাঠানো হয়। কামারহাটি পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান গোপাল সাহা বলেন, ‘‘ওঁর নাম প্রস্তাব আকারে পাঠিয়েছিলাম। উচ্চ নেতৃত্ব তাতে সিলমোহর দিলেন। আমরা কৃতজ্ঞ।’’

সারদায় নাম জড়িয়ে ২০১৪-র ডিসেম্বরে গ্রেফতার হয়েছিলেন মদন। মাঝে কয়েক দিনের জামিনকাল বাদ দিলে সেই থেকে তিনি বন্দিই। কিন্তু কামারহাটির সঙ্গে সম্পর্ক কখনও ছিন্ন হয়নি। পুরভোট হোক কিংবা বস্ত্র বিতরণের আসর— সর্বত্র তাঁর অদৃশ্য উপস্থিতি টের পাওয়া গিয়েছে। ঘনিষ্ঠ মহলের খবর, নিজের ভোটও সেই ভাবে লড়তে হবে ধরে নিয়ে মদন প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। এ দিন কামারহাটি থেকে আসা কর্মীদের তিনি বলে দেন, দ্রুত দেওয়াল লেখা ও হোর্ডিং টাঙানো শুরু করতে হবে। তার পরে ছোট-বড় সব কর্মীকে একজোট করে সভা-মিছিলের পালা। কামারহাটির ২২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা চেয়ারম্যান পারিষদ বিশ্বজিৎ সাহার কথায়, ‘‘দাদা এখন যেটুকু বলেছেন, সেটুকু শুরু করেছি। পরের নির্দেশ এলে সেই মতো কাজ হবে।’’

আর গোপালবাবুর প্রত্যয়ী ঘোষণা, ‘‘এখনই বলে দিচ্ছি, দাদা এ বার আরও বেশি ভোটে জিতে আসবেন।’’

madan mitra poll ticket tmc contest jail
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy