মদন মিত্র
মরা সাপ থেকে মরা হাতি!
আদালতে প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্রকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ ও ‘প্রভাবশালী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তাঁকে এমন নানা কিছুর সঙ্গে তুলনা করলেন সিবিআইয়ের কৌঁসুলি। কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর মতে, মদন মিত্র মন্ত্রিত্ব ছাড়তে পারেন, বিধানসভা নির্বাচনে হেরেও গিয়ে থাকতে পারেন। তাই বলে ওঁর প্রভাব কিছু কমছে না। ‘‘মরা হাতি লাখ টাকা! সাক্ষীদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা এখনও ওঁর বিলক্ষণ আছে।’’— পর্যবেক্ষণ সিবিআই কৌঁসুলির।
এবং এই যুক্তিতেই তারা বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতে সারদা-কাণ্ডে গ্রেফতার মদনবাবুর জামিন-আর্জির বিরোধিতা করল। মদনবাবুর কৌঁসুলি মিলন মুখোপাধ্যায় ও পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় সওয়ালে বলেছিলেন, সারদা রিয়েলটি সংক্রান্ত নির্দিষ্ট এই মামলাটিতে (আরসি-৪) খোদ সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন জামিন পেয়ে গিয়েছেন। সারদার অন্যতম ডিরেক্টর তথা সুদীপ্তের ‘ছায়াসঙ্গিনী’ দেবযানী মুখোপাধ্যায়ও জামিন পেয়েছেন। বাকি ৩২ জন অভিযুক্তের অধিকাংশেরই এতে জামিন জুটেছে। ‘‘মদন মিত্র কেন পাবেন না?’’— প্রশ্ন তোলেন প্রাক্তন মন্ত্রীর কৌঁসুলিরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘মামলাটিতে চার্জশিট জমা পড়ে গিয়েছে। তা ছাড়া মদনবাবু এখন আর বিধায়কও নন। কোনও ভাবেই ওঁকে প্রভাবশালী বলা যাবে না।’’
ঘটনা হল, রিয়েলটি মামলায় সুদীপ্ত বা দেবযানী জামিন পেলেও সারদা কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত অন্য মামলায় তাঁদের জামিন হয়নি। কাজেই তাঁদের জেলে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু মদনবাবুর বেলায় ব্যাপারটা অন্য রকম। ওঁর বিরুদ্ধেও সারদায় একাধিক মামলা। তবে সবগুলো এক সঙ্গে করে একটি মামলার অধীনে শুনানি হচ্ছে। ফলে এখানে জামিন মঞ্জুর হলে তিনি ছাড়া পেয়ে যাবেন।
এমতাবস্থায় তাঁর জামিন আটকাতে চেষ্টার কসুর করছেন না কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। এ দিন পাল্টা সওয়ালে সিবিআইয়ের কৌঁসুলি কে রাঘবচারিলু মরা হাতির উপমা টেনেছেন। ‘লাখ টাকা’ সংক্রান্ত প্রবাদটি পরিষ্কার বাংলায় উচ্চারণ করে তিনি যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘মদন মিত্র এমন এক জন মানুষ, যিনি বিধায়ক থাকুন বা না-থাকুন, সমাজে তাঁর প্রভাব থাকবেই।’’ রাঘবচারিলুর আশঙ্কা, ‘‘মামলার সন্ধিক্ষণে ওঁকে জামিন দিয়ে দিলে তিনি সাক্ষীদের উপরে প্রভাব খাটাতে পারেন।’’ কোর্ট-সূত্রের খবর: মামলাটিতে সাক্ষী ২৩২ জন।
পাশাপাশি সিবিআই মনে করছে, মদনবাবুকে কৃতকর্মের ফল ভুগতে হচ্ছে। যে প্রসঙ্গে এসেছে মরা সাপের কথা। ‘‘সাপ পিঁপড়ে খায়। কিন্তু সে মরে গেলে পিঁপড়ের পাল তার গায়ে চড়াও হয়। মদনবাবু এক সময়ে আমানতকারীদের টাকা নিয়ে ফুর্তি করেছেন। এখন আমানতকারীরাই সাক্ষী হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন।’’— মন্তব্য রাঘবচারিলুর।
এ দিনের সওয়াল-জবাব শেষে আলিপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা বিচারক উত্তমকুমার নন্দী জানিয়ে দেন, শুক্রবার ফের শুনানি হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy