Advertisement
E-Paper

মধ্যমগ্রাম বিস্ফোরণে আহত যুবকের মৃত্যু

পুরভোটের দিন, ২৫ এপ্রিল মধ্যমগ্রামের দিগবেড়িয়া এলাকায় একটি বাগানবাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হয়েছিল চার কিশোর ও রফিক আলি নামে বছর তিরিশের এক যুবক। টানা ১২ দিন লড়াইয়ের পর বৃহস্পতিবার সকালে আর জি কর হাসপাতালে মৃত্যু হল রফিকের। বাকি চার কিশোর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। কিন্তু এখনও কারও শরীরে ঢুকে রয়েছে বোমার স্প্লিন্টার, কেউ বা চোখে ভাল করে দেখতে পাচ্ছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৫ ০৩:২৫

পুরভোটের দিন, ২৫ এপ্রিল মধ্যমগ্রামের দিগবেড়িয়া এলাকায় একটি বাগানবাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হয়েছিল চার কিশোর ও রফিক আলি নামে বছর তিরিশের এক যুবক। টানা ১২ দিন লড়াইয়ের পর বৃহস্পতিবার সকালে আর জি কর হাসপাতালে মৃত্যু হল রফিকের। বাকি চার কিশোর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। কিন্তু এখনও কারও শরীরে ঢুকে রয়েছে বোমার স্প্লিন্টার, কেউ বা চোখে ভাল করে দেখতে পাচ্ছে না।

ভোটের দিন ওই বাগানবাড়িতে স্থানীয় লোকজনের খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। সেখানেই পর পর বেশ কয়েকটি বোমা ফেটে জখম হয় ওই পাঁচ জন। অভিযোগ উঠেছিল, ওই বাগানবাড়িতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ঘাঁটি গেড়েছিলেন। তাঁদের রাখা বোমার আঘাতেই এমন ঘটনা। পাল্টা অভিযোগে তৃণমূল অবশ্য জানিয়েছিল, ওই বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া চলার সময়ে বাইরে থেকে বোমা ছোড়ে সিপিএম।

বৃহস্পতিবার সকালেই রফিকের বাড়িতে পৌঁছে যায় মৃত্যুর খবর। আত্মীয়-পরিজনেদের পাশাপাশি গোটা এলাকা ততক্ষণে জড়ো হয়েছে তাদের এক চিলতে উঠোনে। কেউ কাঁদছেন, কেউ বা খবর শোনার পরে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছেন। রফিকের মেয়ে, বছর দেড়েকের রাইমা তার বাবার পাসপোর্ট ছবি হাতে নিয়ে বসে রয়েছে মায়ের কোলে। রফিকের স্ত্রী নার্গিস বিবি বললেন, ‘‘পুলিশ এসেছিল। কারা কারা বাগানবাড়িতে ছিল সেই নাম-ধামও শুনে গেল। কিন্তু কিছুই হল না।’’

কিন্তু বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পরে এত দিন কেটে গেলেও এখনও এক জনও গ্রেফতার হল না কেন? উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কারও নামে কোনও অভিযোগ না হওয়ায় নির্দিষ্ট কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।’’ কিন্তু কেউ অভিযোগ করতে ভয় পেলেও একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যু এবং এত জন আহত হওয়ার পরেও পুলিশ কেন স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে অপরাধী ধরার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়নি জানতে চাইলে ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘মৃত্যুর ঘটনা আজকেই ঘটেছে। পুলিশ তদন্ত করছে।’’

ভোটের দিন বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পরে সবচেয়ে সরব হয়েছিলেন রফিকের বাবা শের আলি। ওই বাগানবাড়িতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিল জানিয়ে, খাওয়ার জায়গায় কেন বোমা রাখা হয়েছিল সে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। এ দিন অবশ্য শের আলি বলেন, ‘‘ঘটনার পর থেকে ছেলের চিকিৎসার ব্যাপারে সাংসদ, বিধায়কেরাই সব তদারকি করেছেন। ওঁরা বলেছেন, ক্ষতি তো যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। তাই আর অভিযোগ করিনি। চুপ করে রয়েছি।’’

তবে চুপ থাকেননি মহম্মদ ইসমাইল এবং তাঁর স্ত্রী আসুরা বিবি। ওই দম্পতির একমাত্র সন্তান ইয়াসের আরাফত আলি মাথা, বাঁ হাত ছাড়াও সর্বাঙ্গে ক্ষত আর ঝলসানো মুখ নিয়ে বুধবারই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছে। তার শরীরের যা অবস্থা, তাতে এখনই সমস্ত স্প্লিন্টার বার করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। অশ্বিনীপল্লি হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রটিও ভোটের দিন ওই বাগানবাড়িতে ভোজে গিয়েছিল।

বৃহস্পতিবার আসুরা বিবি প্রতিবাদের স্বরে বলেন, ‘‘বারবার বলা হচ্ছে ও খেতে গিয়েছিল, ওর বাড়িতে কী খাবার জোটে না? অনেকেই তো গিয়েছিল। ও তো ছোট্ট বাচ্চা!’’ স্ত্রীকে থামিয়ে ইসমাইল বলেন, ‘‘ঘটনার পরে সাংসদ, বিধায়কেরা এসেছিলেন। আমাদের সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা বলেছি, একমাত্র ছেলেকে যদি চিকিৎসা করে না-ই বাঁচাতে পারি, তাহলে আর কী হল?’’ মাথা নীচু করে আসুরা বিবি বললেন, ‘‘টাকায় কী আর সব ফিরে পাওয়া যায়?’’

তবে এ দিন মধ্যমগ্রামের বিধায়ক ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান রথীন ঘোষ বলেন, ‘‘বোমার রাজনীতি তৃণমূল করে না। ঘটনাটি মর্মান্তিক। তাই আমরা যতটা সম্ভব সমস্ত পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।’’

madhyamgram blast injured youth rg kar hospital madhyamgram blast madhyamgram municipality vote
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy