Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Cash For Query Case

‘আইশ্যাডো আর লিপস্টিক দিয়েছিল দর্শন, দু’কোটির উপহার অসত্য গল্প’, দাবি করলেন মহুয়া

নিশিকান্ত যে অভিযোগ করেছেন তার মধ্যে অন্যতম, সংসদের ওয়েবসাইটে লগ ইন করার জন্য নিজের কোড এবং পাসওয়ার্ড দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানিকে দিয়ে দিয়েছিলেন মহুয়া।

An image of Mahua Moitra

কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৩৩
Share: Save:

দুবাই-ভিত্তিক ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে কয়েক বছর আগে আইশ্যাডো আর লিপস্টিক উপহার পেয়েছিলেন জন্মদিনে। দু’কোটি টাকা নগদ নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা ভিত্তিহীন। শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে এমনই দাবি করলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তিনি এ-ও দাবি করেছেন, একটি বিদেশি প্রসাধনী প্রস্তুতকারক সংস্থার ওই সামগ্রী তাঁকে দর্শন দিয়েছিলেন জন্মদিনের উপহার হিসাবে। দুবাই বিমানবন্দর থেকে কেনা ওই সামগ্রী ছিল নিঃশুল্ক (ডিউটি ফ্রি)। মহুয়া আরও জানান, মুম্বই গেলে দর্শন বন্ধু হিসাবে বিমানবন্দরে তাঁর জন্য গাড়ি পাঠাতেন। ভবিষ্যতে মুম্বই গেলেও তিনি বন্ধু দর্শনকে বলবেন বলেও জানিয়েছেন মহুয়া।

মহুয়ার বিরুদ্ধে ‘টাকা ও উপহারের বিনিময়ে প্রশ্ন’ তোলার অভিযোগ জানিয়ে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি দিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। পাশাপাশি, মহুয়ার প্রাক্তন বন্ধু জয় অনন্ত দেহাদ্রাইও চিঠি দেন সিবিআই প্রধানকে। লোকসভার স্পিকার নিশিকান্তের সেই চিঠি পাঠিয়ে দেন এথিক্স কমিটিতে। বৃহস্পতিবার এথিক্স কমিটির বৈঠক বসে। সেখানে বক্তব্য শোনা হয় নিশিকান্ত এবং জয়ের। দু’জনেই অভিযোগ করেছেন, দুবাইয়ের ব্যবসায়ী হীরানন্দানির কাছ থেকে ‘উপঢৌকন’ নিয়ে মহুয়া সংসদে শিল্পপতি গৌতম আদানি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জড়িয়ে প্রশ্ন তোলেন।

শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মহুয়া বলেন, ‘‘দর্শনের যে তথাকথিত হলফনামা এথিক্স কমিটিতে পেশ হয়েছে বা প্রকাশ্যে রয়েছে, তাতে দু’কোটি টাকা নগদের কথা বলা নেই। আমি তো বলেছি, এথিক্স কমিটি দর্শনকে ডাকুক। আমার মুখোমুখি বসাক।’’ মহুয়া প্রশ্ন তোলেন, কবে, কোথায় তাঁকে নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে তার প্রমাণ দিতে পারবেন অভিযোগকারীরা? মহুয়ার আরও বক্তব্য, তিনি টাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। বরং আদানির বিরুদ্ধে তিনি যাতে প্রশ্ন না তোলেন তার জন্য তাঁর মুখ বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছিল।

জয় অনন্ত অভিযোগ করেছিলেন, দর্শনের কাছ থেকে মহুয়া দামি ব্র্যান্ডের জুতো, ব্যাগ-সহ অন্যান্য জিনিস উপহার নিয়েছিলেন। মহুয়া দাবি করেছেন, যে যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, তার সপক্ষে কোনও নথি দিতে পারবেন না অভিযোগকারীরা। তৃণমূল সাংসদ আরও বলেন, ‘‘অভিযোগ কারা করেছেন? এক জনের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাঁর সঙ্গে পোষ্যের মালিকানা নিয়ে বিবাদ হয়। আর দ্বিতীয় জন বিজেপির সাংসদ। যাঁর সঙ্গে গত তিন-চার বছর ধরেই আমার রাজনৈতিক সংঘাত লেগে রয়েছে।’’

মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তাঁর দিল্লির টেলিগ্রাফ লেনের বাংলো নতুন করে সাজিয়েছেন ব্যবসায়ী দর্শনের টাকায়। সাক্ষাৎকারে মহুয়া কাগজ দেখিয়ে দাবি করেন, দর্শনের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সখ্য রয়েছে। সেই সূত্রে তিনি ব্যবসায়ী বন্ধুকে বলেছিলেন, তাঁর সংস্থার আর্কিটেক্টরদের দিয়ে নকশা করিয়ে দিতে। কিন্তু বাংলো সংস্কারের কাজ করেছে সরকারি সংস্থা সিপিডব্লিউডি।

নিশিকান্ত যে অভিযোগ করেছেন তার মধ্যে অন্যতম, সংসদের ওয়েবসাইটে লগ ইন করার জন্য নিজের কোড এবং পাসওয়ার্ড হীরানন্দানিকে দিয়ে দিয়েছিলেন মহুয়া। ওই ব্যবসায়ী দুবাইয়ে বসে তার ‘সুযোগ’ নিয়েছেন। এটি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন। মহুয়া অবশ্য পাল্টা দাবি করেন, সমস্ত সাংসদের লগ ইন কোড এবং পাসওয়ার্ড প্রকাশ করা হোক। তা হলেই বোঝা যাবে, আরও কেউ ওই একই কাজ করেন কি না। তৃণমূল সাংসদের দাবি, তিনি বেশির ভাগ প্রশ্ন হাতে লিখে সই করে দেন। কোনও কোনও সময়ে তা সাংসদের লগ ইন আইডি ব্যবহার করে লেখেন। কখনও তিনি দর্শনকে বলেছেন, তাঁর সংস্থার কর্মচারীদের দিয়ে টাইপ করিয়ে দেওয়ার জন্য। নিশিকান্তের অভিযোগের মূল বিষয় ছিল মহুয়ার ‘দুবাই-যোগ’। তৃণমূল সাংসদের বক্তব্য, এ রকম কোনও নিয়মই নেই। তা ছাড়া অনেক সাংসদই তাঁদের লগ ইন আইডি অন্যদের দিয়ে রাখেন। মহুয়ার বক্তব্য, প্রশ্ন লিখলেও ফোনে ওটিপি আসে। সেটা অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না।

উদ্ভূত বিতর্কে তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস ও নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন চুপ, সেই প্রশ্নেরও মুখোমুখি হতে হয় মহুয়াকে। জবাবে তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘আমি তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী। মমতা বন্দ্যাপাধ্যায় আমার রাজনৈতিক মা। তাঁর অনেক বড় লড়াই রয়েছে। এই লড়াইটা আমিই লড়তে পারব।’’

আগামী ৩১ অক্টোবর তৃণমূল সাংসদ মহুয়াকে ডেকে পাঠিয়েছে লোকসভার এথিক্স কমিটি। বৃহস্পতিবার সেই চিঠি পাওয়ার পর শুক্রবার মহুয়া কমিটির চেয়ারম্যান বিনোদ সোনকরকে লিখিত ভাবে জানান, ওই দিন তাঁর পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ তাঁর লোকসভা কেন্দ্রে বিজয় সম্মেলন রয়েছে। ৪ নভেম্বর পর্যন্ত পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি রয়েছে। ৫ নভেম্বরের পর যে কোনও দিন, যে কোনও সময়ে ডাকলে তিনি যেতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Mahua Moitra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE