চাঁচলের আশাপুরে আসরাফুল। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।
মদন মিত্রের জামিনের শুনানি রয়েছে, জানতেন। দুপুরে তাই টিভির খবর শুনতে বসেছিলেন চাঁচলের আসরাফুল হক। টিভিতে নিজের নাম শুনেই চমকে উঠলেন। কী বলা হচ্ছে খবরে, বোঝার পর ভয়ে কাঁপতে শুরু করেন তিনি। বাড়িতে ছিলেন প্রৌঢ়া মা, স্ত্রী। একই রকম আতঙ্কিত তাঁরাও।
রমজান মাস। রাতে গিয়েছিলেন বাড়ির পাশের মসজিদে নমাজ পড়তে। সেখানেও প্রতিবেশীদের নানা প্রশ্ন ভিড় করে এল। আসরাফুল কার্যত পালিয়ে এলেন বাড়িতে। বললেন, ‘‘সবাই বলছে, আমার জন্যই মদন মিত্রের জামিন নাকচ হয়ে গিয়েছে। আমি সাধারণ মানুষ। ভয় হচ্ছে, এর পর কী হবে?’’
এখনও টেলিফোনে বা অন্য কোনও সূত্রে কোনও হুমকি পাননি আশাপুরের ওষুধের দোকানের কর্মী আসরাফুল। তবু সব যেন এলোমেলো হয়ে গিয়েছে তাঁর। প্রতি মুহূর্তে ভয় পাচ্ছেন, এই বুঝি কিছু হল! আসরাফুলের দুই ভাই দিনমজুর। আসরাফুল আগেও একটা ওষুধের দোকানেই কাজ করতেন। দোকান উঠে যাওয়ার পর বেকার হয়ে পড়েন। সেই সময় বেসরকারি লগ্নি সংস্থাগুলির রমরমা। পাড়াতেই এক জনের হাত ধরে সারদার এজেন্ট হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন আসরাফুল। মন্ত্রী মদন মিত্র সারদার অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন দেখে সারদার উপর ভরসা আরও বেড়েছিল, অস্বীকার করেন না আসরাফুল। মুখ্যমন্ত্রীকে একটি দৈনিকের উদ্বোধন করতে দেখেছিলেন, সেই দৈনিকটিও কিনেছিল সারদা গোষ্ঠী। আসরাফুল সেই সব কথা বুঝিয়েই লগ্নিকারীদের থেকে টাকা তুলতেন। দু’বছরে ১৭ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন তিনি। সারদা থেকে রোজগারের টাকায় পাকা বাড়িও
করেন। বলছেন, ‘‘নিজের সর্বস্বও সারদায় লগ্নি করেছিলাম। তখন ভাবিনি এ ভাবে পথে বসতে হবে।’’
সারদার ভরাডুবির পর কিছু গা ঢাকা দিয়েছিলেন। পরিস্থিতি থিতিয়ে গেলে বাড়িতে ফেরেন। ফেরার পরেই চাঁচল থানায় সারদার বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ আসরাফুলই করেছিলেন। তার জল যে এত দূর গড়াবে, ভাবতেও পারেননি। এলাকায় সাদাসিধে মানুষ হিসাবে পরিচিত আসরাফুল। বেশ কয়েকবার সিবিআইয়ের নোটিস পেয়েও ভয়ে হাজিরা দেননি। তার পর এক সময় বাধ্য হয়েই হাজিরা দিতে হয় তাঁকে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। টিভিতে তাঁর নাম উঠবে, সেটা কল্পনার বাইরে ছিল। ‘‘মনে হচ্ছে, মাথায় বাজ পড়েছে,’’ বলছেন তিনি।
পুরনো ওষুধের দোকানের মালিক ফের নতুন দোকান তৈরি করেছেন। আসরাফুল এখন সেখানেই কাজ করছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে তাঁর ঘুম উড়েছে। স্ত্রী নাসিমা বিবিও বলছেন, ‘‘টিভিতে খবর দেখার পরেই স্বামী ঠকঠক করে কাঁপতে শুরু করেছিলেন! সব শুনে আরও ভয় চেপে বসেছে।’’ পড়শিরা অবশ্য পাশে দাঁড়িয়ে ভরসা দিচ্ছেন, এটাই যা সান্ত্বনা ওই দম্পতির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy