Advertisement
E-Paper

টেট মামলা তুললে ৬৫ হাজার শিক্ষকের নিয়োগ ১৫ দিনে, আশ্বাস মমতার

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট যে-দিন জোড়া প্রশ্ন তুলল, সেই শুক্রবারেই টেট নিয়ে সুরাহার আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০০

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট যে-দিন জোড়া প্রশ্ন তুলল, সেই শুক্রবারেই টেট নিয়ে সুরাহার আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

মামলার পর মামলার ফাঁসে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ আটকে আছে। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার আশ্বাস দেন, মামলা প্রত্যাহার করে নিলে তিনি ১৫ দিনের মধ্যে নিয়োগ-সমস্যার সমাধান করে ফেলবেন।

শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনে প্রাথমিক স্তরে পঠনপাঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রাথমিকের টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট বা টেট হয়েছে। কিন্তু শুধু প্রশিক্ষিত প্রার্থীই নেওয়া হবে, নাকি প্রশিক্ষণহীনেরাও সুযোগ পাবেন— সেই মূল প্রশ্ন আদালতে পৌঁছে যাওয়ায় নিয়োগ হচ্ছে না।

এই অবস্থায় এ দিন মেয়ো রোডে দলের ছাত্র শাখা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে এক সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে আশার আলো দেখছেন প্রার্থীরা। ওই সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এক দল লোক আদালতে মামলা করে (নিয়োগ) আটকে রেখেছে। আবার পিছনে বলছে, কেন হচ্ছে না, কেন হচ্ছে না! মামলা প্রত্যাহার করে নিন। এক সেকেন্ডে সব হয়ে যাবে। রাজ্য সরকার শিক্ষক নিয়োগের জন্য তৈরি আছে।’’

তার পরে মঞ্চে উপস্থিত শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, কত শিক্ষক নিয়োগ বাকি রয়েছে। ৬৫ হাজার নিয়োগ বাকি শুনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘৬৫ হাজার শিক্ষকের নিয়োগের প্রক্রিয়া হয়ে আছে। মামলা প্রত্যাহার করে নিলে ১৫ দিনের মধ্যে হয়ে যাবে।’’

শিক্ষা শিবিরের প্রশ্ন, ১৫ দিনের মধ্যে যে-সমস্যা মিটিয়ে ফেলা যায় বলে মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, সেটা বছরের পর বছর ঝুলে আছে কেন? আর হাইকোর্ট এ দিনই প্রশ্ন তুলেছে, টেটে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের কি একই মাপকাঠির আওতায় ফেলা হয়েছে? ‘‘যদি সেটা না-হয়, যদি ফারাক থেকে থাকে, তা হলে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীরা বসার সুযোগ পেলেন কী ভাবে,’’ প্রশ্ন বিচারপতি চিন্নাস্বামী স্বামীনাথন কারনানের।

হাইকোর্ট এ দিন সরকারকে জোড়া প্রশ্নবাণে বিঁধলেও সরকারের তরফে সরাসরি কোনও জবাব দেওয়া হয়নি। অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল লক্ষ্মী গুপ্ত শুধু হাইকোর্টে জানান, নিয়োগে প্রশিক্ষিতদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এটা নতুন কথা নয়। এর আগের দিনের শুনানিতেও লক্ষ্মীবাবু আদালতে একই কথা জানিয়েছিলেন। তাতে যে আদালতের প্রশ্ন বা সংশয়ের নিরসন হয়নি, এ দিন বিচারপতির জোড়া প্রশ্নই তার প্রমাণ বলে আইনজীবী শিবিরের পর্যবেক্ষণ।

শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, প্রশিক্ষিত প্রার্থীদের অগ্রাধিকার নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে না। যত বিভ্রান্তি তো প্রশিক্ষণহীনদেরও সমান সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই। গত ১১ অক্টোবর রাজ্য জুড়ে যে-টেট নেওয়া হয়েছিল, তা বাতিলের আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন কিছু প্রশিক্ষিত প্রার্থী। প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদেরও টেটে বসার সুযোগ দেওয়ার জন্য রাজ্য গত বছর কেন্দ্রের কাছে আবেদন করে। গত বছরের ১ এপ্রিল কেন্দ্র তা মঞ্জুর করে। শর্ত ছিল, ২০১৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে নিয়োগ শেষ করতে হবে। কিন্তু সেই নিয়োগ না-হওয়ায় টেট বাতিলের আবেদন জানিয়ে মামলা করা হয়।

আবেদনকারীদের আইনজীবী সৌমেন দত্ত এ দিন আদালতে অভিযোগ করেন, রাজ্যের তরফে পেশ করা রিপোর্টে সত্য গোপন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণহীনদের টেটে বসতে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে গত বছরের ২৩ মার্চ কেন্দ্রকে যে-চিঠি দেওয়া হয়, তাতে উল্লেখ করা হয়েছিল, রাজ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৪৯৫। এটা ২০১২ সালের পরিসংখ্যান বলে দাবি করে ওই আইনজীবী জানান, ২০১৫ সালে প্রশিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৪ হাজার। রাজ্য সরকার যদি এই পরিসংখ্যানের কথা জানাত, তা হলে গত বছরের টেটে প্রশিক্ষণহীনদের বসার সুযোগই দিত না কেন্দ্র।

সৌমেনবাবু জানান, নির্দেশ পেলে তিনি প্রশিক্ষিত ও প্রশিক্ষণহীনদের ঠিক পরিসংখ্যান পেশ করবেন। বিচারপতি নির্দেশ দেন, ৩১ অগস্ট সেই পরিসংখ্যান পেশ করতে হবে।

এই শুনানির মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের কথা ছড়িয়ে পড়ে। প্রার্থীদের অনেকে জানান, এত দিনের প্রতীক্ষার পরে আর ১৫ দিন অপেক্ষা করাই যায়। মুখ্যমন্ত্রী সমস্যা মিটিয়ে দিলে প্রার্থী ও পড়ুয়া সকলেরই সুরাহা হতে পারে বলে শিক্ষা শিবিরের অভিমত। কিন্তু যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁরা তা তুলে নেবেন কি না, তার জবাব মেলেনি।

TET
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy