মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ডেঙ্গি পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক, সে কথা এখনও মুখে বলছেন না ঠিকই। কিন্তু পুরসভা-পঞ্চায়েতকে পুরোদমে মাঠে নামতে নির্দেশ দিলেন, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তা চাইলেন, আইসিডিএস এবং আশা কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার চালাতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিস্থিতির গুরুত্ব যে রাজ্য সরকারও মানতে বাধ্য হচ্ছে, এটাই তার প্রমাণ বলে মনে করছেন অনেকে।
সোমবার নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘পুরসভা-পঞ্চায়েতগুলোকে পুরোদমে ময়দানে নেমে কাজ করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর ইতিমধ্যে টাকা দিয়ে দিয়েছে। যদি কোনও পুরসভা টাকা নিয়ে কাজ না করে তা হলে দরকার পড়লে আমি সেই বোর্ড ভেঙেও দিতে পারি।’’
ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে এতটা কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রী আগে দেননি। গত ১২ অক্টোবর ডেঙ্গি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মমতা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয় বলেছিলেন। গত ২৫ অক্টোবরও তিনি দাবি করেন, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বস্তুত সে দাবি থেকে তিনি এ দিনও খাতায়কলমে সরে আসেননি। বিরোধী দলনেতাকে লেখা চিঠিতে পুরনো অবস্থানই বজায় রেখেছেন। কিন্তু যে ভাবে রোগের প্রকোপ ঠেকাতে পুর প্রশাসনকে ঝাঁপাতে বললেন, হুঁশিয়ারি দিলেন, সেটা পরিস্থিতির গুরুত্ব যে তিনি মানছেন তারই ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: দেগঙ্গায় ডেঙ্গিতে মৃত্যু দশ মাসের অন্তঃসত্ত্বার
২৫ তারিখ মমতা দায়ী করেছিলেন, ভিন রাজ্য থেকে আসা জীবাণুকে। মরসুমি আবহাওয়ার দিকেও আঙুল তুলেছিলেন। এ দিন রোগবৃদ্ধির জন্য দীর্ঘস্থায়ী বর্ষার ভূমিকার কথা বারবার বলেছেন তিনি। নির্দিষ্ট করে বলেছেন, ডেঙ্গির চরিত্র বদলের কথা। মশাদের গতিপথ বদলের কথাও। এ সবও বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেওয়ার ইঙ্গিত, মনে করছেন অনেকে।
তবে অন্য রাজ্যের তুলনায় এ রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর সংখ্যা কম, সে কথা তিনি এখনও বলছেন। ২৫ তারিখ বলেছিলেন, এ রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃতের সংখ্যা ৩৪। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে ১৩ জন ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন। আরও ২৭ জনের নাম বেসরকারি হাসপাতাল থেকে এসেছে। এটা মানছি না। পরীক্ষা করতে হবে।’’
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, ‘‘বনগাঁ, দমদম, বিধাননগর, খড়দহ সহ উত্তর ২৪ পরগনার কিছু এলাকা, ভাঙরের দু’টি ব্লক, মালদহ, কৃষ্ণনগর ও জলপাইগুড়ির সদর ব্লকে সরকার বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। মমতার কথায়, ‘‘ভাঙড়ের দু’জন মারা গিয়েছে। জায়গাটা একটু বিচ্ছিন্ন। ওখানে পঞ্চায়েত আছে। কিন্তু তারা জানেই না। আমি কলকাতা পুরসভা থেকে দল পাঠিয়েছি।’’ ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনকেও দল পাঠানোর অনুরোধ করেছেন তিনি।
তবে মমতার মতে, ক’দিন আগে নবান্ন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে শরৎ চ্যাটার্জি রোডে ডেঙ্গিতে এক মহিলার ডেঙ্গিতে মৃত্যু হওয়ার খবর ঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘‘ওই মৃত্যু ডেঙ্গিতে নয়। এনএস ১ পজিটিভ, আইজিএম পজিটিভ দুটো একসঙ্গে হয় না। এটা যে বলেছে তার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’’ এটা যে শুধুই কথা কথা নয়, তা বোঝাতে মমতা বলেন, ‘‘ভুল তথ্য সরবরাহ করার অভিযোগে তিনটে বেসরকারি ল্যাবের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।’’ সংবাদমাধ্যম যে বিভ্রান্তি বাড়াচ্ছে, সে অভিযোগও এনেছেন ফের। বিভ্রান্তির সুযোগ নিয়ে কেবল স্যালাইন ও অক্সিজেন দিয়ে কিছু বেসরকারি হাসপাতাল পাঁচ-সাত লক্ষ টাকা নিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ মমতার।
• জ্বর হলে ডাক্তার দেখান। ৪-৫টা মাল্টি-অর্গান ফেলিওর হওয়ার পরে ডাক্তারের কাছে না-এসে আগে থেকে দেখালে অনেক কিছু কিওর হয়ে যায়।
• ডেঙ্গি এ বার চরিত্র বদলেছে। কোথাও এটা ডেঙ্গি হচ্ছে, কোথাও ম্যালেরিয়া হচ্ছে, কোথাও সোয়াইন ফ্লু হচ্ছে।
• মশাটা তো অন দ্য রেকর্ড নয়। তারা কখনও কখনও রাস্তা চেঞ্জ করে বলে অসুবিধা হয়। যেটা আগে হতো, সেটাকে আমরা কন্ট্রোল করে নিয়েছি। এটাকে আবার রিসার্চ করে বার করতে হবে।
• কেরল ছোট্ট স্টেট, কলকাতার মতো একটা জায়গা, সেখানেও ১১১। অসম আমাদের চেয়ে কত ছোট। একদম ছোট্ট, জাস্ট এ স্মল স্টেট। অসমে তো ডেঙ্গিতেই ৮০ জন মারা গিয়েঁছে।
• এই সময়টায় রোগ হয়। বর্ষাকালের পরে যেমন একটা ডায়েরিয়া হয়, বন্যার পরে একটা ডায়েরিয়ার প্রবণতা থাকে। এ বারের বৃষ্টিটাও একটু বিপজ্জনক হয়েছে বলতে পারেন। কখনও হচ্ছে, কখনও চলে যাচ্ছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy