পেশাগত দাবি নিয়ে এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় সরব হলেন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের কয়েক জন। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের ভর্ৎসনা করেন। পরে অবশ্য তাঁদেরই কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিবেচনার আশ্বাস পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক- প্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার তৃণমূলের তফসিলি জাতি ও জনজাতি সংগঠনের সভা কসবায়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতা করতে উঠলে জনতার মধ্যে থেকে কয়েক জন হাতে পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে যান। তাঁরা ‘পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চে’র সদস্য। তা দেখেই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী ধমকের সুরেই বলেন, ‘‘আবার এখানে দু’তিন জনকে আমার সভা নষ্ট করতে পাঠানো হচ্ছে। আমাকে ব্ল্যাকমেল করে কিছু হবে না। অনেক দিয়েছি। আরও চাই!’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিজেপি, সিপিএম পাঠিয়ে দিচ্ছে।’’ সভাস্থলে কিছুটা বিশৃঙ্খলার মতো পরিবেশ তৈরি হলে উপস্থিত সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মাইকে জানিয়ে দেন, যাঁরা দাঁড়িয়েছেন, সভা শেষে দলের তরফে তাঁদের কথা শোনা হবে। তবে কিছু ক্ষণ পরে মমতাই বলেন, ‘‘আমার মাথা গরম বলে আপনারা মাথা গরম করবেন না।’’
মুখ্যমন্ত্রী এ-ও বলেন, ‘‘আমি তো ভগবান নই। ভগবানও সব কিছু করতে পারেন না! মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে কেউ যদি বলেন, ভগবান বাঁচাও! সবাইকে কি বাঁচাতে পারেন? আর পাঁচ দিন পরেই নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হবে। এই ক’বছর আপনাদের জন্য অফুরন্ত পরিশ্রম করেছি। তার পরেও আপনারা এসে বলেন, এই চাই-ওই চাই।...আমি যতটা পারি মানবদরদী হয়ে ততটা করতে পারি। কিন্তু এমন কিছু করতে পারি না, যেটা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়।’’ সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমায় ভালবেসে কেউ ঘর মুছে দিতে বললেও দেব। কারণ, আমি স্ট্রিট ফাইটার। কিন্তু কেউ যদি ব্ল্যাকমেল করে বলেন, এটা দিতে হবে, ওটা দিতে হবে। পারব না।’’ তাঁদের প্রতি মমতার বার্তা, ‘‘আপনার আমায় পছন্দ হলে দেবেন (ভোট)! না হলে দেবেন না। আমার কিছু যায়-আসে না। যাঁরা দেবেন, সেটা দিয়েই আমার সরকার হয়ে যাবে।’’ আর নিজের বক্তৃতা শেষে মাইক্রোফোনেই শিক্ষকদের কয়েক জনকে ডেকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁদের বকুনি দিয়েছি, তাঁরা আসুন। কথা বলব।’’
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরে মুক্তমঞ্চের প্রতিনিধিরা জানান, তাঁরা সমকাজে সমবেতন চালু করার কথা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন জানিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। তবে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী সরকারের দিকে আঙুল তুলে বলেছেন, ‘‘প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষকে প্রতারণা করা হয়েছে। তাই তাঁরা নিজেদের কথা বলছেন।’’