Advertisement
E-Paper

অনুব্রতকে মমতার ফোন কোর কমিটির বৈঠকের মাঝে! শেষে কাজল-আশিসেরা বললেন, ‘আর বিভাজন-বিভ্রান্তি নেই’

গত শুক্রবার বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সভাপতি পদ থেকে সরানো হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলকে। শুধু তা-ই নয়, ওই পদটাই তুলে দিয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। তার পর রবিবার প্রথম বৈঠকে বসল কোর কমিটি। সেখানে ছিলেন অনুব্রতও।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৫ ১৭:৫০
(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডল (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডল (ডান দিকে)।

শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে সদ্যই জেলা সভাপতির পদ হারিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। তার এক দিন পর, রবিবার কোর কমিটির বৈঠক বসেছিল বীরভূমে। অনুব্রতও ছিলেন সেখানে। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হল, এ বার থেকে নিয়ম করে মাসে দু’বার করে হবে কোর কমিটির বৈঠক। ঠিক যেমনটা শুরুতে বলে দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, বৈঠক চলাকালীন কেষ্টকে (অনুব্রতের ডাকনাম কেষ্ট, দলনেত্রী মমতা তাঁকে এই নামেই ডাকেন) ফোনও করেছিলেন দলের সর্বময়নেত্রী মমতা।

তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রায় দু’মাস ধরে কোর কমিটির বৈঠক না-হওয়া নিয়ে জেলায় দলের অন্দরে বিভাজন তৈরি হয়েছিল। কোর কমিটির অন্যতম সদস্য কাজল শেখ (অনুব্রত-বিরোধী বলেই পরিচিত। কাজল অবশ্য এ কথা অস্বীকার করে থাকেন।) এ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভও উগরে দিয়েছিলেন। সেই আবহে শুক্রবার অনুব্রতকে জেলা সভাপতি পদ থেকে সরিয়েছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। শুধু তা-ই নয়, বীরভূমে জেলা সভাপতির পদটাই তুলে দেওয়া হয়েছে। স্পষ্ট নির্দেশ, জেলা দলের সংগঠনের কাজকর্ম দেখভাল করবে কোর কমিটিই। এর পরেই রবিবার বেলায় কোর কমিটির বৈঠক ডাকেন জেলায় দলের চেয়ারপার্সন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বৈঠকে কেষ্ট যোগ দেবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা ছিল। কিন্তু দেখা গেল, বাকি সদস্যদের মতো রবিবার নির্ধারিত সময়েই বৈঠকে যোগ দেন কেষ্ট।

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠক শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণ পরেই অনুব্রতকে ফোন করেন মমতা। অনুব্রতের ঘনিষ্ঠ মহল সে কথা স্বীকারও করেছেন। কিন্তু দু’জনের মধ্যে ঠিক কী কথা হয়েছে, তা নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। অনুব্রত-শিবিরের দাবি, অনুব্রতকে মাথা ঠান্ডা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন দলনেত্রী। এ-ও বলেছেন, অনুব্রত চাইলে কোর কমিটির বৈঠক ডাকতেই পারেন। কিন্তু উত্তরে কেষ্ট ‘দিদি’কে জানান, হিসাবমতো তিনি বৈঠক আর ডাকতে পারেন না। তাই দলের চেয়ারপার্সন হিসাবে বৈঠক ডাকবেন আশিসই। এর পরেই কেষ্টকে ভাল করে এবং সকলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা।

যদিও বীরভূমে দলের অন্য একটি শিবির দাবি করছে, বৈঠকের মাঝে দলনেত্রী মমতা অনুব্রতকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি যাতে ভবিষ্যতে বীরভূমে নিজে থেকে কোনও মিটিং-মিছিল না ডাকেন। দলনেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, দলের কোনও কর্মসূচির আয়োজন করার থাকলে, তা আশিসই করবেন। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে দাবি করেছেন, জেলা সভাপতি পদে থাকাকালীন বীরভূমে তিনটি মহকুমায় চলতি মাসে মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন অনুব্রত। সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। অনুব্রতের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে অনুমোদনও দেয় কোর কমিটি। পরে দলনেত্রী ফোন করলে তাঁকেও বিষয়টি জানানো হয়। জেলার ওই নেতার দাবি, সব শোনার পর মমতাও কেষ্টকে ওই মিছিল করার অনুমতি দিয়েছেন। পাশাপাশিই তাঁর নির্দেশ, এর পর থেকে জেলায় কোনও কর্মসূচি করার থাকলে, তা নিয়ে যাতে আগে কোর কমিটিতে আলোচনা হয়। সেখানে অনুমোদিত হলে তবে ওই কর্মসূচির আয়োজন করবেন আশিস।

তবে অনুব্রত এবং মমতার মধ্যে আসলে কী কী বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে, তা নিয়ে কোনও শিবিরই প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেনি। দলের তরফেও আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানানো হয়নি।

ঘণ্টাখানেকের বৈঠক শেষে রামপুরহাটের বিধায়ক তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে, আগামী ২৪ মে রামপুরহাট, ২৫ মে বোলপুর এবং ২৬ মে সিউড়িতে বড় মিছিল হবে। যা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, কেন কোর কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে? আজ কোর কমিটির বৈঠকে অনুব্রত মণ্ডলের ঘোষিত কর্মসূচিতে মান্যতা দেওয়া হয়েছে।’’ আশিস আরও জানান, এ বার থেকে প্রতি মাসে দু’বার করে কোর কমিটির বৈঠক হবে। এর পরের বৈঠক হবে ১৪ জুন। সেটি হবে সিউ়ড়িতে। পরেরটি হবে বোলপুরে, ২৮ জুন তারিখে।

বৈঠকের পর আশিসের বক্তব্য, দলের আর কোনও বিভাজন নেই। বৈঠকে সম্মিলিত ভাবে যে সিদ্ধান্ত হবে, সেইমতোই জেলায় দল চলবে। তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনের সময় জেলায় দল পরিচালনা করবে কোর কমিটি। সমাজমাধ্যমে কারও কোনও অনুগামী যদি বিভাজনমূলক কিছু পোস্ট করেন, সে ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপ করা হবে দলগত ভাবে।’’ দলের অন্দরে কোনও বিভ্রান্তি বা বিভাজন নেই বলে দাবি করেছেন কাজলও। তিনি বলেন, ‘‘কোনও বিভ্রান্তি বা বিভাজন নেই৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশমতো কোর কমিটিই দল পরিচালনা করবে। আমাদের নেত্রী যা নির্দেশ দিয়েছেন, তার বাইরে কিছুই হবে না। আগামী দিনে কোর কমিটির নেতৃত্বেই বিধানসভা নির্বাচনে বীরভূমের সব ক’টি আসনে আমরা জিতব।’’

অনুব্রত, আশিস, কাজল ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, তৃণমূল নেতা সুদীপ্ত ঘোষ। ছিলেন না রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ ও বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়। আশিস জানান, শতাব্দী দিল্লিতে রয়েছেন। চন্দ্রনাথ অন্য একটি বৈঠকের কারণে বাইরে থাকায় যোগ দিতে পারেননি।

Mamata Banerjee Anubrata Mondal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy