Advertisement
E-Paper

শাহজাহান নিয়ে ১৪ দিনের ব্যবধানে দুই বার্তা মমতার, মাঝে ‘সক্রিয়’ অভিষেক, পরিকল্পনা মতো জালে ‘বাঘ’

অনেকের মতে, বিধানসভা থেকে মমতা শাহজাহান সম্পর্কে ‘দলনেত্রী’ হিসাবে বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু জনমানসে সন্দেশখালি নিয়ে যে বিরূপ ধারণা তৈরি হচ্ছে তা আঁচ করেই ‘প্রশাসকের বার্তা’ দিয়েছিলেন বুধবার।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:১৯
Shahjahan Sheikh Arrest

(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শাহজাহান শেখ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

বিধানসভার বক্তৃতায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছিলেন, তাতে অনেকেরই মনে হয়েছিল, ঠারেঠারে শাহজাহান শেখের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন তিনি। তার ১৩ দিনের মাথায় বুধবার মমতা বাঁকুড়ার সভা থেকে যা বলেছেন, তা শুনে আবার অনেকের মনে হয়েছিল, নাম না করে শাহজাহানকাণ্ডে ‘কড়া বার্তা’ দিতে চেয়েছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর ওই বার্তার পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই শাহজাহান গ্রেফতার! যে গ্রেফতারির পর বৃহস্পতিবার প্রকাশ্য মঞ্চ পেয়েও ওই প্রসঙ্গে নীরবই রইলেন মুখ্যমন্ত্রী।

বাজেট অধিবেশনের জবাবি বক্তৃতায় মমতা বিধানসভায় বলেছিলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে শাহজাহানকে ‘টার্গেট’ করে ইডি ঢুকল। সেই নিয়ে গোলমাল করে সংখ্যালঘু এবং আদিবাসীদের মধ্যে ঝামেলা লাগানো হচ্ছে। ওখানে আরএসএসের বাসা রয়েছে। মুখে মাস্ক পরে গোলমাল করা হচ্ছে। বহিরাগতরা সন্দেশখালিতে গোলমাল পাকাচ্ছে।’’ আর বুধবার খাতড়ার সরকারি সভা থেকে মমতা বলেন, ‘‘আমি জ্ঞানত কোনও অন্যায়কে সাপোর্ট (সমর্থন) করি না। অজান্তে কিছু হয়ে থাকলে সেটাকেও সমর্থন করি না।’’ এ কথা ঠিক যে, বুধবার মমতা কারও নাম করেননি। কিন্তু পরিপার্শ্ব, ঘটনাক্রম ইত্যাদি দেখে শাসক শিবিরের অনেকেই বুঝতে পেরেছিলেন, মমতা সন্দেশখালি এবং শাহজাহান নিয়েই বার্তা দিয়েছেন। কারণ, মাঝের ১৩-১৪ দিনে সন্দেশখালি নিয়ে জল অনেকটা গড়িয়ে গিয়েছে। মমতার দুই মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, সুজিত বসু বারংবার সন্দেশখালি গিয়ে শুনে এসেছেন, শাহজাহান বাহিনীর জমি দখলের অভিযোগের কথা। তৃণমূলের তরফে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যা থেকে মনে হয়েছে, পরোক্ষে শাসকদল মেনেই নিয়েছে যে, শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারেরা ‘জমিদারি’ কায়েম করেছিলেন সন্দেশখালিতে। সমান্তরাল ভাবে এই বার্তাও দেওয়া হয়েছে যে, শাহজাহানেরা যা-ই করে থাকুন, দল এই ধরনের কাজ বরদাস্ত করবে না।

শাসক শিবিরের একাংশের দাবি, বিধানসভা থেকে মমতা সে দিন শাহজাহান সম্পর্কে ‘দলনেত্রী’ হিসাবে মন্তব্য দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্রমে জনমানসে সন্দেশখালি নিয়ে শাসকদল ও সরকার সম্পর্কে যে বিরূপ ধারণা তৈরি হচ্ছে, তা আঁচ করেই মমতা ‘প্রশাসক’ হিসেবে বার্তা দেন বুধবার। সরাসরি বলেন, তিনি কোনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন না।

মমতার দুই মন্তব্যের মধ্যবর্তী সময়ে ময়দানে নামেন অভিষেক। দলের একাংশ মনে করছিলেন, সন্দেশখালির ‘প্রভাব’ কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আবার অনেকের বক্তব্য, ‘গ্রাউন্ড জ়িরো’র বিবিধ তথ্য পেয়ে অভিষেক আঁচ করেছিলেন, সন্দেশখালি নিয়ে যা হচ্ছে, তা শুধু ওই এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। লোকসভা ভোটের সন্দেশখালি নিয়ে ‘নেতিবাচক’ প্রচারে রাজনৈতিক কুপ্রভাব তৈরি হবে। কারণ, সন্দেশখালিতে মূল যে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসছিল, তার একটি মহিলাদের উপর লাগাতার নির্যাতন। দ্বিতীয়, জমি লুট। দু’টি বিষয়ই ‘স্পর্শকাতর’।

রাজনীতির শিক্ষা বলে, শাসকের চেয়ারে থাকলে অনেক সময় নিচুতলায় কী প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে, তা নজরে থাকে না। নন্দীগ্রামের পর ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে বামেরাও বলতেন, নির্বাচনে কোনও প্রভাব পড়বে না। কিন্তু সেই লোকসভা নির্বাচনই বাংলায় বামেদের পতন এবং মমতার উত্তরণের দিশা সূচিত হয়েছিল। বস্তুত, সন্দেশখালিকে ‘দ্বিতীয় নন্দীগ্রাম’ বলাও শুরু হয়েছিল। যার সরব বিরোধিতা করেছেন মমতা স্বয়ং।

বিধানসভার মন্তব্যের পর থেকে মমতা অবশ্য শাহজাহান বা সন্দেশখালি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। বরং সেই পর্বে সন্দেশখালি নিয়ে ‘সক্রিয়’ হয়েছেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক তাঁর অফিসে পার্থ, সুজিত, নারায়ণ গোস্বামীদের ডেকে বৈঠক করে সন্দেশখালির পরিস্থিতি দেখতে পাঠিয়েছিলেন। পাশাপাশিই তিনি আদালতের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেছিলেন। অভিষেকই প্রথম বলেছিলেন, আদালত রাজ্য পুলিশের হাত-পা বেঁধে দেওয়ার ফলেই শাহজাহানকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। গত ২১ ফেব্রুয়ারি আনন্দবাজার অনলাইনকে অভিষেক বলেন, ‘‘আদালত রাজ্য পুলিশের হাত-পা বেঁধে রেখেছে। যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ কার্গিল থেকে সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনকে ধরে আনতে পারে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে, সেখানে শাহজাহান কে?’’ গত রবিবার মহেশতলা থেকেও একই কথা বলেন তৃণমূলের সেনাপতি।

তার পর হাই কোর্ট বলে, আদালত শাহজাহানের গ্রেফতারিতে বাধা দেয়নি। পুলিশ চাইলে তাঁকে ধরতেই পারে। পাল্টা আদালতের রায়ের প্রতিলিপি সমাজমাধ্যমে দিয়ে তামাম তৃণমূল দাবি করে, কোর্টের কারণেই শাহজাহানকে ধরা যায়নি। এক কদম এগিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘অভিষেক অপ্রিয় সত্যিটা বলতেই আদালত নড়েচড়ে বসে। সাত দিনের মধ্যে শাহজাহান ধরা পড়বেন।’’

সেই সময়সীমার মধ্যেই শাহজাহান ধরা পড়েছেন। এবং ধরা পড়েছেন রাজ্য পুলিশের হাতেই। তাঁকে ১০ দিনের জন্য হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। তদন্তভার নিয়েছে সিআইডি। তারাই শাহজাহানকে ভবানী ভবনে জেরা করবে।

Shahjahan Sheikh Arrest Sandeshkhali Incident Mamata Banerjee Abhishek Banerjee TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy