রাজ্য বাজেটকে দিশাহীন বলে বিঁধেছিলেন বিরোধীরা। ভোটের আগে সেটিকে দলীয় ইস্তাহারের সঙ্গে তুলনা করে প্রশ্ন তুলেছিলেন খরচের বহর সামলাতে টাকার জোগান নিয়েও। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘দিশা না থাকলে আপনাদের (কেন্দ্র) সাহায্য ছাড়া চলছে কী করে?’’ এ বারের রাজ্য বাজেটকে সেরা বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন, এ ক্ষেত্রে তাঁদের লক্ষ্য ছিল নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিশুদের উন্নয়ন। তাই সেই খাতে খরচ হয়েছে বেশি, যা কেন্দ্রের বাজেটকে পিছনে ফেলেছে।
এ দিন বিধানসভার অধিবেশনে গোড়া থেকেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে সাসপেন্ড করায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন বিজেপি বিধায়কেরা। পরে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুরুর আগে তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়ে কক্ষত্যাগ করেন। মমতা প্রথমেই বলেন, ‘‘একতরফা বিভ্রান্তিকর মিথ্যা ভাষণ দেয়। অথচ উত্তর শোনার জন্য প্রস্তুত থাকে না।’’
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বাজেটে মোট খরচের ৪৪.৪২% রাজ্য ব্যয় করেছে নারীর ক্ষমতায়ন খাতে। শিশুদের উন্নয়নে ১৭.৫৭%। যেখানে কেন্দ্রের বাজেটে তা যথাক্রমে ৬.৬% এবং ২.৩%। সমাজের প্রতিটি অংশের মানুষের জন্য বাজেটে কিছু না কিছু রাখার দাবি করে মমতা জানান, তৃণমূল সরকার আসার আগে পশ্চিমবঙ্গে ৫৭.৬০% দারিদ্র ছিল। এখন সেই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৮.৬০ শতাংশে। তাঁর অভিযোগ, তফসিলিদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে ৪০% খরচ করতে পারেনি কেন্দ্র। সংখ্যালঘুদের জন্য হয়েছে ১২.৩%, আয়ুষ্মানে ২৯.৪%। মহিলাদের সুরক্ষাতেও ৭৩% খরচ করে উঠতে পারেনি। মমতার প্রশ্ন, ‘‘অর্থ খরচে ব্যর্থ না কি আপনারা মহিলা বিরোধী?’’
রাজ্যের নতুন বছরের বাজেটের বহরে ধারের পরিমাণ যে বাড়বে, তা নথিতে স্পষ্ট। এ নিয়েও সরব ছিলেন বিরোধীরা। মমতার পাল্টা দাবি, রাজ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের নিরিখে ঋণ ৩৭%, কেন্দ্রের তা ৫৮%। রাজ্যের যা ঋণের পরিমাণ, কেন্দ্রের তা প্রায় ২৭ গুণ বেশি। তাঁর কথায়, ‘‘রাজনৈতিক চমকে ভরা তাদের বাজেট। আইএমএফ বলেছে ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। পরে বলবে বিশ্বব্যাঙ্কও। দু’নম্বরি ছাপিয়ে চার নম্বরি হয়েছে। কেন্দ্রের ভ্রান্ত নীতির জন্যই বেকারত্ব বেড়েছে। দেশের তুলনায় বাংলায় কম ৩%।’’
সরকারের বিভিন্ন দফতরে পাঁচ লক্ষ কর্মসংস্থানের দাবি করে মমতা বলেন, ‘‘হিম্মত আছে বলে, বলে গেলাম। চাকরি আটকাবেন না। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক কেলেঙ্কারি জানলেও, যদি চাকরি কোথাও হয় তা হলে আমরা কোনও কথা বলি না। কারণ যে-ই পাক, চাকরি তো হোক।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)