অন্য কারও মধ্যস্থতা নয়, দলের বেসুরো নেতাদের সঙ্গে এ বার সরাসরি কথা বলতে শুরু করলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দলের ভিতর থেকে বেশ কিছু দিন ধরে যে ক্ষোভের আঁচ বেরিয়ে আসছে তার একটি বড় বিষয় হল সাংগঠনিক কাজে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের ‘হস্তক্ষেপ’। দলের মধ্যে বেসুরো যাঁরা, তাঁদের অধিকাংশেরই বক্তব্য, সংগঠনের ভালমন্দ, কর্তব্য ইত্যাদি ‘বহিরাগত’ এক জনের কাছ থেকে শুনতে হবে কেন? যাঁরা ইতিমধ্যে দল ছেড়েছেন তেমন কয়েক জন প্রকাশ্যেই এই প্রশ্ন তুলে গিয়েছেন।
সূত্রের খবর, বিষয়টি যাতে আর না বাড়ে তাই রাশ এ বার হাতে নিচ্ছেন মমতা স্বয়ং। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে শীঘ্রই বেসুরো মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেকে কথা বলবেন তৃণমূলনেত্রী। হুগলির বেসুরো বিধায়ক প্রবীর ঘোষালের সঙ্গে ইতিমধ্যে মমতার এক প্রস্ত কথাও হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: ব্রিটেনের পরে দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেন নিয়ে আতঙ্ক
আরও পড়ুন: পাল্টা কৃষক জমায়েতে আজ বক্তৃতা মোদীর
দল পরিচালনা নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভের কথা জানিয়েছিলেন রাজীব। শুধু তাই নয়, শুভেন্দু-পর্বে তাঁর বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়েও জল্পনা রয়েছে। এই অবস্থায় তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দু’দফায় তাঁর সঙ্গে কথাও বলেন। সেখানে প্রশান্তের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি করেছিলেন রাজীব। তার পর বিষয়টিতে মমতা হস্তক্ষেপ করছেন বলে খবর। দলত্যাগী শুভেন্দুর সঙ্গে বার দুই বৈঠক করে দলে তাঁর সমস্যা বোঝার চেষ্টা করেছিলেন প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া সেখানে ছিলেন প্রশান্তও। শেষ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ফোনে নিজের কথা জানালেও শুভেন্দুর সঙ্গে মুখোমুখি কথা হয়নি মমতার। শুভেন্দু বিজেপিতে যাওয়ার আগেও এই জট খুলতে মাঠে নেমেছিলেন প্রশান্ত। বেশ কয়েকবার বিক্ষুব্ধ শুভেন্দু ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। শুভেন্দুর সঙ্গে কথা বলতে প্রশান্ত তাঁদের কাঁথির বাড়িতেও গিয়েছিলেন। তাতে অবশ্য কাজ হয়নি।
দলের জেলা স্তরের কিছু জায়গায় একই রকম সমস্যা আছে। শুভেন্দু বা রাজীবের মতো হেভিওয়েট না হলেও সেই নেতা বা জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও মমতা কথা বলতে পারেন বলে জানা গিয়েছে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাজে জানুয়ারিতে আর এক দফায় জেলা সফর শুরু করছেন মমতা। দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘রাজীব বা অন্যদের ক্ষোভ বা আলাদা মত থাকতেই পারে। দলের নেতামন্ত্রীদের সঙ্গে নেত্রী তো কথা বলেনই। প্রয়োজন মনে করলে বলবেন।’’
দলীয় সূত্রে খবর, পরামর্শদাতা হিসেবে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী বাছাইয়েও ভূমিকা নিতে শুরু করেছিলেন প্রশান্ত। তবে পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে সে ক্ষেত্রেও রাশ যে তিনিই হাতে রাখবেন, বিভিন্ন জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে সেই বার্তাও দিয়েছেন মমতা। প্রার্থী বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত যে তিনিই নেবেন, ইতিমধ্যে সেই বার্তা দেওয়া শুরু হয়েছে। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী বিভিন্ন সভায় দলীয় কর্মীদের কাছে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন।
দলের আরেক শীর্ষনেতার অবশ্য বলেন, ‘‘দলনেত্রী আগেই বলেছিলেন তিনি সরকারের পাশাপাশি সংগঠনও এখন নিজে দেখবেন। তাই দলের বিভিন্ন স্তরে নেতা বা জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি যদি বৈঠক করেন তাতে অন্য অর্থ খোঁজা ঠিক নয়। এটা অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার অঙ্গ।’’