প্রধানমন্ত্রী, কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য কোনও মন্ত্রী যদি টানা ৩০ দিন জেলে থাকেন, তা হলে তাঁকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে। এই মর্মে বুধবার লোকসভায় বিল পেশ করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পেশ করা সেই বিলের তীব্র বিরোধিতা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মত, এই বিল এনে হিটলারি কায়দায় গণতন্ত্রের উপর আঘাত হানতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই বিলের মাধ্যমে আদতে আদালত-বিচারব্যবস্থার ক্ষমতাই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতার মত, এই বিলের মাধ্যমে ইডি-সিবিআইয়ের মতো সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচিত রাজ্য সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা হচ্ছে। এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে মমতা লিখেছেন, ‘‘সাধারণ মানুষের দেওয়া ভোটে সরকার তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়াকেই তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। অনির্দিষ্ট ক্ষমতা তুলে দেওয়া হচ্ছে ইডি-সিবিআইয়ের হাতে, যাদের সুপ্রিম কোর্ট খাঁচাবন্দি তোতা বলেছিল। সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকেই ধসিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতেই যাবতীয় ক্ষমতা তুলে দেওয়া হচ্ছে।’’
বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, যে কোনও মূল্যে কেন্দ্রের নয়া বিলকে আটকাতে হবে। মমতা বলেন, ‘‘গণতন্ত্রকে বাঁচানোর সময় এসেছে। গণতন্ত্র, আদালতের ক্ষমতা কেড়ে নিলে মানুষ ক্ষমা করবে না।’’
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু। পার্থ নিয়োগ দুর্নীতি মামলা এবং জ্যোতিপ্রিয় রেশন দুর্নীতি মামলায়। গ্রেফতার হওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় পার্থকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো হয়েছিল। কিন্তু বালু গ্রেফতার হওয়ার পরেও অন্তত সাড়ে তিন মাস রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন। তা নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। পার্থ এখনও জেলে। বালু অবশ্যে জামিনে মুক্ত। দিল্লিতেও আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়ে তিহাড় জেলে বন্দি ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। জেলে বসেই মুখ্যমন্ত্রিত্ব চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কারণ অভিযুক্ত মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীকে সরানোর কোনও ব্যবস্থা সংবিধানে ছিল না।
বুধবার কেন্দ্র যে বিল পেশ করেছে লোকসভায়, তাতে বলা হয়েছে— যদি প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্যের মন্ত্রী গুরুতর অভিযোগে টানা ৩০ দিন ধরে হেফাজতে থাকেন এবং যদি তাঁর পাঁচ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তা হলে ৩১ দিনের দিন সেই অভিযুক্তকে পদ থেকে সরে যেতে হবে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার জন্য এ এক নতুন উপায় বলে সরব হয়েছে বিরোধী শিবির।
মমতার মত, কেন্দ্রের এই বিল আসলে দেশের গণতন্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে হত্যার চক্রান্ত। এই পরিস্থিতিকে ‘জরুরি অবস্থার চেয়েও বেশি কিছু’ বলে মন্তব্য করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এটা কোনও সংস্কার নয়। বরং এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে বিচারব্যবস্থার আর কোনও স্বাধীনতাই থাকবে না। এটা বিচার ব্যবস্থাকে দমানোর চেষ্টা। সাংবিধানিক রক্ষাকবচ নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। এই বিলের উদ্দেশ্যই হল— এক ব্যক্তি, এক দল এবং এক সরকারের হাতেই যাবতীয় ক্ষমতা তুলে দেওয়া।’’