—ফাইল চিত্র।
বাংলার উন্নয়ন হয়েছে কি না, তা নিয়েই দিনভর চলল তৃণমূল-বিজেপি তরজা। বিজেপির দাবি, স্বাধীনতার পর বাংলার যা আর্থসামাজিক পরিস্থিতি ছিল, এখন তার অবনতি হয়েছে। শাসকদল তৃণমূল অবশ্য বিজেপি-র সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, সারা বাংলা ঝকঝক চকচক করছে। ঈর্ষাকাতর হয়ে এসব কথা বলা হচ্ছে।
উন্নয়নে রাজ্য সরকার ব্যর্থ। বঙ্গ সফরে এসে এই অভিযোগ তোলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মমতার সরকারের একাধিক ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন তিনি। অমিতের সেই দাবিগুলো মিথ্যা প্রমাণ করতে ময়দানে নামে তৃণমূল। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিথ্যা বলছেন বলে দাবি করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন মমতা। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান অনুসারে ওই প্রকল্পগুলোতে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে প্রথম হয়েছে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা ভারতের মধ্যে দারিদ্র দূরীকরণ, ১০০ দিনের কাজ, গ্রামীণ বাড়ি নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, দক্ষতা উন্নয়ন, সংখ্যালঘু স্কলারশিপ, ই-গভর্নেন্স ও ই-টেন্ডারে বাংলা প্রথম।" একইসঙ্গে মমতা জানান, ভারতে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৪.১৮ শতাংশ। আর পশ্চিমবঙ্গে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৭.২৬ শতাংশ। এ ছাড়া শিল্প, কর্মসংস্থান ও কৃষিতে ভারতের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ অনেক এগিয়ে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।
বাংলার আইন-শৃঙ্খলার প্রসঙ্গে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির দিকে আঙুল তুলেছেন মমতা। মমতার মতে, বাংলার থেকে ওই রাজ্যগুলিতে দাঙ্গা, খুন, মারপিট, ধর্ষণ ও দলিতদের উপর অত্যাচার বেশি হয়। আর এ রাজ্যে আত্মহত্যা, ব্যক্তিগত খুনকে বিজেপি রাজনৈতিক খুন বলছে। বিগত বাম জমানার থেকে বর্তমানে রাজনৈতিক হত্যা অনেক কমেছে বলে দাবি মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর কথায়, বাম আমলের শেষ দশ বছরে বাংলায় রাজনৈতিক খুন হয়েছে ৬৬৩টি। আর তৃণমূল জমানায় কমে হয়েছে ১৫৩টি। অন্য রাজ্যের তুলনায় ধর্ষণের ঘটনা এখানে কম। মহিলাদের নিরাপত্তাতে এ রাজ্য অনেক ভাল জায়গায় রয়েছে বলে দাবি মমতার। এ ছাড়া তাঁর আরও দাবি, দেশের মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়ন সবেতেই ভাল স্থানে রয়েছে বাংলা। বাংলার ১০০ শতাংশ স্কুলে শৌচালয় নেই বলে দাবি করেছিলেন অমিত শাহ। অমিতের ওই দাবির পাল্টা হিসেবে মমতা বলেন, "যাবেন নাকি কোনও শৌচালয়ে। স্যানিটাইজ করে দেব।" বাংলার উন্নয়ন নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা যা প্রশ্ন তুলেছিলেন, তার সবকটির উত্তর দিয়েছেন তিনি, এমনটা মনে করে গুজরাতি খাবার খেতে চেয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, "সব উত্তর দিয়ে দিয়েছি। তার জন্য অমিত শাহকে খাওয়াতে হবে। আমি গুজরাতি খাবার ধোকলা খেতে চাই।"
আরও পড়ুন: মন্ত্রিসভার বৈঠকে গরহাজির রাজীব, পাল্টা ‘কঠোর’ হওয়ার সঙ্কেত দলের
আরও পড়ুন: এ বার পরিবর্তনের পরিবর্তন চাই, দলবদলের পর প্রথম সভা থেকেই ডাক শুভেন্দুর
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা যা প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেগুলোর যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী এমনটাই মনে করছে রাজ্য বিজেপি। বিজেপি-র রাজ্যসভার সদস্য স্বপন দাশগুপ্তের যুক্তি, অমিত শাহ শুধু মমতাকে নন, বাংলার পিছিয়ে যাওয়ার জন্য বাম জমানাকেও দায়ী করেছেন। বাংলার অনুন্নয়নের জন্য কে দায়ী তা মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে হবে।" পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তোলেন, "স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গের শিল্প উৎপাদন ছিল ৩০ শতাংশ। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩.৫ শতাংশ। এর জন্য দায়ী কে? ১৯৬০ সালে এ রাজ্যে মাথা পিছু গড় আয় ছিল মহারাষ্ট্রের থেকে ৫ শতাংশ বেশি। আর এখন মহারাষ্ট্রের অর্ধেক। এর জবাব কে দেবে? রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা ভালউন্নয়ন নিয়ে মমতার নিশানায় অমিত, পাল্টা খোঁচা বিজেপি-র হলে কেন ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোকে রিপোর্ট দিল না তৃণমূল সরকার? ১৯৫০ সালে ৭০ শতাংশ ওষুধ তৈরি হত বঙ্গে, এখন তা কমে হয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। এত বড় গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের কেন এই অবনতি?" মহিলাদের উপর অ্যাসিড হামলাতে দেশের মধ্যে রাজ্য প্রথম এবং মহিলা পাচারে এ রাজ্যে দ্বিতীয় বলে দাবি করেন স্বপন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy