Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দিঘার শ্রী বৃদ্ধি! উন্নয়নে কি পরিবেশে কোপ, প্রশ্ন

দু’দিনের জেলা সফরে সোমবারই দিঘায় পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন নিউ দিঘায় কনভেনশন সেন্টারের উদ্বোধনের পরে মমতা তার নাম দেন ‘দিঘাশ্রী’

কনভেনশন সেন্টারের উদ্বোধনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

কনভেনশন সেন্টারের উদ্বোধনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দ মণ্ডল
দিঘা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৯ ০০:২০
Share: Save:

সৈকত সুন্দরীর উন্নয়নে গোড়া থেকেই নানা পরিকল্পনা তাঁর। সেই মতো কিছু কাজ হয়েছে, কিছু কাজ হচ্ছে।

কংক্রিটের সেই সব পরিকাঠামো গড়তে গিয়ে দিঘার পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে বলে আগে থেকেই অভিযোগ ছিল। মঙ্গলবার নব নির্মিত কনভেনশন সেন্টারের উদ্বোধনে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সৈকত নগরীর আধুনিকীকরণে আরও যে গুচ্ছ পরিকল্পনার কথা শোনালেন, তাতে পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা আরও গাঢ় হল। পাশে বসে তখন পরিবেশ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।

দু’দিনের জেলা সফরে সোমবারই দিঘায় পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন নিউ দিঘায় কনভেনশন সেন্টারের উদ্বোধনের পরে মমতা তার নাম দেন ‘দিঘাশ্রী’। তারপর বিকেল পৌনে ৩টে নাগাদ অনুষ্ঠান মঞ্চে দিঘার উন্নয়নে পরবর্তী পরিকল্পনা কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। লম্বা তালিকা দিয়ে জানান, জগন্নাথ ঘাটের কাছে জগন্নাথ মন্দির, দিঘায় ৬০টি স্টার হোটেল, দু’টি আন্তর্জাতিক মানের পার্কিং লট, পিছাবনি সেতুর কাছে সংগ্রহশালা তৈরি হবে। দিঘায় সি প্লেন, ই-বাস এবং প্রতিদিন হেলিকপ্টার চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে। আর তাজপুরে বন্দর এবং উপকূলে সাত কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ তৈরি করা হবে।

মুখ্যমন্ত্রী নিজে অবশ্য পরিবেশ রক্ষার কথাই বলেছেন। মঞ্চ থেকে সাফ জানিয়েছেন, যত্রতত্র হকার বসিয়ে বা দোকান করে দিঘার সৌন্দর্য নষ্ট করা যাবে না। তাঁর কথায়, ‘‘১০ জনের জন্য ১০ কোটি মানুষকে বঞ্চিত করা যাবে না।’’ পরিবেশ বাঁচাতে উপকূল এলাকায় নারকেল গাছ লাগানোর কথাও বলেন তিনি। পরিবেশ ও পরিহণ মন্ত্রী শুভেন্দু আরও জানান, পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে দিঘায় এক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে। শুভেন্দু বলেন, ‘‘এখানে ৬৫টি নতুন হোটেল তৈরি হয়েছে। প্রত্যেকটি হোটেল তৈরির জন্য ২০-২৫ কোটির বেশি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এর জন্য স্থানীয় এলাকার তিন থেকে চার হাজার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে।’’

কিন্তু এই সব উন্নয়ন প্রকল্প, যা বস্তুত কংক্রিটের জঙ্গল তা কতটা দিঘার শ্রী বাঁচিয়ে গড়ে তোলা হবে, তা নিয়ে সংশয়ে পরিবেশবিদদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, ইতিমধ্যেই দিঘায় ঝাউ বন কেটে ইট-পাথরের জঙ্গল তৈরি হয়েছে। অথচ নিয়মমতো জোয়ারের সময় সমুদ্রের ঢেউ উপকূল এলাকায় যতদূর পৌঁছয়, সেখান থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনও নির্মাণ করা যায় না। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘কোস্টাল রেগুলেটরি জোন’ আইনেও এ কথা স্পষ্ট বলা রয়েছে। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘সরকারি বা বেসরকারি ভাবে দিঘায় যে পরিমাণে নির্মাণ হয়েছে, তাতে ইতিমধ্যেই দিঘার পরিবেশের অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এর পরেও উপকূলে নির্মাণ চললে, পরিবেশের আরও ক্ষতি হবে।’’ আবার নতুন জগন্নাথ মন্দির তৈরির সময়ও গাছ কাটার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদেরা। স্থানীয় পরিবেশকর্মী দেবাশিস শ্যামলের কথায়, ‘‘দিঘা ভাঙন প্রবণ এলাকা। মুখ্যমন্ত্রী পরিবেশ বাঁচানোর কথা বলেন। আশা করি তিনি পরিবেশ বাঁচিয়েই মন্দির গড়ার ব্যবস্থা করবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Digha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE