E-Paper

যোগী-রাজ্যে ‘নৈরাজ্যে’ সরব মমতা, বিজেপির নজরে বাংলা

বাংলায় প্রচারে বিজেপি নেতারা হামেশাই গুজরাত এবং উত্তরপ্রদেশের কথা বলেন। সাম্প্রদায়িক নীতি বা বুলডোজ়ার শাসনের উদাহরণ দিয়ে তৃণমূলও তার পাল্টা জবাব দিয়ে থাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৩১
Mamata Banerjee.

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

পুলিশের বেষ্টনীর মাঝে হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় কথা বলছিলেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। ক্যামেরার সামনেই অতর্কিতে গুলিবৃষ্টি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে লুটিয়ে পড়েন ‘গ্যাংস্টার’ তথা প্রাক্তন বিধায়ক আতিক আহমেদ ও তাঁর ভাই আসরাফ। প্রয়াগরাজে শনিবার রাতের ওই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে বিজেপি-শাসিত উত্তরপ্রদেশে নৈরাজ্য ও আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার অভিযোগে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশি হেফাজতে থাকা কাউকে সর্বসমক্ষে এমন ভাবে হত্যা করা নিয়ে ওঠা প্রশ্নের সরাসরি জবাবে না গিয়ে বিজেপি নেতারা পাল্টা বাংলার আইনশৃঙ্খলা এবং এ রাজ্যে গুলিতে হত্যার ঘটনা দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসকে পাল্টা খোঁচা দিয়েছেন।

বাংলায় প্রচারে বিজেপি নেতারা হামেশাই গুজরাত এবং উত্তরপ্রদেশের কথা বলেন। সাম্প্রদায়িক নীতি বা বুলডোজ়ার শাসনের উদাহরণ দিয়ে তৃণমূলও তার পাল্টা জবাব দিয়ে থাকে। প্রয়াগরাজের ঘটনা সেই বিতর্কেই নতুন ইন্ধন দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা রবিবার টুইট করে বলেছেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে বেপরোয়া নৈরাজ্য এবং আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার দৃশ্যে আমি স্তম্ভিত! এটা চূড়ান্ত লজ্জার কথা যে, অপরাধীরা পুলিশ এবং সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতিতে আইন হাতে তুলে নিচ্ছে। সাংবিধানিক গণতন্ত্রে এই ধরনের বেআইনি কাজের কোনও জায়গা নেই।’’

মুখ খুলেছেন তৃণমূলের অন্য নেতারাও। বীরভূমে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পাল্টা তৃণমূলের সভায় গিয়ে এ দিনই রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্য, ‘‘গতকাল উত্তরপ্রদেশে গুলি করে এনকাউন্টার করে মারা হল। এখানে দোষী হলে আদালতে নিয়ে আসা হয়। আপনাদের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এনকাউন্টার বাংলায় হয় না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বিজেপির কথায় যদি ভুল করেন, বাংলায় হয়ে যাবে উত্তরপ্রদেশ!’’ বাংলায় বিজেপি নেতারা নানা ঘটনায় কখনও ৩৫৬, কখনও ৩৫৫ ধারা জারি করার দাবি তুলেছেন। আতিক-হত্যাকে হাতিয়ার করে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে ৩৫৬ ধারার পরিস্থিতি কি হয়নি? বিজেপি কী বলে?’’

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে পাল্টা টুইট করে বলেছেন, ‘‘আপনি একটা আঙুল তুললে তিনটে আঙুল আপনার দিকে উঠবে! বাংলায় বেপরোয়া নৈরাজ্য এবং আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার দৃশ্যে কবে আপনি স্তম্ভিত হবেন? লজ্জার কথা যে, বাংলায় অপরাধীরা অনেক দিন ধরেই আইন হাতে তুলে নিয়েছে!’’ পাশাপাশিই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কটাক্ষ, ‘‘উনি (মুখ্যমন্ত্রী) বোধহয় ভুলে গিয়েছেন, কয়েক দিন আগে ওঁর দল সর্বভারতীয় তকমা হারিয়ে আঞ্চলিক দলে পরিণত হয়েছে। তাই তাঁর অন্য রাজ্যের বিষয়ে কথা বলা সাজে না! আর এই রাজ্যে কয়েক দিন আগে ল্যাংচার দোকানে রাজু ঝাকে গুলি করে মারা হয়েছিল। সেই অপরাধীরা এখনও অধরা।’’

এই প্রেক্ষিতে সিপিএমের বক্তব্য, এনকাউন্টারে হত্যা, বুলডোজ়ার রাজনীতি আর অপরাধীদের প্রশ্রয় দিয়ে যোগী আদিত্যনাথের সরকার চলছে। প্রয়াগরাজের ঘটনায় সরকারি মহলের যোগসাজশ আছে বলে অভিযোগ করে আদালতের তত্ত্বাবধানে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছে সিপিএমের পলিটব্যুরো। বিজেপিকে বিঁধে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এ দিন বলেছেন, ‘‘ইলাহাবাদে পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতিতে যা ঘটেছে, হাড় হিম করা ঘটনা! গুজরাতের মতো উত্তরপ্রদেশে এনকাউন্টার বিশেষজ্ঞেরা রাজ্য চালাচ্ছে। বাংলায়, ত্রিপুরায় যা ঘটেছে, আমরা দেখেছি। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ঘটনা অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। এই কারণেই আমরা বলছি, বাংলায় তৃণমূল যতটা ভয়াবহ, গোটা দেশে বিজেপি তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mamata Banerjee Uttar Pradesh BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy