আগামী সোমবার বিকেল সাড়ে চারটেয় তৃণমূলের লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদদের নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ ভার্চুয়াল বৈঠকে বসতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি সংসদীয় অধিবেশনের মধ্যেই এই বৈঠক রাজনৈতিক দিক থেকে একাধিক কারণে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
২১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন চলবে আগামী ২১ অগস্ট পর্যন্ত। বর্তমানে তৃণমূল সাংসদেরা দিল্লিতেই রয়েছেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সরব হচ্ছেন সংসদের দুই কক্ষে। চলতি অধিবেশনের শুরু থেকেই তৃণমূল বিশেষ ভাবে সোচ্চার হয়েছে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর) নিয়ে। বিরোধীদের একাংশ এই প্রক্রিয়াকে ভোটার তালিকা থেকে বিরোধী ভোটারদের বাদ দেওয়ার ‘ষড়যন্ত্র’ বলে মনে করছেন। এই বিষয়গুলি নিয়ে কী ভাবে সংসদে আরও জোরালো ভাবে প্রতিবাদ করতে হবে, সে বিষয়ে নির্দেশ দিতে পারেন মমতা।
তবে শুধু এসআইআর নয়, বৈঠকে আলোচনার অন্যতম বিষয় হতে চলেছে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলা ভাষার উপর আক্রমণ ও অবহেলা এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনা। বিশেষ করে উত্তর ভারতের বেশ কিছু এলাকায় বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর এই বিষয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে তৃণমূল। এই বিষয়গুলি নিয়ে কী ভাবে সংসদ ও বাইরে সুর চড়ানো যায়, তা নিয়ে সোমবারের বৈঠকে পরামর্শ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কক্ষ সমন্বয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে এই বৈঠকে। কারণ, তৃণমূল মনে করছে, বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ না হলে সংসদে এসআইআর-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কেন্দ্রকে চাপে ফেলা সম্ভব নয়। ইতিমধ্যেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী লোকসভায় এই প্রসঙ্গ তুলেছেন এবং শনিবার বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব অভিযোগ করেছেন, তাঁর নিজের নামই বাদ পড়েছে ভোটার তালিকা থেকে। যদিও কমিশনের তরফে ভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এসআইআর বিষয়ে সংসদের দুই কক্ষে আগামী সপ্তাহে আলোড়ন হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
পাশাপাশি, গত শুক্রবার রাজ্যসভায় ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। অভিযোগ, তৃণমূল, আপ ও ডিএমকে-র একাধিক সাংসদকে রাজ্যসভার মার্শাল দিয়ে ওই দিন সভাকক্ষ থেকে বার করে দেওয়া হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যসভার তৃণমূল দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন নিজের এক্স হ্যান্ডেলে বড়সড় আন্দোলনের ইঙ্গিত দেন। এই ঘটনার নেপথ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করছে তৃণমূল। সব মিলিয়ে, সোমবারের বৈঠক হতে চলেছে একাধিক বিষয়ে কৌশল নির্ধারণের মঞ্চ। সংসদে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণে দলের সাংসদদের প্রস্তুত করতেই এই বৈঠকের বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূল এই অধিবেশনকে ব্যবহার করতে চায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে এবং সেই লক্ষ্যেই সংগঠিত হচ্ছেন দলের সাংসদরা।
উপরন্তু, মমতার পরামর্শে ৮ অগস্ট, শুক্রবার দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দফতর ঘেরাও করতে চলেছে বিরোধীরা। তার আগে ৭ অগস্ট দিল্লিতে বৈঠকে বসতে চলেছেন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-এর শরিকনেতারা। সেই বৈঠকে যোগ দেবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনটাই তাঁর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। বৈঠকের পরে নৈশভোজ রয়েছে বলে খবর। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে কমিশন ঘেরাও কর্মসূচির রূপরেখা তৈরি করতে পারেন বিরোধী নেতারা। এই সব বিষয়ও সোমবারের বৈঠকে উঠতে পারে।