চা বাগান এবং শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যা খতিয়ে দেখতে ৬ জন মন্ত্রীকে নিয়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। দার্জিলিঙের লালকুঠিতে আদিবাসী উপদেষ্টা পর্ষদের তৃতীয় বৈঠকের পরে এ কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই গোষ্ঠীতে কারা থাকবেন তা শীঘ্রই চূড়ান্ত করা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। সরকারি সূত্রের খবর, মূলত অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের সভাপতি বিরসা তিরকেই চা বাগানের সমস্যা মেটাতে মন্ত্রীগোষ্ঠী গড়ে দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে সরব হন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, চা বাগানে নানা ধরনের সমস্যার প্রসঙ্গ বৈঠকে ওঠে। কখনও শ্রমিকদের বসবাসের জমি সংক্রান্ত, কখনও পাট্টা বিলি, টি-ট্যুরিজম বিষয়ক প্রশ্নও ওঠে। তা ছাড়া রয়েছে রেশন কার্ড, বকেয়া পিএফ, কর্মসংস্থান সঙ্কোচনের প্রসঙ্গও। তখনই নানা দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়, তরাই, ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ চা বলয়ের আদিবাসীদের আর্জি মেনে মন্ত্রীগোষ্ঠী তৈরি করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বন্ধ চা বাগানের ১ লক্ষ ৩২ হাজার বাসিন্দা কাউন্সিল থেকে পেনশন পান। চা বাগানের সমস্যা খতিয়ে দেখার জন্য একটি মন্ত্রিগোষ্ঠীও করে দেওয়া হয়েছে।’’
লালকুঠিতে এ দিন ঘণ্টাখানেক ধরে কাউন্সিলের বৈঠক চলে। অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সভাপতি বীরসাবাবু আগাগোড়াই সরব ছিলেন। একের পর এক আদিবাসীদের নানা সমস্যার কথা বলে বিরসাবাবু অনেক সময়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। একটা পর্যায়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে হয়, ‘‘আপনি একাই বললে বাকিরা কী করবেন?’’ তাতেও দমানো যায়নি বিরসাবাবুকে। তিনি জবাবে বলে দেন, ‘‘আপনাকে বলব না তো কাকে বলব?’’ পরে বিরসাবাবু জানান, প্রতি জেলায় জনজাতিদের সরকারি কমিটি, পুলিশ বাহিনীতে বেশি সংখ্যায় আদিবাসীদের নিয়োগ করার মতো দাবিও জানানো হয়েছে।
দিনভর কাজের শেষে বিকেলে টাইগার হিলে। শেষ সাড়ে ছ’কিলোমিটার হেঁটেই সেখানে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী।
পৌঁছে মেঘলা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে চুমুক দিলেন চায়ে। বুধবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
এ দিনের বৈঠকে ৭টি আদিবাসী ভবন তৈরির সিদ্ধান্তও হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বালুরঘাট এবং কলকাতার রাজারহাটে ভবনগুলি তৈরি হবে। কাউন্সিলের এ দিনের বৈঠককে ‘রুটিন’ বৈঠক বলেই জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘ছয় মাস অন্তর কাউন্সিলের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও, আগের বৈঠকগুলি নিয়মিত হয়নি। এখন থেকে নিয়মিত বৈঠক হবে। এর পরের বৈঠক জঙ্গলমহলে হবে।’’
এ দিনের বৈঠক জিটিএ-র সদর দফতর লালকুঠিতে হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জিটিএ-র ডেপুটি চিফ রমেশ আলে। গতকাল মুখ্যমন্ত্রী লালকুঠি দেখতে চেয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তারপরেই জিটিএ-র তরফে লালকুঠিতেই মুখ্যমন্ত্রীকে বৈঠক করার অনুরোধ করা হয়। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘লালকুঠি সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছিলাম, কিন্তু আগে এখানে আসা হয়নি। সেই কথা শুনে জিটিএ-র তরফেই এখানে কাউন্সিলের বৈঠক করার অনুরোধ করা হয়।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, জিটিএ-র কেউ কাউন্সিলের সদস্য না হলেও, এ দিন লালকুঠিতে বৈঠক হয়েছে।
জিটিএ-র ডেপুটি চিফ আলে জানিয়েছেন, এ দিন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর অফিস এবং জিটিএ-র প্রধান সচিবের অফিস দেখে প্রশংসা করেছেন। এ দিকে, এ দিনই জিটিএ-র চিফ বিমল গুরুঙ্গ ৬ সদস্যের প্রতিনিধি নিয়ে বারাণসী রওনা দিয়েছেন। সেখানে পুজোর অনুষ্ঠান রয়েছে তাঁর। বাগডোগরা বিমানবন্দরে গুরুঙ্গ কিছু না বললেও, মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গতকালের বৈঠক ভাল হয়েছে।’’