E-Paper

‘চালাব আমিই’, দলে স্পষ্ট কথা মমতার

দলের একটি বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন তিনি। দল ও সরকার চালাবেন তিনিই। তিনি যা বলবেন, সেই মতোই চলতে হবে!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ০৪:৩১
(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

দল ও সরকার পরিচালনা নিয়ে অভ্যন্তরীণ টানাপড়েনের মধ্যে স্পষ্ট বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের একটি বৈঠকে তিনি জানিয়ে দিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন তিনি। দল ও সরকার চালাবেন তিনিই। তিনি যা বলবেন, সেই মতোই চলতে হবে! একই দিনে অন্য প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, দলের শৃঙ্খলা সকলকেই মেনে চলতে হবে।

নবীন-প্রবীণ তর্কের সূত্রে বারবারই দল ও সরকারে অভিষেকের ‘ভূমিকা’ নিয়ে চর্চা হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। কখনও কখনও এই তরজায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দুই শিবিরও স্পষ্ট হয়েছে। কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের বোর্ড গঠন নিয়ে দুই গোষ্ঠীর বিরোধের মীমাংসার জন্য দলের বৈঠকে বুধবার তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, ‘আরও ১০ বছর আমিই চালাব’। সূত্রের খবর, বোর্ড নিয়ে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর নির্দেশ মানতে নারাজ অংশের নেতাদের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য, ‘বক্সীদা যে তালিকা দিয়েছেন, তা আমার তালিকা’। পাল্টা তালিকা প্রত্যাহারের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

কাঁথি সমবায়ে বোর্ড গঠন নিয়ে শাসক দলের দুই অংশের মতপার্থক্য সামনে চলে আসায় বেশ কয়েক বার আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু একাংশ অনড় থাকায় এ দিন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। সূত্রের খবর, তাঁর অনুরোধে কাজ না-হওয়ায় ফোনে ধরা হয়েছিল মমতাকে। সেখানেই তিনি এই বার্তা দিয়েছেন।

তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে এ দিনই মুখ খুলেছেন অভিষেক। নিজের লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ফলতায় ‘সেবাশ্রয়’ শিবির পরিদর্শনে গিয়ে এ দিন তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব এবং মালদহে পরপর খুনের ঘটনা প্রসঙ্গে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘‘যে কোনও প্রতিষ্ঠানেই মতবিরোধ হয়। একটা দল যখন বড় হয়, তখন এটা স্বাভাবিক।’’ একই সঙ্গে দলীয় শৃঙ্খলা নিয়ে দলের সর্বস্তরে কড়া বার্তাও দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েক জনের মধ্যে বিরোধ থাকতেই পারে। তবে কেউ দলের ক্ষতি করলে বা কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকলে নিশ্চয়ই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলে ভাল লোক থাকে, খারাপ লোকও থাকে। দলের শৃঙ্খলা সকলকে মেনে চলতে হবে।’’ বিরোধীদের তরফে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বা প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়েরা অবশ্য অভিষেককে কটাক্ষই করেছেন।

শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সম্প্রতি প্রাক্তন সাংসদ শান্তনু সেন এবং প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামকে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করেছে তৃণমূল। স্বয়ং দলনেত্রীর এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অভিষেকের বক্তব্য, ‘‘তাঁর সিদ্ধান্ত শিরোধার্য।’’ কিন্তু শাস্তির পরেও দলে অভিষেকের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত শান্তনু কী ভাবে অভিষেকের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত স্বাস্থ্য শিবিরে অংশ নিচ্ছেন? জবাবে অভিষেক বলেছেন, ‘‘ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কী করবেন, তা আমি বলতে পারি না। চিকিৎসক হিসেবে কোন রোগী দেখবেন, কোন শিবিরে থাকবেন, তা তিনিই ঠিক করবেন।’’

এরই পাশাপাশি, শাসক দলের অন্দরে শিল্পীদের বয়কট করা নিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এই বিতর্কে নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন অভিষেক এবং দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। শীতকালীন জলসায় সরকার- বিরোধী শিল্পীদের বয়কটের বার্তা দিয়েছিলেন কুণাল। কিন্তু তা খারিজ করে দিয়েছিলেন অভিষেক। এই নিয়ে দু’তরফে টানাপড়েন চলেছিল। এই সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে নিজের মত জানিয়ে অভিষেক বলেছেন, ‘‘আমি যত দূর চিনি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কখনও ‘ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘সরিয়ে দাও, হটিয়ে দাও’ নীতির পক্ষে নয়। যাঁরা আজ এ সব বলছেন, এক সময় আক্রমণ করলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের দলে ফিরিয়ে এনেছেন।’’ দলের বড় অংশের মতে, সারদা-কাণ্ডের সময়ে কুণালের ভূমিকার প্রতিই ইঙ্গিত ছিল এই মন্তব্যে।

অভিষেকের এই বক্তব্যের পরেও কুণাল অবশ্য বয়কট নিয়ে অনড়। তাঁর দাবি, ‘‘সরকারের বিরোধিতায় কোনও আপত্তি করিনি। যাঁরা গালে গালে জুতো মারার স্লোগান দিয়েছিলেন, আপত্তি তাঁদের নিয়ে। আর জি করের আন্দোলনের সময়ে যাঁরা সরকারের পাশে ছিলাম, আমরা জানি। আর রাজ্যের সর্বত্র তৃণমূলের কর্মীরা নিজেদের অনুষ্ঠান করেছেন তাঁদের ছাড়াই।’’ মমতাকে আক্রমণ করে দলে ফেরার কথা তুলে অভিষেক কি তাঁকেই ইঙ্গিত করেছেন? কুণালের মতে, ‘‘আমার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, তা অভিষেক জানেন। সেই সময়ে আমি কিছু কথা বলেছিলাম। পরে তাঁর সঙ্গে এই নিয়ে আমার অনেক কথা হয়েছে।’’ কুণালের ইঙ্গিতপূর্ণ সংযোজন, ‘‘আক্রান্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি কী ভাবছেন, তা অন্য কারও মুখ থেকে শুনতে চাই না!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC Mamata Banerjee Abhishek Banerjee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy