E-Paper

ভাষা-সন্ত্রাসে কেন্দ্রের কমিশন কই, প্রশ্ন মমতার

মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, রাজ্যে কথায় কথায় কেন্দ্রীয় সরকারের কমিশন পাঠানো হলেও বাংলাভাষীদের নিগৃহীত হওয়ার অভিযোগ দেখতে কেন কোনও কমিশন আসছে না?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৫ ০৭:০২
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পুরনো অভিযোগের সঙ্গে বাংলাভাষীদের উপরে নিগ্রহকে এক বন্ধনীতে নিয়ে এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, রাজ্যে কথায় কথায় কেন্দ্রীয় সরকারের কমিশন পাঠানো হলেও বাংলাভাষীদের নিগৃহীত হওয়ার অভিযোগ দেখতে কেন কোনও কমিশন আসছে না? সেই সঙ্গেই রাজ্যের আসন্ন ভোটে এই নিগ্রহের অভিযোগেই তিনি যে প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপিকে কোণঠাসা করতে চাইছেন, তা ফের স্পষ্ট করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী।

তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই ভাষা-আন্দোলন নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভাষা এত বিশাল একটা বিষয় যে, পৃথিবীর কারও ক্ষমতা নেই খাটো করার। কিন্তু সামাজিক অবক্ষয় ও অধঃপতন ঘটানোর অপচেষ্টা তখন বোঝা যায়, যখন একটা সরকার ও সেই সরকারের চাটুকার ও তাঁবেদাররা ‘গীতাঞ্জলি’-র বদলে ‘কথাঞ্জলি’ ( মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বই) সেরা সাহিত্য বলে চালানোর অপচেষ্টা করে থাকেন!’’

দেশের অন্তত ৫-৭টি রাজ্যে বাংলাভাষীদের উপরে নিগ্রহের অভিযোগে আলোড়ন চলছে। এবং এই অভিযোগের প্রতিবাদে তৃণমূল যে প্রচার কর্মসূচি নিয়েছে, মঙ্গলবার তা আরও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বীরভূমের ইলামবাজারের প্রশাসনিক সভায় এ দিন মমতা বলেছেন, ‘‘রাজ্যে টিকটিকিতে কামড়ালেও ( কেন্দ্রীয় সরকার) কমিশন পাঠিয়ে দেয়! কিন্তু বাংলাভাষার উপরে যখন অত্যাচার হয়, লোককে মারা হয়, বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়, জল- বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দেওয়া হয়, তখন ক’টা কমিশন যায়?’’ স্বভাবসুলভা ভঙ্গিতেই তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘ওটার বেলায় ওমিশন ( বাদ), নো কমিশন! যত দোষ, নন্দ ঘোষ!’’

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে সামনে রেখে বাঙালির স্বাভিমানের রাজনীতিতে আগেও তৃণমূল ও বিজেপির টানাপড়েন হয়েছে। বিদ্যাসাগরের প্রয়াণ- দিনে এ বারের ভাষা বিতর্ক নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলায় প্রতিভা আছে বলে বাংলার মানুষের উপরে অত্যাচার। আমরা এটা মানব না। বিদ্যাসাগরের প্রয়ান দিবসে এটাই আমাদের শপথ।’’ ভাষা- বিতর্ককে সরাসরি রাজনীতির মাঠে নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘বাঙালি যখন ইংরেজের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তখন তোমরা কোথায় ছিল? ইংরেজের দালালি করছিলেন?’’ বাংলা ভাষার পক্ষে আন্দোলনকে আরও বৃহত্তর বৃত্তেও নিয়ে যেতে চেয়েছেন মমতা। সেই লক্ষ্যে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি সমাজের বিদ্বজ্জনেদের অনুরোধ করব, খেলোয়াড় থেকে শুরু করে সবাইকে, আপনারাও পথে নামুন। রাজনৈতিক মঞ্চে করার (প্রতিবাদ) দরকার নেই, আপনারা আপনাদের মতো করে প্রতিবাদ করুন, প্রতিরোধ করুন এবং বাংলা যে হার মানে না, সেটা বুঝিয়ে দিন।’’

বাংলা ও বাঙালির অস্মিতার প্রশ্নকে সামনে আনতেই সংসদের চলতি অধিবেশনে বাংলায় বক্তৃতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূলের সাংসদেরা। সেই প্রসঙ্গ টেনে বিধাননগরে রাজ্য বিজেপির কার্যালয়ে এ দিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় বক্তব্য রেখেছেন ভাল কথা। কিন্তু আমি অপেক্ষা করছি কখন ইউসুফ পাঠান, শত্রুঘ্ন সিংহ বাংলায় বক্তব্য রাখবেন। রাজ্যসভায় বক্তব্য শুরু হোক সাকেত গোখলের বাংলা ভাষায় রাখা বক্তব্য দিয়ে।’’ ইলামবাজারে এ দিনের সভামঞ্চে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কবিতা ভুলে গিয়েছেন বলে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে কটাক্ষও করেছেন বিরোধী দলনেতা। ভিডিয়ো পোস্ট করে এক্স হ্যান্ড্লে শুভেন্দুর খোঁচা, ‘ভাষা আন্দোলনের কান্ডারি যখন পথ হারিয়ে ফেলেন’!

তার পাশাপাশি সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘বাংলার মানুষকে ভয় পাওয়ানোর চক্রান্ত মানছি না। অসমে বিজেপির সরকার বলেছিল মুসলিমদের নাম বাদ দেবে, তার পরে এনআরসি-তে ১৮ লক্ষ হিন্দুর নাম বাদ গিয়েছে। যার কাগজ কম, যে গরিব, তার উপরে তত আক্রমণ!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bengali Migrant Labours

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy