—ফাইল চিত্র।
কুকুর-কাণ্ডে অভিযুক্ত কলকাতার তিন চিকিৎসকের মেডিক্যাল রেজিস্ট্রেশন বাতিল সংক্রান্ত দাবি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই ঠেলে দিল জাতীয় মেডিক্যাল কাউন্সিল (এমসিআই)।
মানুষের হাসপাতালে কুকুরের ডায়ালিসিসের জন্য যে ডাক্তারেরা উদ্যোগী হন— তাঁদের রেজিস্ট্রেশন কেন বাতিল হবে না, সেই প্রশ্ন তুলে পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ এমসিআইয়ের কাছে দাবিপত্র দিয়েছিল। তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা নির্মল মাজি, এসএসকেএম-এর নেফ্রোলজির বিভাগীয় প্রধান রাজেন পাণ্ডে এবং ওই হাসপাতালের সদ্য অপসারিত অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগকে ‘নিন্দনীয়’ বলে অবিহিত করলেও এমসিআই সূত্রে বলা হয়, ওই তিন চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করাটা তাদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। কারণ, ওই তিন জনই পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিলে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন।
তা হলে ওই তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কে?
এমসিআইয়ের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও গ্রিভান্স সেলের চেয়ারম্যান অজয় কুমার বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করলে রাজ্যের মেডিক্যাল কাউন্সিলকেই সেটা করতে হবে।’’
কুকুর-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত নির্মল মাজি নিজেই পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি। সে ক্ষেত্রে এমন গুরুত্বপর্ণ সিদ্ধান্ত কে নেবেন?
অজয় কুমার বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্যোগী হতে হবে। নির্মল মাজি তাঁরই দলের বিধায়ক। বাকি দু’জন তাঁর স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী। মুখ্যমন্ত্রীরই তো এঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এ ক্ষেত্রে কী করার আছে? স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, নির্মল মাজিকে মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে অন্য কাউকে সাময়িক ভাবে এই দায়িত্ব দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। নতুন সভাপতি দায়িত্ব নিয়ে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরু করতে পারেন। নির্দোষ প্রমাণ হলে নির্মল ফেরে কাউন্সিলের সভাপতি পদে ফিরতে পারবেন। আর দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর ও অন্য দুই চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে আর কাউন্সিলের সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না তৃণমূলের ওই চিকিৎসক নেতা। তাঁকে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিলের রাজ্য সভাপতির পদ ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন কমিটির দায়িত্বও ছেড়ে দিতে হবে।
রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে অখুশি যে কোনও পক্ষই চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য এমসিআইয়ের দ্বারস্থ হতে পারেন বলে স্বাস্থ্য ভবনের সূত্রটি জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে এমসিআই নতুন করে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেবে।
যে ভাবে নির্মল মাজি এবং রাজেন পাণ্ডেকে বাঁচাতে প্রদীপ মিত্রকে এসএসকেএম থেকে সরিয়ে দেওয়া হল, তাতে মুখ্যমন্ত্রী তিন চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে কতটা উদ্যোগী হবেন— তা নিয়ে তৃণমূলের চিকিৎসক নেতাদেরই সংশয় রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যদি ব্যবস্থা না-নেন, তা হলে কি এই দাবিটি ধামাচাপা পড়ে যাবে?
সে ক্ষেত্রে অজয় কুমারের সুপারিশ, ‘‘আদালত সে ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে পারে। যাঁরা আমাদের কাছে দাবিপত্র পেশ করেছেন, তাঁরা প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইতে পারেন। তাতে ফল না হলে সরাসরি আদালতে সুবিচার চাইতে পারেন।’’
তিনি নিজে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে উদ্যোগী হবেন কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল নির্মল মাজির কাছ থেকে। তৃণমূলের ওই চিকিৎসক নেতার মন্তব্য, ‘‘এমসিআই সংবাদমাধ্যমকে কী বলল, তার ভিত্তিতে কোনও জবাব দেব না।
তারা যদি রাজ্য সরকারকে এ ব্যাপারে চিঠি লেখে, তখন জবাবের কথা ভাবা যাবে।’’
নির্মল মাজি, রাজেন পাণ্ডে এবং প্রদীপ মিত্রের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের দাবিতে জতীয় মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে দরবার করেছিল চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’ এবং ‘মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার’। বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা কী করবে?
অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স-এর সভাপতি সত্যজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নবজাতকদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরুণ সিংহের বদলির সময়ে আমরা রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম। কোনও ফল হয়নি। আর এ ক্ষেত্রে তো অভিযোগ খোদ রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতির বিরুদ্ধে। এখানে আবেদন করে যে কোনও লাভ হবে না— সেটাও জানি।’’
সুবিচার পেতে তা হলে কি আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছেন সত্যজিৎবাবুরা? ওই চিকিৎসক সংগঠনের নেতা বলেন, ‘‘নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আমরা এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy