Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Oxygen

‘অক্সিজেন দিচ্ছে না’, কৃষ্ণনগরে হাসপাতাল থেকে ‘পালালেন’ বৃদ্ধ

ছর পঁয়ষট্টির ওই বৃদ্ধের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি অন্তত ২৫ বছর ধরে হাঁপানিতে ভুগছেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২০ ০৪:১৫
Share: Save:

শ্বাসকষ্ট সত্ত্বেও অক্সিজেন বা যথাযথ ওষুধ না পেয়ে শুক্রবার সকালে কৃষ্ণনগরের ‘সারি’ (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস) হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছেন এক বৃদ্ধ। কালীগঞ্জের চকবেড়িয়ার বাসিন্দা ওই বৃদ্ধ এবং তাঁর পরিবারের দাবি অন্তত তেমনটাই। ঘটনাচক্রে, তাঁরা ওয়ার্ডে থাকাকালীনই এক রোগী মারা গিয়েছিলেন (যাঁর শেষকৃত্য নিয়ে শুক্রবার রাত পর্যন্ত অশান্তি হয়েছে)। জেলা প্রশাসনের দাবি, চিকিৎসার অভাবে নয়, ভয় পেয়েই বৃদ্ধ হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়েছেন।

বছর পঁয়ষট্টির ওই বৃদ্ধের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি অন্তত ২৫ বছর ধরে হাঁপানিতে ভুগছেন। বেশি শ্বাসকষ্ট হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাত ১২টা নাগাদ স্ত্রী ও ছোট ছেলে তাঁকে কালীগঞ্জ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে রেফার করা হয় কৃষ্ণনগরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। জরুরি বিভাগে পরীক্ষার পরে তাঁকে পাঠানো হয় প্রবল শ্বাসকষ্টের জন্য নির্ধারিত গ্লোকাল ‘সারি’ হাসপাতালে। করোনা সন্দেহভাজনদেরও ওই হাসপাতালেই পাঠানো হয়।

বৃদ্ধ ও তাঁর পরিবারের দাবি, রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ তাঁরা গ্লোকালে পৌঁছন। বৃদ্ধকে দোতলার ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। সঙ্গে ছিলেন ছোট ছেলে। ওই ওয়ার্ডে আরও তিন জন রোগী ভর্তি ছিলেন, তাঁদের সকলের সঙ্গেই এক জন করে আত্মীয়। সকলের মুখেই হাসপাতালের দেওয়া নীল মাস্ক, কিন্তু আর কোনও সুরক্ষা পোশাক ছিল না।

শুক্রবার দুপুরে কালীগঞ্জের বৃদ্ধ ও তাঁর ছোট ছেলের সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার সুস্মিত হালদারের কথোপকথনের একটি অংশ

আনন্দবাজার: ডাক্তারকে না জানিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে এলেন কেন?

বৃদ্ধ: খুব বেড়ে গিয়েছিল টান। ডাক্তারপত্র কেউ নেই। একটা ছেলে খালি দড়ির ও-পার থেকে দেখছে আর বলছে ‘বোসো’। আমি বললাম, ‘স্যর, আমায় ওষুধ দিন, আমি তো মরে যাব। আমার হাঁপানিটা কমিয়ে দিন। অক্সিজেন দিন আমাকে। (ছেলেটা) বলছে, ‘নার্স নেই।’ ...আমি আর টিকতে পারছি না। ভাবলাম, এখানে থাকলে... যেখানে ভাল হবে, বেরিয়ে যাব।

(গ্লোকাল হাসপাতাল থেকে বেরোনোর পরে)

বৃদ্ধ: কল্যাণী হাসপাতালের এক ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন আমার কাছে ছিল। ওই ওষুধ ওখান থেকে কিনে খেয়ে আধ ঘণ্টা গাড়িতে শুয়ে থেকে একটু কমল।

আনন্দবাজার: আপনি কি একা ছিলেন?

বৃদ্ধ: আমার ছোট ছেলে ছিল।

(বৃদ্ধের ছোট ছেলেকে ফোনে চাওয়া হল, তিনি ধরলেন)

আনন্দবাজার: আপনারা গ্লোকালে ক’টার সময়ে ঢুকেছিলেন?

ছোট ছেলে: রাত ৩টে-সাড়ে ৩টে নাগাদ।

আনন্দবাজার: কত দূর পর্যন্ত গিয়েছিলেন?

ছোট ছেলে: দোতলায় (ওয়ার্ডে)। বাবাকে নিয়ে চার জন। নীল রঙের মাস্ক দিয়েছিল আমাকে আর বাবাকে।

আনন্দবাজার: কত ক্ষণ ছিলেন ওখানে?

ছোট ছেলে: সকাল ৭টা-সাড়ে ৭টা নাগাদ বার হয়েছি।

আনন্দবাজার: কেউ আটকায়নি?

বৃদ্ধের ছোট ছেলে: এক জন ডাক্তার বললেন, ‘নিয়ে যেয়ো না’। কিন্তু কোনও পরিষেবা নেই, রেখে কী করব? আমরা থাকতে-থাকতেই এক জন মারা গেল।

আনন্দবাজার: আপনি কি ওয়ার্ডের ভিতরেই ছিলেন?

ছোট ছেলে: ওই রোগীর স্ত্রীও ছিলেন। তিনি ‘ওঠো ওঠো’ করে ডাকাডাকি করছেন, কিন্তু সাড়াশব্দ নেই। মিনিট পনেরো পরে ডাক্তার এলেন।

বৃদ্ধের অভিযোগ, শ্বাসকষ্ট বেড়ে চললেও একটি ক্যাপসুল ছাড়া তাঁকে আর কিছুই দেওয়া হয়নি। বারবার অক্সিজেন চাইলে ওয়ার্ডে উপস্থিত সাদা পোশাক পরা এক যুবক দড়ির ও পারে নিরাপদ দূরত্ব থেকে জানান, ‘নার্স নেই’। তাঁকে অপেক্ষা করতে হবে। শেষে বৃদ্ধ বেরিয়ে আসেন। যে গাড়ি নিয়ে তিনি স্ত্রী ও ছোট ছেলের সঙ্গে কৃষ্ণনগরে গিয়েছিলেন, সেটি বাইরেই দাঁড়িয়েছিল। সেটিতে চড়ে বৃদ্ধ শহরের একটি দোকানে গিয়ে পুরনো প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে ওষুধ কেনেন। তা খেয়ে খানিক ধাতস্থ হওয়ার পরে তিনি বাড়িতে ফিরে যান।

আরও পড়ুন: আক্রান্ত মা, বিল নিয়ে নিভৃতবাসে নাকাল পুত্র

আরও পড়ুন: সাবধান হবেন কী ভাবে, পথে নেমে পরামর্শ মমতার

যে ওয়ার্ডে করোনা সন্দেহভাজনেরা থাকতে পারেন, সেখানে রোগীর বাড়ির লোকেরা ঢুকছেন কী করে? গোটা বিষয়টিই প্রথমে ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃদ্ধ ও তাঁর ছোট ছেলের কাছেই এই কথা শোনা গিয়েছে জেনে তিনি বলেন, “রোগীর আত্মীয়ের ওয়ার্ড পর্যন্ত যাওয়ারই কথা নয়। কিন্তু আমি মুখের কথার উপরে ভরসা করতে রাজি নই।’’ বারবার চেয়েও রোগী অক্সিজেন পেলেন না কেন? অপরেশবাবু বলেন, “অক্সিজেনের অভাব নেই। কেন পাননি, বলতে পারব না। ডাক্তারবাবুরা যেমন মনে করেছেন, তেমনই করেছেন।”

তবে জেলাশাসক বিভু গোয়েলের দাবি, “চিকিৎসা না হওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। তা হলে ওই হাসপাতালে অন্য রোগীরা থাকছেন কী করে? ভয় পেয়েই উনি হাসপাতাল ছেড়ে চলে গিয়েছেন।’’ রোগী হাসপাতাল থেকে বিনা বাধায় বেরিয়ে যান কী করে? জেলাশাসকের যুক্তি, “এটা
তো জেল নয় যে ৫০ জন পাহারা দেবে।’’ বৃদ্ধকে ফিরিয়ে আনতে কালীগঞ্জে লোক পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Oxygen Krishnanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE