Advertisement
১০ মে ২০২৪
Recruitment

চাকরির দাবিতে আন্দোলন, অথচ বহু প্রার্থী যাননি ইন্টারভিউ দিতে! কারণ নিয়ে চিন্তিত কমিশন

কমিশন সূত্রের খবর, সম্প্রতি ‘গ্রুপ সি’ বা তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষাকর্মী-পদে সুপারিশপত্র দেওয়ার জন্য ১০০ জনকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু হাজির হন মাত্র ৫৫ জন! কেন?

examination.

তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী-পদে প্রথমে সুপারিশপত্র, পরে নিয়োগপত্রও দেওয়া হয়েছিল কিছু প্রার্থীকে। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৩ ০৬:১২
Share: Save:

রুটিরুজির জন্য চাকরির দরকার। তার জন্য তাঁদের দাবি ও আন্দোলন ক্রমে উচ্চগ্রামে উঠলেও বিচিত্র বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে নিয়োগ পর্বের সাক্ষাৎকারে। চাকরির ইন্টারভিউয়ে যখন ডাক পড়ছে, গরহাজির থাকছেন প্রার্থীদের অনেকেই! শিক্ষাকর্মী ও শিক্ষক, দুই শ্রেণির পদপ্রার্থীদের ক্ষেত্রেই এটা ঘটছে। এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে পাওয়া এই তথ্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে, উঠছে প্রশ্নও। চাকরির জন্যই যদি এত কাঠখড় পোড়ানো, ইন্টারভিউয়ে এই বিপরীত চিত্র কেন? সুপারিশপত্র নিতে কেন অনুপস্থিত থাকছেন অনেক চাকরিপ্রার্থী? চিন্তিত কমিশনের আধিকারিকেরাও।

গান্ধী ও মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে বিভিন্ন কর্মপ্রার্থী সংগঠনের লাগাতার আন্দোলনের মধ্যে একটু একটু করে নিয়োগের সুপারিশপত্র নেওয়ার জন্য ডাক আসছে এসএসসি থেকে। অথচ সেখানে উপস্থিতির হার বেশ কম। কমিশন সূত্রের খবর, সম্প্রতি ‘গ্রুপ সি’ বা তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষাকর্মী-পদে সুপারিশপত্র দেওয়ার জন্য ১০০ জনকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু হাজির হন মাত্র ৫৫ জন! কেন?

সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, শিক্ষা দফতরের তৃতীয় শ্রেণি এবং ‘গ্রুপ ডি’ বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী-পদে বেআইনি ভাবে নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। বাঁকা পথে নিযুক্ত বেশ কিছু কর্মীর চাকরি ইতিমধ্যেই বাতিল হয়েছে আদালতের নির্দেশে। সেই সব শূন্য পদেই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে এসএসসি। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী-পদে প্রথমে সুপারিশপত্র, পরে নিয়োগপত্রও দেওয়া হয়েছিল কিছু প্রার্থীকে। কিন্তু কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে যাঁদের চাকরি গিয়েছিল, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে পাল্টা মামলা করেন এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি, দু’টি ক্ষেত্রেই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

প্রশ্ন উঠছে, সেই জন্যই কি উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন চাকরিপ্রার্থীরা? এত দিনের আন্দোলনের পরে ফললাভের মুখে যে-হেতু আবার জট তৈরি হচ্ছে, তাই কি ঝামেলা এড়াতে অন্য চাকরির দিকে পা বাড়াচ্ছেন তাঁরা?

এসএসসি-র চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, ‘‘এর আগে সুপারিশপত্র নেওয়ার জন্য গ্রুপ ডি-র ৪০ জনকে ডাকা হয়েছিল। এসেছিলেন ২১ জন। নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকপদে ৬৮ জন প্রার্থীকে ডাকা সত্ত্বেও এসেছেন ৫১ জন। তার পরে ফের বাকি ১৭ জনকে ডাকা হয়, তখন তাঁদের মধ্যে এলেন ১২ জন। এ ভাবে একটা সুপারিশপত্র দেওয়ার কাজ চার বারে শেষ হল। তবু একটা পদ খালি পড়ে থাকল।’’

সুপারিশপত্র পাওয়ার কিছু দিন পরেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছ থেকে নিয়োগপত্র মেলে। সেই নিয়োগপত্র বহু দূরের ব্যাপার বলে মনে করছেন বেশির ভাগ চাকরিপ্রার্থী। অভিষেক সেন নামে নবম-দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষকপদ প্রার্থী বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এখন গ্রুপ ডি নিয়োগ স্থগিত আছে। কিছু দিন আগে গ্রুপ সি-র নিয়োগও স্থগিত হয়েছে। স্থগিত রয়েছে নবম-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগও। এই সুপারিশপত্র পেয়ে কী করবেন চাকরিপ্রার্থীরা? একটা হতাশা তো কাজ করছেই। যাঁরা অনুপস্থিত থাকছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই অন্য কোনও ছোটখাটো চাকরি পেয়ে গিয়েছেন।’’

সুশান্ত ঘোষ নামে উচ্চ প্রাথমিকের এক শিক্ষকপদ প্রার্থীর কথায়, ‘‘এ তো সেই বলিউডের সিনেমার মতো! আদালত একের পর এক শুনানির তারিখ দিয়ে যাচ্ছে। যা শুনে অভিনেতা বলছেন, ‘তারিখ পে তারিখ, তারিখ পে তারিখ। ইনসাফ নেহি মিলা।’’ সুশান্ত জানান, গত ন’বছরে একটি শিক্ষকপদেও নিয়োগ হয়নি উচ্চ প্রাথমিকে। আর কতদিন ধৈর্য ধরে রাস্তায় থাকতে হবে? অনেকেই ছোটোখাটো চাকরি নিয়ে ভিন্‌ রাজ্যে চলে গিয়েছেন, যাচ্ছেন।

তবে আদালতের স্থগিতাদেশ থাকলেও এই জট কেটে যাবে বলেই আশা করছেন এসএসসি-প্রধান। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা আসছেন না, তাঁরা হয়তো অন্যত্র চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। তবে আদালতের এই জটও খুলবে। সুপারিশপত্র যাঁরা পেয়েছেন, তাঁরা দ্রুত নিয়োগপত্রও পাবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Recruitment SSC Examination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE