E-Paper

আয়ের আশায় ভাঙা ঘর ফেলে সৈকতেই

‘দানা’র ঝাপটায় সেই বাড়ির টিন আর ত্রিপলের ছাউনি সরে গিয়েছিল। রাতভর টানা বৃষ্টিতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি। তবু আলো ফুটতেই বেরিয়ে এসেছেন।

কেশব মান্না

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০৬
পসরা হাতে নীলু প্রধান। নিজস্ব চিত্র।

পসরা হাতে নীলু প্রধান। নিজস্ব চিত্র।

মেঘে ঢাকা আকাশ। টিপটিপ বৃষ্টিও হচ্ছে। হঠাৎ কানে এল, “ভাল ভাল হার আর কানের দুল রয়েছে। নেবেন না কি? অনেক কম দাম।”

পেশাগত কারণে বৃহস্পতিবার রাত থেকে দিঘায় রয়েছি। ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাব সৈকতে কেমন পড়ল, তা দেখতে শুক্রবার একটু ভোরেই হোটেল থেকে বেরিয়েছিলাম ওল্ড দিঘার ঘাটে। উৎসুক পর্যটকেরাও তত ক্ষণে ভিড় জমিয়েছেন। দুর্যোগ মাথায় করে সকাল সকাল তাঁদেরই মাঝে হাজির মাথায় ঘোমটা টানা ওই মহিলা। হাতের ট্রে-তে ঝিনুকের গয়নার পসরা।

তিনি নীলু প্রধান। স্বামী দিনমজুর। নীলু নিজে পুঁতি, শাঁখ, ঝিনুকের গয়না বিক্রি করেন দিঘায়। সমুদ্র থেকে কিলোমিটার দুয়েক দূরে খাদাল গোবরা গ্রামে বাড়ি। ‘দানা’র ঝাপটায় সেই বাড়ির টিন আর ত্রিপলের ছাউনি সরে গিয়েছিল। রাতভর টানা বৃষ্টিতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি। তবু আলো ফুটতেই বেরিয়ে এসেছেন।

কেন? বছর চল্লিশের নীলুর জবাব, “কাল ঝড় গিয়েছে। আজ তাই বাকিদের পসরা নিয়ে আসতে দেরি হবে। কিন্তু পর্যটকেরা ঘরে বসে থাকবেন না। তাই আগে এলে আমারটাই বিক্রি হবে।” তাই কাকভোরেই হাজির নীলু। ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টির মধ্যে সক্কাল সক্কাল টোটো নিয়ে বেরিয়েছিলেন দিঘার রতনপুরের বাসিন্দা শেখ হায়দারও। তাঁরও বক্তব্য, “যেটুকু রোজগার হয়, সেটাই লাভ।”

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই দিঘায় হাওয়ার দাপট টের পাওয়া যাচ্ছিল। সন্ধ্যায় আবহাওয়া খানিকটা শান্ত হয়। তবে রাতের দিকে ঢেউ বাড়তে শুরু করে। সঙ্গে ছিল সমুদ্রের গর্জন। রাত প্রায় সাড়ে ১২টা নাগাদ ‘দানা’র ভূমিস্পর্শ শুরু হয় ওড়িশায়।

অক্টোবরের এই সময়টায় এত বার দিঘা ঘুরে গিয়েছি, কিন্তু সমুদ্রের এমন রুদ্রমূর্তি আগে দেখেনি। পাড়ের দিকে নারকেলগাছগুলিকে দুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে ঝোড়ো বাতাস। কংক্রিটের গার্ডওয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরে যাচ্ছে বিপুল ঢেউ। যে ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়িয়েছিলাম, সেটাও যেন দুলছে!

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই অন্ধকারে ডুবেছিল ওল্ড দিঘার সৈকত। সব এলইডি বাতি নিভিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওয়াচ টাওয়ার থেকে নেমে আশপাশের পরিস্থিতি দেখতে গেলাম। কিন্তু বাতাসের ধাক্কায় এগোনো দায়। পুলিশকর্মীদের পরামর্শ মেনে টাওয়ারে চুপচাপ বসে পড়লাম। আর প্রহর গুনছিলাম, কতক্ষণে ‘ল্যান্ডফল’ শেষ হবে।

সমুদ্র খানিক শান্ত হল ভোররাতে। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই বৃষ্টিও থেমে গেল। ঢেউগুলো তখন শক্তি হারিয়েছে, তবে গর্জন থামেনি। দিনের শেষে একটাই শান্তি— একুশের ‘ইয়াসে’র সেই বিধ্বংসী স্মৃতি আর ফেরেনি এ বারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Cyclone Dana digha

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy