Advertisement
E-Paper

আমি না হলে কে টুকলি দেবে ভাইকে!

দেওয়াল বেয়ে নেমে এলেন তিনি। ঠিক স্পাইডারম্যান নন, তবে অনেকটা ওই রকমই। —এটা কী করলেন? জানলা দিয়ে পরীক্ষার হলে টুকলি দিলেন দেখলাম। কে তো নিয়েও নিল!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২০
পরীক্ষার ফাঁকেই টুকলি বাছাই। উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের একটি স্কুলে। ছবি: গৌর আচার্য।

পরীক্ষার ফাঁকেই টুকলি বাছাই। উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের একটি স্কুলে। ছবি: গৌর আচার্য।

দেওয়াল বেয়ে নেমে এলেন তিনি। ঠিক স্পাইডারম্যান নন, তবে অনেকটা ওই রকমই।

—এটা কী করলেন? জানলা দিয়ে পরীক্ষার হলে টুকলি দিলেন দেখলাম। কে তো নিয়েও নিল!

লাজুক হেসে বললেন তিনি, ‘‘বুঝলেন, পরিবারে আর কেউ মাধ্যমিক পাশ করেনি। ভাইটা যদি পারে। আর কিছু না, একটা সম্মান!’’

—কিন্তু এমন ঝুঁকি নিচ্ছেন?

অবাক দৃষ্টির সঙ্গে জবাব এল, ‘‘আমারই তো ভাই। আমি পাশে না থাকলে কে থাকবে?’’

মাধ্যমিকের প্রথম দিন। ভিড় তো একটু হবেই। মালদহের মানিকচক হাইস্কুলের তিন দিকে পাঁচিল। এক দিকে দশ ফুট মতো দূরে গঙ্গার বাঁধ। পরীক্ষা শুরু হতেই ছড়িয়ে গেল ভিড়টা। স্কুলের পিছনে। ক্লাসঘরের পাশে। গঙ্গার বাঁধে। ওই বাঁধ থেকেই একের পর এক ‘সাদা ঢিল’ উড়ে যেতে লাগল স্কুলের জানলায়। সাদা, কারণ ঢিলে টুকলির কাগজ মোড়া।

তাঁদেরও প্রশ্ন করা গিয়েছিল— কী করে পারছেন? জবাব এসেছিল, ‘‘ঢিল ছুড়ে কত আম পেড়েছি। এ তো সামান্য ব্যাপার।’’ ঢিল চলল কিছু ক্ষণ। বাধা আসছে না দেখে বাঁধ থেকে নেমে এলেন অনেকে। এ বার স্কুলের দেওয়ালের আড়াল থেকে শুরু হল টুকলি সাপ্লাই। তখনই দেখা বাঙালি স্পাইডারম্যানের সঙ্গে। নুরপুরের আর এক যুবক নিজে অবশ্য বিএ পাশ। কিন্তু ভাইকে টুকলি দিয়েছেন। কারণ তিনি মনে করেন, ‘‘মাধ্যমিক পেরোলে অনেক দরজা খুলে যায়। চাকরির পরীক্ষাতেও বসা যায়।’’

অবাধ নকলের অভিযোগের নিরিখে মালদহের মানিকচকই এ দিনের ফার্স্ট বয়। পাল্লা দিয়েছে ইংরেজবাজার। মথুরাপুর বিএসএস হাইস্কুল ও কালিন্দ্রী হাইস্কুলেও টুকলি-উৎসব জমজমাট। শিক্ষকদের অভিযোগ, পুলিশ কয়েক বার তেড়ে যাওয়া ছাড়া কিছুই করেননি। যদিও এসপি অর্ণব ঘোষের দাবি, নির্বিঘ্নে পরীক্ষা হয়েছে। জেলায় মাধ্যমিকের আহ্বায়ক সঞ্জয় বল বলেছেন, ‘‘নকল সরবরাহের অভিযোগ পাইনি।’’

আরও পড়ুন:

আপনাকে কত জরিমানা চাপাব, প্রশ্ন কোর্টের

উত্তর দিনাজপুরের ৩৬টি স্পর্শকাতর পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। তারই অন্যতম ইটাহার হাইস্কুলে পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টাখানেক পরে দেখা গেল, শৌচাগারের পাশে ফাঁকা জায়গাটায় আসছে পরীক্ষার্থীরা। পকেট, মোজা, প্যান্টের ভাঁজ থেকে চিরকুট বার করে প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে নিচ্ছে। তার পর যেগুলো লাগবে না, সেগুলো ফেলে রেখে ঢুকে যাচ্ছে হল-এ।

ক্যামেরা বসিয়ে হলটা কী? ইটাহার থানার ওসি নিমশেরিং ভুটিয়ার যুক্তি, ‘‘পরীক্ষাকেন্দ্রের ভিতরে নকল করলে তা পুলিশের দেখার দায়িত্ব নয়।’’ প্রধান শিক্ষিকা মৌসুমী আচার্য বলেছেন, ‘‘কিছু পরীক্ষার্থী শৌচাগারে যাওয়ার নাম করে টুকলিতে চোখ বুলিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু হলের ভিতরে কেউ নকল করার সাহস পায়নি।’’ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ বছর পরিদর্শকের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।’’

অর্থাৎ কর্তারা বলেই দিচ্ছেন, সব ঠিক হ্যায়। যেমন বলছেন মানিকচকের ওই যুবক। ভাইকে মোটরবাইকে চাপিয়ে ফেরার সময় বলে গেলেন, ‘‘দাদা, কোনও দিন দেখিনি টুকলি দেওয়ার জন্য কেউ ধরা পড়েছে। চলি, আবার দেখা হবে।’’

বুধবার তো সবে পয়লা দিন!

madhyamik examination Examination
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy