Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
State News

দিলীপের ‘নেতৃত্বে’ মেডিক্যাল কলেজ, চিঠি দিল কেন্দ্র! হতবাক নবান্ন

রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে দিলীপ ঘোষকে চিঠি দেওয়ার অর্থ কী? বিস্মিত প্রশ্ন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের।

হর্ষবর্ধন এই চিঠি ২৩ জানুয়ারি পাঠিয়েছেন দিলীপ ঘোষকে। শুক্রবার তা প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্য সরকার তথা রাজ্যের শাসক দলের তরফ থেকে বিস্ময় প্রকাশ করা শুরু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।

হর্ষবর্ধন এই চিঠি ২৩ জানুয়ারি পাঠিয়েছেন দিলীপ ঘোষকে। শুক্রবার তা প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্য সরকার তথা রাজ্যের শাসক দলের তরফ থেকে বিস্ময় প্রকাশ করা শুরু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২০ ২১:২৭
Share: Save:

ছিল জেলা হাসপাতাল। হয়ে যাচ্ছে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত অন্তত তেমনই। কিন্তু, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কাছে কোনও খবরই নেই। দফতরের মন্ত্রী সম্পূর্ণ অন্ধকারে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর চিঠি এল রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের নামে। দিলীপের ‘নেতৃত্বে’ ওই মেডিক্যাল কলেজ রাজ্যের মানুষে সুরাহা করবে— চিঠিতে লেখা হল এমনও। স্বাভাবিক কারণেই বিস্ময় প্রকাশ করতে শুরু করেছেন রাজ্যের শাসকরা। রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে দিলীপ ঘোষকে চিঠি দেওয়ার অর্থ কী? কোন বুদ্ধিতে কেন্দ্র এটা করল? বিস্মিত প্রশ্ন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের। তিনি চিঠি পেয়েছেন বলে তৃণমূলের ‘গা জ্বলছে’ কেন? পাল্টা প্রশ্ন দিলীপ ঘোষের।

জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালকে ‘সরকারি মেডিক্যাল কলেজে’ উন্নীত করা হচ্ছে— দিলীপ ঘোষকে লেখা চিঠিতে এ কথাই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রিয় দিলীপ ঘোষজি, অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে আপনাকে জানাচ্ছি যে, পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালকে উন্নীত করে সেখানে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার।’’ এতেই শেষ নয়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর চিঠিতে রাজ্য বিজেপির সভাপতির উদ্দেশে আরও লেখা হয়েছে, ‘‘আমি আশা করি যে আপনার প্রগতিশীল নেতৃত্বে এই কলেজ স্থানীয় মানুষের চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা মেটাবে এবং একটি স্বাস্থ্যকর এবং সমৃদ্ধশালী ভারত সুনিশ্চিত করবে।’’

হর্ষবর্ধন এই চিঠি ২৩ জানুয়ারি পাঠিয়েছেন দিলীপ ঘোষকে। শুক্রবার তা প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্য সরকার তথা রাজ্যের শাসক দলের তরফ থেকে বিস্ময় প্রকাশ করা শুরু হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকেও এই চিঠি পাঠানো হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে বৃহস্পতিবার যে সিদ্ধান্তের কথা দিলীপ ঘোষকে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, শুক্রবার সন্ধ্যাতেও সে বিষয়ে বিন্দুবিসর্গ জানেন না রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। হর্ষবর্ধনের চিঠি তথা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের কথা জেনে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। জলপাইগুড়ি জেলারই বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম দেবও জানিয়েছেন যে, এই চিঠির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

আরও পড়ুন: প্রত্যক্ষ কর বাবদ আয় কমছে, দুই দশকে এই প্রথম

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনের লেখা চিঠি। —নিজস্ব চিত্র।

হর্ষবর্ধনের চিঠির কথা জানার পরে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এ দিন জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য পরিষেবা রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিষয় হলেও স্বাস্থ্যশিক্ষা রয়েছে যৌথ তালিকায়। তাই সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কিন্তু তিনি প্রশ্ন তুলেছেন— রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা একটা হাসপাতালকে উন্নীত করা হবে মেডিক্যাল কলেজে, এই সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে কী ভাবে নিতে পারে কেন্দ্র? জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজে পরিণত করতে হলে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করে তা

কোনও ভাবেই সম্ভব নয় বলে মন্ত্রীর দাবি।

আরও পড়ুন: আমাদের শব্দচয়নেই যুদ্ধের ভাব, বলছেন ইরানত্যাগী লেখক শোলে ওলপে

জলপাইগুড়িতে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির প্রস্তাব যে রাজ্য প্রশাসনের সামনে ওঠেনি বা সে নিয়ে আলোচনা যে হয়নি, তেমন নয়। নবান্ন সূত্রের খবর, জলপাইগুড়িতে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির কথা রাজ্য সরকার আগেই ভেবেছিল। তার জন্য জলপাইগুড়িতে জমির খোঁজও চলছিল। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য নিজেও বলেছেন, ‘‘আমরা অনেক দিন আগে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারি ভাবে আমাদের কাছে কিছু আসেনি।’’ রাজ্য সরকারকে বা রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে কিছু না জানিয়ে দিলীপ ঘোষকে কী করে চিঠি দিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, এ দিন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সেই প্রশ্নই তুলেছেন।

একই প্রশ্ন তুলেছেন গৌতম দেবও। বিজেপির সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘‘হাস্যকর ব্যাপার! দিলীপ ঘোষ কে? তাঁকে চিঠি পাঠিয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা কেন জানানো হবে? তিনি তো শুধুমাত্র এক জন সাংসদ। তা-ও উত্তরবঙ্গের বা জলপাইগুড়ির নন, মেদিনীপুরের। তাঁর নেতৃত্বে একটা সরকারি মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হবে বা কাজ করবে— এ কথার মানে আমি বুঝতে পারছি না।’’ বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ করে গৌতম বলেছেন, ‘‘সংবিধান সম্মত ভাবে নির্বাচিত হয়ে এসে কত রকম ভাবে সংবিধান ভেঙে দেওয়া যায়, কত রকম ভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত করা যায়, তা বিজেপি খুব ভাল ভাবে জানে। সেটাই করছে।’’

বিজেপির তরফে অবশ্য জলপাইগুড়িতে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ তৈরির সিদ্ধান্তটাকেই বড় করে তুলে ধরা হচ্ছে। কাকে জানানো হল, তা নিয়ে কে প্রশ্ন তুললেন, সে সব বিষয়কে গুরুত্ব দিতে রাজি হননি রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। শুক্রবার উত্তরবঙ্গ থেকে ফোনে তিনি আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘আমাদের সরকার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা আমাকে জানিয়েছে। এতে অবাক হওয়ার তো কিছু নেই।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমি বার বার সরকারের কাছে ওই মেডিক্যাল কলেজের জন্য আবেদন জানিয়েছি। জলপাইগুড়ির সাংসদ বার বার দাবি জানিয়েছেন। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের জানিয়েছে।’’ রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করে দিলীপ বলেছেন, ‘‘এরা তো কোথাও যায়ও না, কিছু বলেও না। এদের জানাবে কেন? আমরা গিয়েছি, কথা বলেছি। রাজ্য আরও একটা মেডিক্যাল কলেজ পাচ্ছে। এটাই তো বড় কথা। রাজ্য সরকারকেও সে কথা নিশ্চয়ই জানানো হবে বা হয়েছে। আমাকে জানিয়েছে বলে ওদের এত গা জ্বলছে কেন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dilip Ghosh Harsh Vardhan Chandrima Bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE