Advertisement
১৯ মে ২০২৪
rape

Interpreter: মূক ও বধির তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ, শারীরিক পরীক্ষাও থমকে ‘ইন্টারপ্রিটারের’ অভাবে

প্রশ্ন উঠেছে, তদন্তের প্রাথমিক এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলি করতে দেরি হওয়ায় বিচার বাধাপ্রাপ্ত হবে না তো?

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৫১
Share: Save:

মূক ও বধির তরুণীর ধর্ষণের অভিযোগের গোপন জবানবন্দির ব্যবস্থা করতে চার মাসেরও বেশি সময় পার করে দেওয়ার ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েছে কলকাতা পুলিশ। বুধবার পুলিশের ভূমিকা ফের প্রশ্নের মুখে পড়ল ওই তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা এখনও না হওয়ায়। জানা গিয়েছে, এ দিনও পুলিশের তরফে কোনও হাসপাতালে তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা করানো যায়নি। প্রশ্ন উঠেছে, তদন্তের প্রাথমিক এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলি করতে দেরি হওয়ায় বিচার বাধাপ্রাপ্ত হবে না তো?

আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, যে কোনও ধর্ষণের অভিযোগে যত দ্রুত সম্ভব অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তদের শারীরিক পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা করতে হয় পুলিশকে। তার পাশাপাশি অভিযোগকারীর পরিধেয় দ্রুত পাঠাতে হয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে। যত দ্রুত সম্ভব আদালতে অভিযোগকারীর গোপন জবানবন্দির ব্যবস্থাও করতে হয়। আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘শারীরিক পরীক্ষা সেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি যা ধর্ষণের মামলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ বলে ধরা হয়। এই প্রমাণ সংগ্রহের কাজে দেরি করার অর্থ প্রমাণ নষ্ট হতে দেওয়া। যত দেরি হবে ততই প্রমাণ হারিয়ে যাবে অভিযোগকারীর শরীর থেকে।’’

আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, মেডিকোলিগ্যাল পরীক্ষায় দেরি হলে শেষ পর্যন্ত অনেক কিছুই পাওয়া যাবে না। তা হলে এর পর নির্ভর করতে হবে অভিযোগকারিণীর গোপন জবানবন্দি এবং টিআই প্যারেডের উপর। সেই পথেও পুলিশ সত্যের সন্ধান করতে পারে। কিন্তু তদন্তের প্রাথমিক প্রক্রিয়া পালন করা হবে না কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা একজন ডেপুটি কমিশনারের সঙ্গে। তাঁর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন রাত পর্যন্ত তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা করানো যায়নি। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হয়। এক জন ইন্টারপ্রিটার থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। সব দিক ব্যবস্থা করে এগোতে গিয়ে দেরি হচ্ছে। দ্রুত তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা হবে।

গত ২ জুলাই এক মূক ও বধির তরুণী এন্টালি থানায় গিয়ে জানান, তাঁকে নিগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় অভিযোগ দায়ের করলেও তরুণীর গোপন জবানবন্দির ব্যবস্থা করতে সাড়ে চার মাসের বেশি সময় পেরিয়ে যায় বলে অভিযোগ। শিয়ালদহ আদালতে সোমবার গোপন জবানবন্দিতে তরুণী দাবি করেন, নিগ্রহ নয়, তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে। একজন ‘ইন্টারপ্রিটারের’ উপস্থিতিতে হওয়া সেই জবানবন্দির ভিত্তিতে পুলিশ এরপর ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণের মামলা রুজু করে। সোমবার রাতেই গ্রেফতার করা হয় চার জনকে। ধৃতদের মঙ্গলবার আদালতে তোলার পর বিষয়টি সামনে আসে। বিচারক ধৃতদের আগামী শুক্রবার পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখতে বলেন।

আদালতে গিয়ে কেন তরুণীকে ধর্ষণের কথা জানাতে হল? তিনি প্রথম যে দিন থানায় গিয়েছিলেন, সে দিন কি তিনি কোনও ইন্টারপ্রিটারের সাহায্য পেয়েছিলেন? সেই সাহায্য না পাওয়ার কারণেই কি থানায় নিজের সমস্যা বোঝাতে পারেননি ওই তরুণী? এ প্রসঙ্গে ওই তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তা সফল হয়নি। এন্টালি থানা সূত্রে যদিও জানা গিয়েছে, প্রথম দিন কোনও ইন্টারপ্রিটারের ব্যবস্থাই করা যায়নি। ফলে প্রাথমিক অভিযোগ লিখে নেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘থানায় এমন কেউ এলে তাঁর জন্য ইন্টারপ্রিটারের ব্যবস্থা করার নির্দেশ রয়েছে। সেই মতোই কাজ করা হয়। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছিল তা খোঁজ করে দেখা হবে।’’ এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিটি ডিভিশনের জন্য নির্দিষ্ট ইন্টারপ্রিটার বা স্পেশাল এডুকেটর রাখা যায় কি না, সে ব্যাপারে লালবাজারের তরফে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে বলে খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rape Physically disable Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE