Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিচারকের আসনে রূপান্তরকামী জয়িতা

শরীরে পুরুষ, মনে নারী ২৯ বছরের জয়িতা। কয়েক বছর আগে কলকাতায় নেতাজি নগরের একটি কলেজে বিএ পড়ার সময়ে টিটকিরিতে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তখন তাঁর নাম জয়ন্ত। পরে হলফনামা দিয়ে জয়িতা হয়েছেন। শিলিগুড়িতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে এইচআইভি সচেতনতার কাজ করতে করতেই তাঁর প্রথম বার ইসলামপুরে যাওয়া।

জয়িতা মণ্ডল।

জয়িতা মণ্ডল।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৭ ০৩:৩৩
Share: Save:

বছর চারেক আগেও তাঁর থাকার জায়গা জোটেনি রাজ্যের এই সীমান্তবর্তী প্রান্তিক মহকুমায়। বিহার ও বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ইসলামপুরের হোটেল থেকে ঘাড়ধাক্কা খেয়ে সে বার বাসস্ট্যান্ডেই রাত কাটিয়েছিলেন জয়িতা মণ্ডল।

রূপান্তরকামী সেই নারীকেই এ বার মহকুমা লোক আদালতে বিচারকের ভূমিকায় দেখা যাবে। শনিবারই ইসলামপুর লোক আদালতে বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন জয়িতা। ইসলামপুরেই সমাজকর্মী হিসেবে নাগাড়ে কাজ করার সুবাদে স্থানীয় প্রশাসনের থেকে এই স্বীকৃতি তিনি ছিনিয়ে এনেছেন।

আরও পড়ুন: দীপান্বিতার মাথায় জিয়াদ চাচার হাত

শরীরে পুরুষ, মনে নারী ২৯ বছরের জয়িতা। কয়েক বছর আগে কলকাতায় নেতাজি নগরের একটি কলেজে বিএ পড়ার সময়ে টিটকিরিতে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তখন তাঁর নাম জয়ন্ত। পরে হলফনামা দিয়ে জয়িতা হয়েছেন। শিলিগুড়িতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে এইচআইভি সচেতনতার কাজ করতে করতেই তাঁর প্রথম বার ইসলামপুরে যাওয়া। প্রান্তিক এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গ তথা হিজড়ে, রূপান্তরকামীদের জন্য কাজের ইচ্ছেটা তখনই আরও জোরালো হয়ে ওঠে।

২০১৪-য় সুপ্রিম কোর্টের নালসা রায়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কাজ করা বা সামাজিক মর্যাদার অধিকার স্বীকৃতি পাওয়ায় জয়িতাদের লড়াই কিছুটা মসৃণ হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন ট্রান্সজেন্ডার উন্নয়ন বোর্ড গড়ে তুলেছে। ওই বোর্ডের সদস্য তথা রাজ্য সমাজকল্যাণ সচিব রোশনী সেনের কথায়, ‘‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের পাশে দাঁড়াতে জেলায় জেলায় ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য কমিটিও গড়া হচ্ছে।’’ তাঁর মতে, জেলায় জেলায় সমাজের বিশিষ্ট ভূমিকায় ট্রান্সজেন্ডাররা উঠে এলে তা সামাজিক বিদ্বেষ বা ভুল ধারণা ভাঙতেও সাহায্য করবে।

ইসলামপুরে জয়িতার ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। সাধারণত, বিভিন্ন জেলা আদালতে নিষ্পত্তি না-হওয়া কিছু মামলা ও লঘু অপরাধের নিষ্পত্তি হয় লোক আদালতে। প্রাক্তন বিচারক, আইনজীবী ও সমাজে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিচারক হন। জয়িতা প্রসঙ্গে উত্তর দিনাজপুরের জেলা শাসক আয়েষা রানির মন্তব্য, ‘‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বলে নয়, একজন গুরুত্বপূর্ণ সমাজকর্মী হিসেবেই জয়িতা প্রশাসনের সম্পদ।’’ ইসলামপুরে ১৯৭ জন ট্রান্সজেন্ডারকে নিয়ে কাজ করছেন জয়িতা। তাঁর চেষ্টাতেই সেখানে কেন্দ্রীয় রোগী কল্যাণ সমিতি প্রকল্প বা সরকারি বৃদ্ধাবাস সামলাচ্ছেন রূপান্তরকামীরা। প্রশাসনের সাহায্যে হাতের কাজ, বিউটিশিয়ান, সেলাইয়ের কাজও শেখানো হচ্ছে অনেককে। জয়িতার কথায়, ‘‘এত দিন আইনি লড়াই লড়তে কোর্টে গিয়েছি। বিচারকের ভূমিকায় দ্রুত সড়গড় হব।’’

সহ প্রতিবেদন: গৌর আচার্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE