বীরভূমের পাইকার গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুন পুশব্যাক হওয়ার ঘটনা আদালতে পৌঁছে গিয়েছে। আর সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূত হয়ে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম নিজে সোনালির বাড়িতে গিয়ে তাঁর মা-বাবার সঙ্গে দেখা করলেন। দেখা করলেন আরও এক ভুক্তোভোগী সুইটি বিবির পরিবারের সঙ্গেও।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার পর সামিরুল এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, “আজ আমি বীরভূমের মুরারইয়ের প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়েছিলাম অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুনের দুঃখে ভেঙে পড়া বাবা এবং মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। প্রায় দু’মাস আগে তাঁদের দুই মেয়েকে— যাঁরা প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক—অবৈধ ভাবে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। যদিও তাঁদের পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বীরভূমে বসবাস করছে, তবুও ওই দুই নারীকে সন্তান-সহ সীমান্ত থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।”
সামিরুল আরও লেখেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আমরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্ট ও ভারতের সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করছি। আমি পরিবারকে আশ্বাস দিয়েছি, আমরা তাঁদের মেয়েদের ঘরে ফিরিয়ে আনব। ফিরে এলে তাঁদের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত শ্রমশ্রী প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বিজেপিকে এই অবৈধ কার্যকলাপের ফলে সৃষ্ট যন্ত্রণার জন্য জবাবদিহি করতেই হবে।”
আরও পড়ুন:
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন দিল্লি থেকে অন্তঃসত্ত্বা সোনালি-সহ তাঁর স্বামী এবং সাত বছরের ছেলেকে আটক করে দিল্লি পুলিশ। অভিযোগ, মাত্র দু’দিনের মধ্যে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সোনালির পরিবার দাবি করেছে, তারা বীরভূমের স্থায়ী বাসিন্দা এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেখানে বসবাস করছে। তবুও কেন তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো হল, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছেন পরিবারের সদস্যেরা। এই ঘটনার পরেই কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় সোনালির পরিবার। আদালত ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই বিষয়ে হলফনামা তলব করেছে। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর মামলার শুনানির দিন নির্ধারিত হয়েছে। ফলে এখন সে দিকেই তাকিয়ে সোনালির বৃদ্ধ মা-বাবা, যাঁরা মেয়েকে ফেরানোর আশায় উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। সোনালি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় তাদের উদ্বেগ বেড়েছে। কারণ, বাংলাদেশে থাকার সময় তাঁর সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে সে কোন দেশের নাগরিকত্ব পাবে? সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে পরিবারের অন্দরে।
রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, গত কয়েক মাস যাবৎ বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নির্যাতনের ঘটনা ধারাবাহিক ভাবে ঘটছিল বলে অভিযোগ। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল সরাসরি বিজেপিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই নিরীহ ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। অথচ, গত সাত বছরের বেশি সময় ধরে সোনালি দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করছিলেন।
আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই ঘটনা কেবল মানবিক সঙ্কটই নয়, আইনগত দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, একজন ভারতীয় নাগরিককে অবৈধ ভাবে সীমান্ত পার করানো সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। বর্তমানে বীরভূমের পাইকার গ্রামে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র আলোড়ন তৈরি হয়েছে। স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও সোনালির পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা দাবি তুলেছে, দ্রুত সোনালি ও তাঁর সন্তানদের ফিরিয়ে আনতে হবে।
সব মিলিয়ে, বীরভূমের সোনালি খাতুন পুশব্যাক-কাণ্ড এখন শুধু একটি পারিবারিক ট্র্যাজেডি নয়, বরং রাজনৈতিক ও আইনগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাই কোর্টে মামলার শুনানি ঘিরে রাজ্য ও কেন্দ্র— উভয়ের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে সোনালির পরিবার।