Advertisement
E-Paper

উকুনে অস্থির, শীতেও উলঙ্গ মানসিক রোগীরা

কেন্দ্রীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা হাসপাতাল পরিদর্শনে যাবেন। তাই আগেভাগে, গত ১৪ জানুয়ারি বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের পরিস্থিতি যাচাই করতে গিয়েছিলেন মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার প্রতিনিধিরা। গিয়ে তাঁরা স্তম্ভিত। হাসপাতালে ইতিউতি উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পুরুষ ও মহিলা রোগীরা। এই শীতে তাঁদের গায়ে সুতোটুকুও নেই।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ ১১:০৭
খাবার জল নেওয়ার জায়গায় এক রোগিণী। বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে। — নিজস্ব চিত্র

খাবার জল নেওয়ার জায়গায় এক রোগিণী। বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে। — নিজস্ব চিত্র

কেন্দ্রীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা হাসপাতাল পরিদর্শনে যাবেন। তাই আগেভাগে, গত ১৪ জানুয়ারি বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের পরিস্থিতি যাচাই করতে গিয়েছিলেন মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার প্রতিনিধিরা। গিয়ে তাঁরা স্তম্ভিত। হাসপাতালে ইতিউতি উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পুরুষ ও মহিলা রোগীরা। এই শীতে তাঁদের গায়ে সুতোটুকুও নেই।

কয়েক বছর আগে কলকাতার পাভলভ মানসিক হাসপাতালে রোগিণীদের উলঙ্গ রাখা নিয়ে রাজ্য তোলপাড় হয়েছিল। ভবিষ্যতে কোনও সরকারি মানসিক হাসপাতালে যাতে এর পুনরাবৃত্তি না-হয়, সে ব্যাপারে কড়া নির্দেশ জারি করেছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। তার পরেও বহরমপুরে একই দৃশ্য দেখে সংস্থার প্রতিনিধিরা চমকে ওঠেন।

প্রায় তৎক্ষণাৎ স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের বিষয়টি জানায় ওই সংস্থা। ছবিও পাঠায়। তড়িঘড়ি রোগিণীদের পরিচ্ছন্ন পোশাকের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু কর্মকর্তারা পুরুষ ওয়ার্ডের প্রতি আর মন দেননি। পুরুষদের জামাকাপড় জোটেনি। স্বাস্থ্য দফতরেরই একটি সূত্রের মতে, আসলে ধরেই নেওয়া হয়েছিল, মহিলা কমিশন যখন যাচ্ছে, তারা নিশ্চয়ই আর পুরুষ ওয়ার্ড দেখতে যাবে না!

কিন্তু সেই হিসেব উল্টে দিয়ে গত ১৮ জানুয়ারি মহিলা ওয়ার্ড ঘুরে দেখার পরে আচমকা পুরুষ ওয়ার্ডে ঢুকে পড়েন মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা। চোখের সামনেই দেখতে পান, কাপড়-চোপড় নেই, তাই শীত থেকে বাঁচতে হাসপাতালের দেওয়া লাল কম্বল গায়ে জড়িয়েই ঘুরছেন বহু রোগী। বহু রোগী শুধু জামা পরে বসে বা শুয়ে রয়েছেন। শীতে সোয়েটার গায়ে দেননি রোগীদের অধিকাংশ।

কেন এই অবস্থা? রোগীরা জানান, তাঁদের পোশাকের ভাঁজে, সেলাইয়ের ফাঁকে-ফোঁকরে দলে-দলে ছারপোকা। জামাকাপড় নিয়মিত কাচার ব্যবস্থা নেই। ওয়ার্ডের নোংরা, অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে ছারপোকাদের আরও বাড়বাড়ন্ত হয়। তাদের কামড়ে জামাকাপড়-সোয়েটার কিছুই গায়ে রাখতে পারছেন না তাঁরা। কেন্দ্রীয় মহিলা কমিশনের এক সদস্যের কথায়, ‘‘জল থইথই ওয়ার্ডে ৭৮টি শয্যায় ১৪৬ জন রয়েছেন। এত অমানবিক ভাবে রোগীদের রাখা হতে পারে, ভাবতে পারিনি। রোগীরা তো সুস্থ হওয়ার বদলে আরও অসুস্থ হয়ে যাবেন। আমরা কড়া রিপোর্ট দেব।’’

এর পরেই গোটা বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, ‘‘অভিযোগ এসেছে। ছবিও এসেছে। এ রকম হওয়ার কথা নয়। কী ভাবে হল তা তদন্তে জানা যাবে।’’ যে সংস্থা প্রথম বিষয়টি জানিয়েছিল, সেটির অন্যতম কর্মী অদিতি বসু বলেন, ‘‘আমরা ছবি-সমেত গোটা বিষয়টি জানানোর পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটিই কাজ করেছেন। ৩৫ জনকে নেড়া করে দিয়েছেন, যাতে উকুন জামায় না ছড়ায়। আসলে, মানসিক রোগীদের মানুষ বলে মনে করতে নীতি নির্ধারকদের অনেকেরই এখনও অসুবিধা হয়।’’ হাসপাতালের সুপার পবিত্র সরকার অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

পাভলভ মানসিক হাসপাতালে আবার নিয়ম করে দুপুরে কয়েক ঘণ্টা এবং গোটা রাত এক-একটি হলঘরের মতো ওয়ার্ডে রোগীদের তালাবন্ধ করে রাখার অলিখিত নিয়ম চালু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই পাভলভেই ‘আইসোলেটেড সেল’-এ এক বা একাধিক রোগীকে বন্ধ রাখার অভিযোগ ছিল। এ নিয়ে তুমুল শোরগোলের পর সমস্ত মানসিক হাসপাতাল থেকে ওই রকম সেল উঠিয়ে দেওয়া হয়। তার পরেও এক-একটি হলঘরে এক সঙ্গে ২০-২৫ জনকে দীর্ঘক্ষণ তালাবন্ধ করে রাখার অভিযোগ ফের উঠছে। পাভলভের সুপার গণেশপ্রসাদ অবশ্য দাবি করেন, এ রকম কিছু যে হয়, সেটা তাঁর জানা নেই।

(সহ প্রতিবেদন: শুভাশিস সৈয়দ)

mental patient asylum parijat bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy