রবি ঠাকুর তখন তরতাজা যুবক। নাম ছড়িয়েছে দেশের কবি সমাজে। আর বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু সবে স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। বয়স পাঁচ। ১৮৯৯-এর এমনই এক জানুয়ারিতে শীতে কেঁপে উঠেছিল কলকাতা। হাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, ওই বছরের ২০ জানুয়ারি মহানগরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছর আচমকা শীত যা খেল দেখাচ্ছে, তাতে ১১৯ বছর আগের সেই রেকর্ড অক্ষুণ্ণ থাকবে কি না, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে আবহবিজ্ঞানীদের মধ্যে।
গত ক’দিন ধরেই কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে শিহরন। শনিবার কলকাতার আলিপুরে তাপমাত্রা ছিল ১১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, দমদমে ৯.৭ ডিগ্রি। শৈত্যপ্রবাহ বইছে বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান ও পুরুলিয়ার মতো পশ্চিমাঞ্চলের একাধিক জেলায়। ‘‘এমন পারদ পতন জারি থাকলে শীতের নয়া রেকর্ড তৈরি হতেই পারে’’— মন্তব্য এক আবহবিজ্ঞানীর।
অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০১৩ সালেই ভাঙতে বসেছিল রেকর্ড। সে বছরের ৯ জানুয়ারি দমদমের তাপমাত্রা নেমেছিল ৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তখনও ধুন্ধুমার শীতের পিছনে যেমন ছিল জোরালো পশ্চিমী ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা ভারী হাওয়া), এ বারও তাই। মৌসম ভবন সূত্রে বলা হচ্ছে, একটি জোরালো ঝঞ্ঝার প্রভাবে সম্প্রতি কাশ্মীরে প্রবল তুষারপাত হয়েছে। রাজস্থানের আলওয়ারে রাতের তাপমাত্রা কার্যত শূন্যে গিয়ে ঠেকেছে। পঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশও জবুথবু। রাঁচী, পটনাতেও জবরদস্ত শীত। উত্তুরে হাওয়ায় ভর করে সেই ঠান্ডাই আছ়়ড়ে পড়ছে বাংলায়।
আরও পড়ুন: ফের মনুয়া কাণ্ড, যুবক খুনে ধৃত স্ত্রী ও প্রেমিক
মরসুমের গোড়া থেকে হাপিত্যেশ বসে থাকা বাঙালির আহ্লাদ ছড়িয়ে পড়ছে ফেসবুক, হোয়্যাটসঅ্যাপেও। এ দিন সাতসকালে ঘুম থেকে উঠতেই দমদমের এক যুবকের মোবাইলে বান্ধবীর বার্তা এসেছিল, ‘এক বার ছাদে উঠে দেখ, গরিবের দার্জিলিং!’ দিনভরই চায়ের দোকান, বাসে-ট্রেনে, নানা আড্ডায় শোনা গিয়েছে সেই কাঁপুনিরই সাতকাহন। ডেঙ্গির কবল থেকে মুক্তি পাওয়া বাংলায় চালু হয়েছে মশার লেপের ভিতরে ঢোকার আর্জি নিয়ে নানা রসিকতা।
পারদ পতন সত্যিই রেকর্ড গড়বে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অনেকে অবশ্য এ-ও বলছেন, ১১৯ বছর আগে কলকাতা অন্য রকম ছিল। এত বাড়ি-গাড়ি, বায়ু দূষণ ছিল না। গত এক শতকে গোটা পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বেড়েছে। সেই উষ্ণায়নের কবলে পড়ে এত বছর আগের পারদ মতো পতনের সম্ভাবনা কম। হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলছেন, ‘‘আপাতত শীত চলবে। এই কাঁপুনিও থাকবে।’’ হাওয়া অফিসের তথ্য জানাচ্ছে, গত শতাব্দীর ষাট, সত্তর ও আশির দশকের কলকাতাও ৭-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস দেখেছে।