লালগড়ের আমাইনগরের স্কুলে বই বিলি। নিজস্ব চিত্র
কোনও জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের কেষ্টবিষ্টুরা নন। শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনে সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিশু পড়ুয়াদের হাতে বই তুলে দিলেন একশো দিনের প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা। বুধবার লালগড়ের আমাইনগর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন নজির তৈরি করেছেন।
প্রতি বছর ২ জানুয়ারি শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনটিতে রাজ্যের সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলের পড়ুয়াদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয়। রাজ্যশিক্ষা দফতরের ক্যালেন্ডারে দিনটি ‘পুস্তক দিবস’, ইংরেজিতে ‘বুক ডে’। এ দিন জেলার বিভিন্ন স্কুলগুলিতে বই তুলে দিতে কোথাও ছোট আবার কোথাও বড় আকারে অনুষ্ঠান হয়েছে। কোথাও জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক নিজে হাজির থেকে পড়ুয়াদের হাতে বই তুলে দিয়েছেন। কোথাও বিভিন্ন চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক, কোথাও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অথবা শিক্ষাবন্ধুরা গিয়ে বই তুলে দিয়েছেন।
বিভাগীয় বা ওজনদার জনপ্রতিনিধি পায়নি যে সব স্কুল, তারা স্থানীয় কোনও প্রাক্তন শিক্ষক অথবা গ্রামের বিশিষ্টজনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমাইনগর স্কুলের তেমন বরাতজোর কোথায়!
একশো ভাগ আদিবাসী অধ্যুষিত আমানইনগর গ্রামের ছেলেমেয়েরাই এই স্কুলে পড়ে। পড়ুয়ারাও প্রায় সকলেই আদিবাসী। স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা সাকুল্যে ১৪ জন। পড়ুয়া কম হলেও আমাইনগর স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা, ছবি আঁকা ও সাংস্কৃতিক কাজ কর্মে যথেষ্ট পারদর্শী বলে জানাচ্ছেন অভিভাবকরা। দরিদ্র গ্রামবাসীর বেশির ভাগই দিনমজুরির কাজ করেন। কেউবা প্রান্তিক চাষি। কেউ আবার খেতমজুর। স্কুলের কাছেই একশো দিনের প্রকল্পে পুকুর কাটা হচ্ছে। সেখানে মাটি কাটার শ্রমিকের কাজ করছেন গ্রামেরই কিছু বাসিন্দা। স্কুলের সহশিক্ষক মানস বেজ বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের পড়ুয়াদের হাতে বই তুলে দেওয়ার জন্য তেমন কাউকে পাইনি। পুকুর খননের কাজে নিয়োজিত দু’জন শ্রমিককে বই তুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি।’’
আমাইনগর গ্রামের বাবুলাল হেমব্রম, সূর্যকান্ত মান্ডিরা এমন প্রস্তাব শুনে অবাক-অভিভূত হয়ে যান। কাজ সেরে দুপুর বারোটায় তাঁরা স্কুলে হাজির হন। বই তুলে দেন পড়ুয়াদের হাতে।
সূর্য বলেন, ‘‘আমি উচ্চ মাধ্যমিকের পরে আর পড়ার সুযোগ পাইনি। সংসারের জোয়াল টানতে পড়া ছাড়তে হয়েছিল।’’ আর অভিভাবক বাবুলাল বলছেন, ‘‘পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা বেশ কঠিন ছিল। এখন সরকারি ভাবে পড়ুয়ারা অনেক কিছু পায়। বেশিদূর পড়িনি বলেই দিনমজুরি করি।’’ তাঁরা পড়ুয়াদের বলেন, ‘‘তোমরা আমাদের মতো পড়া থামিয়ো না। কলেজ অবধি পড়ো।’’ সহশিক্ষক মানসবাবু বলছেন, ‘‘এই চেতনাটাই দিনের সেরা প্রাপ্তি।’’
ঝাড়গ্রাম জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভাশিস মিত্র বলেন, ‘‘অসাধারণ উদ্যোগ। অভিভাবক-শিক্ষক-শিক্ষার্থীর এমন মেলবন্ধনেই আদর্শ শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy