ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে মোট ৮৬ কিলোমিটার অংশে শিলাবতী নদীর ড্রেজ়িং করার প্রস্তাব রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ২৩ কিলোমিটার নদীর ড্রেজিং করা হবে বলে খবর। ওই কাজ শেষ হলে নদীর বাকি অংশ খনন করা হবে।
জানা গিয়েছে, আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকল্পের সূচনার পরেই ঘাটাল লাগোয়া বন্দর (যেখান থেকে শিলাবতী রূপনারায়ণে মিশছে) এলাকা থেকে দাসপুরের রামদেবপুর পর্যন্ত ড্রেজিংেয়র কাজ শুরু হবে। নদীর দু’দিকে কোথাও ১৫ ফুট কোথাও ১২ ফুট-সহ সার্বিক ভাবেই বাড়ানো হবে নদীর গভীরতা। সেই মতো চূড়ান্ত ডিপিআর সেচ ভবনে জমা পড়েছে। ডিপিআর পৌঁছেছে পশ্চিমবঙ্গ মাইনস অ্যান্ড মিনারেল কর্পোরেশনেও। এই সংস্থারই নদীর ড্রেজ়িং করার কথা। সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, “ শিলাবতী-সহ ঘাটালের সব নদী-খালের ড্রেজিং করার প্রস্তাব রয়েছে। তার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সারা। শিলান্যাসের পরেই শুরু হয়ে যাবে নদীর ড্রেজিং।”
নদী বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি কাজই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার মধ্যে নদী খনন অর্থাৎ আগাগোড়া নদীর ড্রেজিংই হল মুখ্য কাজ। তা ঠিকঠাক সম্পন্ন হলেই প্রকল্প রূপায়ণের সুফল পাওয়া যাবে। এমনিতেই ঘাটাল-দাসপুরে শিলাবতী, কংসাবতী-সহ বড় বড় খালগুলি বহু পুরনো। তার উপর বর্ষায় বিপুল জলরাশি ওই নদীগুলিতে গিয়ে পড়ে। কালক্রমে নদীরও ভৌগোলিক অবস্থান বদলেছে। পাল্টেছে নদীর গতিপথ। সে ভাবে নদীগুলির ড্রেজিং হয়নি। সব মিলিয়ে পলি পড়ে নদীর গভীরতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কমেছে জলবহন ক্ষমতা। ফলে, বর্ষায় অল্প বৃষ্টিতেই নদী উপচে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়।
জানা গিয়েছে, শিলাবতীর শেষ প্রান্ত থেকেই নীচের দিকে ড্রেজিং হবে। কয়েকমাস আগেই তার পরীক্ষা হয়েছে। নদীতে নেমে কোথায় কী পরিমাণ মাটি বা বালি রয়েছে, সেই পরীক্ষার কাজ সারা। মূলত দু’দিকের অংশেই বেশি বালি এবং কাদাযুক্ত মাটি জমে রয়েছে। মাঝের অংশে কোথাও গভীরতা রয়েছে, কোথাও চর তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে নদীর দু’দিকে ১৫ থেকে ১২ ফুট (প্রয়োজনে আরও বাড়তে পারে) ড্রেজ়িং করা হবে। মাঝের অংশে ছয় থেকে সাত ফুট খনন করে মাটি তোলা হবে। প্রাথমিক ভাবে ২৩ কিলোমিটার হলেও ক্রমে নদীর ৮৬ কিলোমিটার অংশেই ঝেড়ে ড্রেজিং হবে। চন্দ্রকোনা পেরিয়ে গড়বেতার কাছাকাছি শিলাবতীর অংশে পৌঁছে যাবে ড্রেজিং। পাশাপাশি কংসাবতী, কাঁকি ও এবং শোলাটোপা খালেরও ড্রেজিংয়ের প্রস্তাব রয়েছে।
শিলাবতী-সহ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবিত নদীগুলির ড্রেজিংয়ে মোট ৩০০ কোটি টাকা ধার্য রয়েছে। তবে এখন নদীর ওই ড্রেজিং ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড’ (ডব্লিউ বি এম ডি টি সি এল)-কে দিয়ে খনন করাতে চাইছে সরকার। এতে সরকারের নিজস্ব কোনও খরচ হবে না। উল্টে রয়্যালিটি বাবদ টাকা দেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা। দাসপুরের পলাশপাই খালের খনন ওই পদ্ধতিতেই চলছে। তবে কোন পদ্ধতিতে শিলাবতীর ড্রেজিং হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)