Advertisement
E-Paper

বাধা পেরিয়ে অন্য লড়াই সরস্বতীদের

কারও চোখে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন। কারও বা অন্য কিছু। স্বপ্নপূরণের পথে দারিদ্র্য কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে না তো? ভাল ফল করেও দুর্ভাবনা কাটছে না ওদের। অবশ্য হাল ছাড়তে নারাজ কেউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৭ ০০:৫৭
কৃতী: (বাঁ দিক থেকে উপরে) সরস্বতী হেমব্রম, দীপ্তি কবি, (বাঁ দিক থেকে নীচে) অনিরুদ্ধ মণ্ডল, সুমনা মাঝি। —নিজস্ব চিত্র।

কৃতী: (বাঁ দিক থেকে উপরে) সরস্বতী হেমব্রম, দীপ্তি কবি, (বাঁ দিক থেকে নীচে) অনিরুদ্ধ মণ্ডল, সুমনা মাঝি। —নিজস্ব চিত্র।

আর্থিক প্রতিকূলতা ছিল। সেই প্রতিকূলতার পাহাড় টপকে উচ্চ মাধ্যমিকে সাফল্যের মুখ দেখেছে ওঁরা। ওঁরা মানে সরস্বতী হেমব্রম, দীপ্তি কবি, অনিরুদ্ধ মণ্ডল, সুমনা মাঝিরা। অভাবকে হারিয়ে ভাল নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন সকলে।

কারও চোখে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন। কারও বা অন্য কিছু। স্বপ্নপূরণের পথে দারিদ্র্য কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে না তো? ভাল ফল করেও দুর্ভাবনা কাটছে না ওদের। অবশ্য হাল ছাড়তে নারাজ কেউ। সকলেই বলছেন, এতদিন লড়াই করেছি। আরও করব। পাশে থাকছেন পরিজনেরা। তাঁরা বলছেন, যতদূর পড়তে চায় পড়বে। আজ সব কষ্ট সার্থক।

খেতমজুর পরিবারের মেয়ে সরস্বতী ছোটবেলা থেকেই রয়েছেন মেদিনীপুর গ্রামীণের এক আশ্রমে। বাড়ি শালবনির সীতানাথপুরে। বাবা জমাদার হেমব্রম খেতমজুর। মা দুখী হেমব্রম গৃহবধূ। মেয়েকে পড়ানোর সামর্থ্য ছিল না জমাদারবাবুর। মেদিনীপুর গ্রামীণের একটি আশ্রম মেয়েটির পড়াশোনার ভার নিয়েছিল সেই ছোটবেলায়। এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৪০৮ নম্বর পেয়ে সকলের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন তিনি। চোখে শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন। মেদিনীপুর গ্রামীণের হরিশপুরের দেশপ্রাণ হাইস্কুলের ছাত্রী সরস্বতীর আশা, চলার পথে কখনও অসুবিধায় পড়লে নিশ্চয়ই কোনও সহৃদয়ের হাত এগিয়ে আসবে। যে হাতে হাত রেখে আরও অনেকটা পথ পেরোনো যাবে।

শালবনির ভাদুতলা হাইস্কুলের ছাত্রী দীপ্তি কবি উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছেন ৪০৬ নম্বর। বাড়ি ডাঙরপাড়ায়। বাবা দ্বিজেন কবি ঠিকাশ্রমিক। মাস ফুরোলে সামান্য আয়। মা সুচিত্রা কবি গৃহবধূ। বাংলা কিংবা ইতিহাসে অনার্স নিয়ে মেদিনীপুর কলেজ থেকে পড়তে চান দীপ্তি। তাঁর কথায়, “নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে থেকেও উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল করার সব রকম চেষ্টা করেছি। আমাকে পড়াতে বাবা-মাকে প্রচুর কষ্ট করতে হয়েছে। সামনে হয়তো আরও বাধা থাকবে। চেষ্টা করব সব বাধা টপকে এগিয়ে যাওয়ার।”

মেদিনীপুর টাউন স্কুলের ছাত্র অনিরুদ্ধ মণ্ডল এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৪২৩ নম্বর পেয়েছে। বাড়ি মেদিনীপুর শহরের মহাতাবপুরে। বাবা শান্তনু মণ্ডল বাড়ি বাড়ি জিনিস বিক্রি করেন। দোকানে দোকানে জিনিসপত্র ফেরি করেন। মা রূপালী মণ্ডল গৃহবধূ। মেদিনীপুর কলেজে ভূগোলে অনার্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছে রয়েছে অনিরুদ্ধর।

আর্থিক দুর্দশার মধ্যেও লড়াই করে এতটা এগিয়েছে এই কৃতী ছাত্র। বাড়িতে অভাব। তাতে কী? লড়াই করেই এগোতে চায় তাঁরা।

অনিরুদ্ধ বলছিলেন, “পড়াটা চালিয়ে যেতে হবে। দেখি কী হয়।” মেদিনীপুর গ্রামীণের গুড়গুড়িপাল হাইস্কুলের ছাত্রী সুমনা মাঝি উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৪২ নম্বর পেয়েছেন। বাড়ি গুড়গুড়িপালের অদূরে উল্টায়। বাবা রবীন্দ্রনাথ মাঝি চাষের কাজ করেন। সামান্য জমি রয়েছে।

টেনেটুনে কোনও রকমে সংসার চলে। মা উজ্জ্বলা মাঝি গৃহবধূ। সুমনার পছন্দের বিষয় বাংলা। বাংলায় তিনি ৯৬ নম্বর পেয়েছেন। মেদিনীপুর কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর। সুমনা বলছিলেন, “পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। সকলে পাশে থাকলে পড়াশোনাটা নিশ্চয়ই চালিয়ে নিতে পারব। একটা চাকরি খুব দরকার।” বাধার পাহাড় টপকে সুমনাদের স্বপ্নের উড়ান ডানা মেলল বলে!

Higher Secondary Results West Bengal Results WBCHSE উচ্চ মাধ্যমিক ফলাফল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy