Advertisement
E-Paper

ব্লু-হোয়েল আতঙ্ক, নজরে একই স্কুলের ছয় ছাত্রছাত্রী

অমন প্রত্যন্ত এলাকায়, প্রান্তিক পরিবারের ছেলেমেয়েগুলি স্মার্ট ফোন পেল কোথায়? ইন্টারনেট সংযোগই বা দিল কে? উত্তরটা সোজা— আধুনিক হতে চাওয়া ভারতবর্ষে সস্তার ইন্টারনেট সর্বত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৪০
মুখোমুখি: ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন প্রধান শিক্ষিকা। নিজস্ব চিত্র

মুখোমুখি: ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন প্রধান শিক্ষিকা। নিজস্ব চিত্র

খেল দেখাচ্ছে খেলা। সবুজ মাঠে নেমে খেলা নয়, লাগে না ব্যাট-বল। মুঠো ফোনে বন্দি মায়াবি দুনিয়ার খেল। শহুরে পরিসর ছেড়ে ব্লু-হোয়েল মজিয়েছে প্রত্যন্ত এলাকার কিশোর, কিশোরীদেরও। রাজ্যের একের পর এক জেলায় হদিস মিলেছে ব্লু-হোয়েলে আক্রান্তের।

সে তালিকায় নাম উঠল ঝাড়গ্রামেরও। প্রত্যন্ত লোধাশুলি পঞ্চায়েতের গজাশিমূল হাইস্কুলের নয় নয় করে চার-পাঁচ জন ছাত্রছাত্রীর সন্ধান পেয়েছেন শিক্ষকরা। সকলেই স্বীকার করেছে তারা কোনও না কোনও ভাবে ওই গেম খেলেছে।

অমন প্রত্যন্ত এলাকায়, প্রান্তিক পরিবারের ছেলেমেয়েগুলি স্মার্ট ফোন পেল কোথায়? ইন্টারনেট সংযোগই বা দিল কে? উত্তরটা সোজা— আধুনিক হতে চাওয়া ভারতবর্ষে সস্তার ইন্টারনেট সর্বত্র। আর স্মার্ট ফোন? কেউ পেয়েছে তুতোদাদার কাছে, কেউ প্রতিবেশীর ঘরে।

মঙ্গলবার ওই স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকারা অন্য পড়ুয়াদের কাছে জানতে পারেন, সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির কয়েকজন পড়ুয়া ওই গেম খেলছে। সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত খবর জেনেই শিক্ষকরা তৎপরতা দেখান। বুধবার প্রার্থনার লাইনে চার ছাত্রের হাতে কাটাকুটি দাগ দেখেন তাঁরা। শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। সে সময় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র স্কুল থেকে পালিয়ে যায় বলেও জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষিকা মিনু বেরা।

বাকি তিন ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তারা কেউ গ্রামের বন্ধু বা আত্মীয়ের মোবাইল ফোনে ব্লু-হোয়েল খেলেছে দিন কয়েক আগে। প্রাথমিক স্তরে মনের জোর পরীক্ষার জন্য হাত কাটতে বলা হয়েছিল সেখানে। তাই তারা কেউ জ্যামিতি বাক্সের কম্পাস দিয়ে, কেউ বা ব্লেড দিয়ে হাত কেটেছে। কিন্তু কোথা থেকে ওই খেলা এল ফোনে, কে তাদের খেলতে বলল, কতদিন আগে শেষ খেলা হয়েছে কিছুই জানাতে পারেনি ওই ছাত্রেরা।

তবে তাদের কাছ থেকেই নবম শ্রেণির দুই ছাত্রীর খোঁজ পাওয়া যায়। জানা যায়, তারা কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেছে বাড়িতে। এ দিন স্কুলেও আসেনি ওই দুই ছাত্রী। স্থানীয় হাতিবারি ও দহতমূল গ্রামের ওই দুই ছাত্রীকে পরে শিক্ষকরা বাড়ি থেকে স্কুলে ডেকে নিয়ে আসেন। প্রধান শিক্ষিকার ঘরে কথা বলা হয় তাদের সঙ্গে।

সেখানেই ছাত্রীরা বলে, একজন প্রতিবেশীর এবং অন্যজন পিসতুতো দাদার মোবাইল গোপনে ব্যবহার করত। সেখানেই ওই খেলা খেলেছে তারা। দুই ছাত্রীই জানিয়েছে, তারা মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমনকী আত্মহত্যার ভাবনাও তাদের মাথায় রয়েছে। দুই নাবালিকাই প্রান্তিক চাষি ও দিনমজুর পরিবারের। তাদের অভিভাবকেরা এমন খেলার কথা কোনও দিন শোনেননি।

ওই দু’জনের বক্তব্য শুনে ঝাড়গ্রাম জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান প্রধান শিক্ষিকা। তিনি বলেন, ‘‘ওরা যা বলছে, তাতে অসংগতি রয়েছে। কিন্তু আমরা উদ্বিগ্ন। কোনও ঝুঁকি নিতে চাই না। প্রশাসন ও পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’পড়ুয়াদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ডাকা হবে সব পড়ুয়ার অভিভাবককে।

ঝাড়গ্রাম জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক সমর দাস বলেন, ‘‘স্কুলে মোবাইল আনতে নিষেধ করা হচ্ছে। এমনকী স্কুলের বাইরে কিছু ঘটলেও স্কুলকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিষয়টি জেনেছি। তদন্ত করা হবে। পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।’’

কিছুদিন আগেই বেলিয়াবেড়া ব্লকের পেটবিন্ধি হাইস্কুলের এক পড়ুয়ার হাতে মিলেছিল তিমির ছবি। সহপাঠীদের মাধ্যমে বিষয়টি স্কুলের নজরে আসায় ওই ছাত্রটিকে আটকানো গিয়েছিল। তবে প্রশাসনিক মহলের ধারণা, গোপনে বিভিন্ন স্কুল পড়ুয়া এই খেলায় যোগ দিচ্ছে। বেশিরভাগই কৌতূহল বশত খেলাটি খেলতে গিয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।

students Blue Whale
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy