E-Paper

ভেঙেছে সাঁকো, ঘরেই মারা গেলেন অসুস্থ

বেলপাহাড়ি ব্লক সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে সন্দাপাড়া পঞ্চায়েতের ডড়রা গ্রামে প্রায় ৪০টি পরিবারের বাস। তার মধ্যে রয়েছে প্রায় ২৫টি লোধা-শবর পরিবারও। গ্রামের ওই খালে বছরের অন্য সময়ে তেমন জল থাকে না, হেঁটে পারাপার করা যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৫১
ভেঙে গিয়েছে সাঁকো। খাল পেরিয়ে যাতায়াত।

ভেঙে গিয়েছে সাঁকো। খাল পেরিয়ে যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র।

খাল পেরিয়ে যাতায়াত গ্রামে। সেখানে সেতু নেই। টানা বৃষ্টিতে স্থানীয় উদ্যোগে তৈরি সাঁকোও ভেঙে গিয়েছে জলের তোড়ে। বেলপাহাড়ির অসুস্থ সুনীল শবরকে (৪০) তাই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সুযোগই পেলেন না তাঁরা, অভিযোগ পরিবারের সদস্যদের। শনিবার সন্ধ্যায় বাড়িতেই মৃত্যু হয় সুনীলের। জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার কী হাল, তা এই ঘটনায় পরিষ্কার, দাবি করছে বিরোধীরা।

বেলপাহাড়ি ব্লক সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে সন্দাপাড়া পঞ্চায়েতের ডড়রা গ্রামে প্রায় ৪০টি পরিবারের বাস। তার মধ্যে রয়েছে প্রায় ২৫টি লোধা-শবর পরিবারও। গ্রামের ওই খালে বছরের অন্য সময়ে তেমন জল থাকে না, হেঁটে পারাপার করা যায়। কিন্তু বর্ষায় তা সম্ভব হয় না। সে জন্য গ্রামবাসীরাই একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছিলেন। কিন্তু শনিবার সকালে জলের তোড়ে তা ভেসে যায়। তাতেই বিপাকে পড়ে সুনীলের পরিবার।

প্রশাসন সূত্রের খবর, জ্বর ও রক্তাল্পতায় ভোগা সুনীলের আগে চিকিৎসা হয়েছিল সরকারি হাসপাতাল ও ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজে। সুস্থ হয়ে বাড়িও ফেরেন। কিন্তু সম্প্রতি ফের অসুস্থ হন তিনি। তাঁর স্ত্রী মিনু শবর রবিবার বলেন, ‘‘সাঁকো ভেঙে গিয়েছে। এত জল পেরিয়ে কী করে স্বামীকে হাসপাতাল নিয়ে যাব? বাড়িতেই মৃত্যু হল। সেতু থাকলে এ ভাবে মরতে হত না!’’ দেহ সৎকার নিয়েও চিন্তায় তাঁরা। মিনুর কথায়, ‘‘বর্ষায় কাঠপালা কোথায় পাব? তাই মাটি খুঁড়ে চাপা দেব।’’

রাজ্য লোধা-শবর উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বলাইচন্দ্র নায়েকের দাবি, ‘‘অবিলম্বে সেতু দরকার। যোগাযোগ যদি না ঠিক থাকে, এ ধরনের ঘটনা ঘটবেই।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকারের অভিযোগ, ‘‘কেমন উন্নয়ন হয়েছে, এই ঘটনা তার জ্বলন্ত উদাহরণ। বেলপাহাড়ি যে এখনও অবহেলিত, তা আবার প্রমাণ হল। এলাকার জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি দেখা দরকার।’’

তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সান্ত্বনা হেমব্রম বলেন, ‘‘দেড় মাস আগে অসুস্থ হওয়ায় সুনীলকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল শুনেছিলাম। তবে মৃত্যুর খবর জানতাম না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘সেতুর জন্য অনেক বার বলেছি। না হলে কী করব? ওঁরা গামছা পরে খাল পারাপার করেন।’’ বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশ সিং সর্দার জানান, সেতুর জন্য টাকা প্রয়োজন। ব্লক থেকে তা সম্ভব নয়। জেলা স্তরে জানানো হয়েছে। তবে তিনি মানছেন, ‘‘আমাদের যোগাযোগের অভাব ছিল। তা না হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। আগামী দিনে এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য সজাগ থাকব।’’

বিডিও (বেলপাহাড়ি) সুমন ঘোষ বলেন, ‘‘সেতুর জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jhargram bridge collapse Heavy Rain

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy