আচমকাই দেখতে পেয়েছিলেন ডোরাকাটা ছানাটি। প্রথম দেখায় ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলেন। তবে ভয় পেয়ে আক্রমণের পথে যাননি তিনি। তাঁর এই সিদ্ধান্তে প্রাণে বেঁচেছে বাঘরোলের একটি ছানা। এক পরিবেশকর্মীর বাড়িতে ছানাটিকে দুধ খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তাপিন্দা মৌজায় বৃহস্পতিবারের ঘটনা। সকালে সায়ন দাস-সহ কয়েকজন যুবক ধান কাটছিলেন। ধান কাটার শেষ পর্যায়ে খেতের এক কোণে বাঘরোলের ছানাটিকে দেখে চিৎকার করে ওঠেন দুই যুবক। অন্য সঙ্গীরা ছুটে এসে ধানগাছ ফাঁকা করে ছানাটিকে দেখতে পান। গত বছর এই বাঘুইখালের পাড়ে বিশ্বনাথপুর জঙ্গলে শিকারিদের ফাঁদে একটি বাঘরোল ধরা পড়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে যুবকদের কয়েকজন সেটিকে বাঘরোলের ছানা বলে আন্দাজ করেন।
মোবাইলে ছবি তুলে এক যুবক স্থানীয় পরিবেশকর্মী সোমনাথ দাস অধিকারীরকে পাঠান। ছবি দেখে বাঘরোলের ছানা বলেই শনাক্ত করেন সোমনাথ। ধান খেত থেকে বাচ্চাটিকে অমরপুরে সোমনাথের বাড়িতে আনা হয়। উদ্ধারের দিন চোখ ফোটেনি বাচ্চাটির। শুক্রবার তার চোখ ফুটেছে। মা হারা বাচ্চাটিকে বাঁচাতে চেষ্টা করছেন পরিবেশকর্মীর ছেলে ও বৌমা। তাঁরা গরুর দুধ সংগ্রহ করে ড্রপারে পরম স্নেহে বাঘরোলের ছানাটিকে খাওয়াচ্ছেন। চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারিতে রাখছেন সোমনাথ।খাওয়ার পরেই মেঝেতে শুয়ে থাকছে ছোট্ট বাঘরোল বাচ্চাটি।
মাংসের লোভে শিকারিরা পটাশপুর এলাকায় বাঘরোল শিকার করে। লোকালয়ে ঢুকে পড়লে আতঙ্কে ওই জন্তুটিকে বাঘ মনে করে অনেকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন। তাপিন্দার যুবকেরা ছানাটির প্রাণ বাঁচানোয় সাধুবাদ জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁরা ভয় না পেয়ে পরিবেশকর্মীর পরামর্শ নেওয়ায় বেঁচে গেল অস্তিত্বের সঙ্কটে ভোগা একটি রাজ্যপ্রাণী। পটাশপুরের বাগুইখালের জলাভূমি এলাকায় কিছু বাঘরোলের আজও দেখা মেলে। তাপিন্দা মৌজায় জলাজমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। পরিবেশকর্মীদের ধারণা, বাচ্চা প্রসবের পরে জঙ্গলের পাশে ধান জমিতে মা বাঘরোল বাচ্চাদের রেখেছিল বলে অনুমান। বিড়াল পরিবারের সদস্য বাঘরোলেরও জন্মের সপ্তাহ দুয়েক পরে চোখ ফোটে। এই হিসেবে ধান জমিতে পাওয়া ছানাটিকে সপ্তাহ দুয়েকের বলে মনে করা হচ্ছে।
বাঘরোল ছানাটিকে উদ্ধারকারী সায়ন দাস বলেন, ‘'ধান কাটার শেষে ওই বাচ্চাটিকে দেখে ভয় পেয়ে যাই। পরে জানতে পারি বাঘরোল বাচ্চা। জীববৈচিত্র রক্ষায় এই প্রাণীদের গুরুত্ব অপরিহার্য। সেই সচেতনতা থেকে সোমনাথবাবুর পরামর্শে তাঁদের বাড়িতে বাচ্চাটিকে পৌঁছে দিয়েছি।’’
পটাশপুর-১ ব্লক জীববৈচিত্র কমিটির সম্পাদক সোমনাথ বলেন, ‘‘মোবাইলে ছবি দেখে বাঘরোল বাচ্চাটিকে শনাক্ত করি। সদ্যোজাত বাচ্চাটিকে দুধ খাইয়ে যত্ন নেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় তার মাকে খুঁজে পৌঁছে দেওয়া কঠিন কাজ। একটু বড় হলে তাকে সেই এলাকায় ছেড়ে
দেওয়া হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)