ছিনতাইকারীদের বাধা দেওয়ায় এক্সপ্রেস ট্রেনে থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হল এক মহিলা যাত্রীকে। রবিবার চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়া-পুরী ধৌলি এক্সপ্রেসে। আক্রান্ত মহিলা যাত্রী কলকাতার বাসিন্দা বলে খবর। তাঁর ডান হাতের অর্ধেক কাটা পড়েছে। কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। অন্য দিকে, দুই ছিনতাইকারীই ধরা পড়েছে স্থানীয়দের হাতে। তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার ধৌলি এক্সপ্রেসে ছিলেন কলকাতার বাসিন্দা সরমা হাজরা ও তাঁর স্বামী। তাঁরা হাওড়া থেকে ট্রেনে ওঠেন। খড়্গপুর স্টেশনে নেমে অন্য ট্রেন ধরে বিষ্ণুপুর যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের।
ধৌলি এক্সপ্রেস তখন পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের কাছে ভোগপুর স্টেশনের কাছাকাছি পৌঁছেছে। ওই সময়ে সরমার স্বামী ট্রেনের শৌচাগারে ছিলেন। মহিলাকে একা পেয়ে দুই ছিনতাইকারী তাঁর ব্যাগ ধরে টানাটানি শুরু করে। বাধা দিতে গেলে মহিলার গলার হার ছিনিয়ে নিতে যায় দু’জন। সর্বশক্তি দিয়ে দু’জনকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন মহিলা যাত্রীটি। তখন তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে ছিনতাইকারীরা।
ট্রেনের দরজায় সরমার ডান হাত আটকে যায়। ওই অবস্থায় বেশ কিছু ক্ষণ ঝুলতে থাকেন তিনি। এর পর হাতের প্রায় অর্ধেক কেটে গিয়ে রেললাইনে পড়ে যান। ওই সময়ে রেললাইনের ধারে জমিতে কৃষকেরা ধান কাটার কাজ করছিলেন। ছিলেন কিছু স্থানীয় যুবক। তাঁরা দৌড়ে গিয়েছিলেন। সকলের চিৎকার-চেঁচামেচিতে দুই ছিনতাইকারী ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তবে দু’জনকেই ধরে ফেলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুরু হয় মারধর। কিছু ক্ষণের মধ্যে সেখানে আরপিএফ উপস্থিত হয়। তারা গ্রামবাসীদের হাত থেকে উদ্ধার করে দুই অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নেয়।
আহত মহিলা যাত্রীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল খড়্গপুর রেলওয়ে হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকেরা জানান, সরমার ডান হাত মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। শেষ পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই মহিলা। তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। সরমার এক আত্মীয় বলেন, ‘‘দাদা-বৌদি বেহালা থেকে বিষ্ণুপুরে আসছিলেন। খড়্গপুর স্টেশনে নেমে তাঁদের বিষ্ণুপুরে যাওয়ার কথা ছিল। মেচেদা থেকে ভোগপুর স্টেশনের মাঝে ছিনতাইবাজদের খপ্পরে পড়েন তাঁরা। তার পর এই ঘটনা।’’
আরও পড়ুন:
পাঁশকুড়া জিআরপি থানার এসআই জিয়াউল হক জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পাঁশকুড়া জিআরপি থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। ধৃত দুই অভিযুক্তই হাওড়ার বাসিন্দা। বয়স ২২-২৩ বছর। সোমবার ধৃতদের তমলুক আদালতে হাজির করানো হবে। তিনি আরও জানান, আহত মহিলাকে দ্রুততার সঙ্গে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রেলের তরফে মহিলার চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু দিনের আলোয় এক্সপ্রেসে ট্রেনে এমন ঘটনায় যাত্রীসুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খড়্গপুর ডিভিশনের জিআরপির এসআরপি দেবশ্রী সান্যাল বলেন, ‘‘পাঁশকুড়া জিআরপির তরফে সামসাদ মহম্মদ এবং মহম্মদ ইমরান নামে দুই দুষ্কৃতীকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’’