গল্পের মতো হলেও সত্যি।
স্ত্রীর সঙ্গে এক শিক্ষকের বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তার জেরে বিবাহ বিচ্ছেদ। সে বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেনি দাসপুরের যুবক দিলীপ দাস। প্রতিশোধ নিতে হবে। পেশায় মিস্ত্রি দিলীপ ঠিক করেছিল, সে চোর হবে। স্ত্রীয়ের হৃদয় চুরি করেছে শিক্ষক। পেশাটার প্রতি জন্মেছিল ঘৃণা। তা থেকেই স্কুলে চুরি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দিলীপ। ঝাড়গ্রামের দু’টি স্কুলে চুরির ঘটনায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে সে। তাকে জেরা করেই তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বিচ্ছেদের পরে দিলীপ শুরু করে নতুন জীবন। এরই মধ্যে হয়ে গিয়েছে সেঞ্চুরি। পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়া, উত্তরবঙ্গ ও পার্শ্ববর্তী রাজ্য ওড়িশা মিলিয়ে একশোটিরও বেশি স্কুলে চুরি করেছে দিলীপ।
পুলিশ সূত্রের খবর, প্রতিশোধ স্পৃহা এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে সুপ্রিম কোর্টে নির্দেশে যেদিন চাকরি হারিয়েছিলেন শিক্ষকেরা, সে দিন মদ খেয়ে সারা রাত নেচেছিল দিলীপ। কিন্তু শুধুমাত্র প্রতিশোধের তাড়নায় চুরি? পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিশোধের পাশাপাশি একটা অঙ্কও কষেছিল দিলীপ। সে জানত, অন্য কোথাও চুরি করতে হলে অনেক বেশি ঝুঁকি নিতে হবে। তুলনায় স্কুলে চুরি সহজ। কারণ, অধিকাংশ স্কুলে নিরাপত্তারক্ষী থাকে না। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দিলীপ একাই চুরি করে। তার কোনও সঙ্গী নেই। স্কুলে হানা দেওয়ার জন্য মূলত শনিবারকেই বেছে নিত দিলীপ।কারণ, রবিবার স্কুল ছুটি। নিশ্চিন্তে অনেকটা সময় ধরে চুরিতে বাধা থাকত না। প্রথমেই সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক খুলে জলাশয়ে ফেলে দিত সে।
গত ২১ মার্চ লালগড় সারদামণি বালিকা বিদ্যালয় ও ৩০ মার্চ লালগড় থানার রামগড় মোক্ষদা সুন্দরী হাই স্কুলের দরজা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটেছিল। দু’টি স্কুল থেকেই নগদ টাকা চুরি হয়েছিল। এমনকি লালগড় সারদামনি বালিকা বিদ্যালয়ে সিসি ক্যামের হার্ডডিস্কও চুরি করে নিয়ে পালিয়েছিল। লালগড় এলাকায় চুরি করার আগে রেইকি করতে এসে দিলীপ ধরা পড়ে যায় পুলিশের জালে। বুধবার গভীর রাতে লালগড় থানার কাঁটাপাহাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশ থেকে দিলীপকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার লালগড় থানায় এসডিপিও শামিম বিশ্বাস ও লালগড় থানার আইসি সঞ্জীব ঘোষ সাংবাদিক বৈঠক করেন। এসডিপিও বলেন, ‘‘কাঁটাপাহাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেরায় স্বীকার করেছে বিভিন্ন স্কুলে চুরির কথা। জেলায় আরও কিছু স্কুলে চুরি করার পরিকল্পনা ছিল। তা আমরা ভেস্তে দিয়েছি। স্কুল চুরির আগে রেইকি করত।’’ ধৃতকে বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম আদালতে তোলা হলে বিচারক পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)