Advertisement
০৪ মে ২০২৪
চুলের চোরাকারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ
Visva Bharati University

বিশ্বভারতীর ছাত্র অপহরণে ধৃত তৃণমূল নেতা

বিদেশি ছাত্র অপহরণ কাণ্ডে গ্রেফতার ১২ জনের মধ্যে রয়েছেন ভগবানপুরের এক তৃণমূল নেতা সাহিল মহম্মদ। তাঁর বাবা মতিউল মহম্মদ এবং এক দাদাও এই ঘটনায় ধরা পড়েছেন।

An image of arrest

—প্রতীকী চিত্র।

গোপাল পাত্র
ভগবানপুর শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:০১
Share: Save:

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি ছাত্র অপহরণ কাণ্ডে গ্রেফতার ১২ জনের মধ্যে রয়েছেন ভগবানপুরের এক তৃণমূল নেতা সাহিল মহম্মদ। তাঁর বাবা মতিউল মহম্মদ এবং এক দাদাও এই ঘটনায় ধরা পড়েছেন।

ধৃত সাহিল মহম্মদ ব্লক তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সহ-সভাপতি (যদিও তৃণমূলের লেটার হেডে অবশ্য তাঁর নাম সাহির লেখা)। ভগবানপুর-১ ব্লক তৃণমূলে ২০২২ সাল থেকে তিনি ওই পদে রয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই লোকসভা ভোটের আগে বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপ কুমার দাস বলেছেন, ‘‘এই রাজ্যে দুষ্কৃতীরা শাসকদল তৃণমূলের আশ্রয় নিয়েছে। তৃণমূলের শাসনে এমন ঘটনা আগামীতে আরও ঘটবে।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, পরচুলার জন্য বেআইনি ভাবে বিদেশে চুল চোরাচালানের কারবার দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যের একাধিক জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। বীরভূমের বিশ্বভারতীতে পাঠরত মায়ানমারের এক ছাত্র এই কারবারের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে দাবি। পূর্ব মেদিনীপুরের সাহিল মহম্মদের সঙ্গে চুলের কারবারের সূত্রে তাঁর আলাপ। পুলিশ সূত্রের খবর, কারবারের টাকার ভাগ নিয়ে গোলমালের জেরে ওই ছাত্রকে অপহরণ করা হয়। পরে তালসারি থেকে পুলিশ ওই ছাত্রকে উদ্ধার করে। তাতেই ধরা পড়েন সাহিল। সাহিলের পরিবারের অবশ্য দাবি, অপহরণ ও বেআইনি ভাবে চুল পাচারের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ওই বিদেশি ছাত্র নিজের ইচ্ছায় সাহিল ও তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে দিঘা করে ওড়িশার তালসারিতে বেড়াতে গিয়েছিল।

সাহিলের কাকা আলি মহম্মদ বলেছেন, ‘‘সরকারি নিয়মে বিমানবন্দরে শুল্ক দিয়ে আমার ভাইপোরা বিদেশে পরচুলার কাঁচামাল রফতানি করে। ওই বিদেশি ছাত্রের সঙ্গে চুক্তি করে আইন মেনে চুল বিক্রি করেছিল তারা। কিন্তু ওই ছাত্র বকেয়া টাকা দিচ্ছিল না। টাকার হিসাব বোঝাতে বোলপুর থেকে স্বেচ্ছায় সে ভাইপোর সঙ্গে চণ্ডীপুরের অফিসে এসেছিল। সেখান থেকে ওরা সবাই মিলে দিঘা ও তালসারি ঘুরতে গিয়েছিল। অপহরণ ঘটেনি।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, ভগবানপুর থানার পশ্চিম সরবেড়িয়ার বাসিন্দা বছর চব্বিশের বি-টেক পড়ুয়া যুবক সাহিল মহম্মদ। ব্লক তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সহ সভাপতি পদে থাকলেও সাংগঠনিক কাজে তাঁকে খুব একটা দেখা যেত না বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। তবে বাজকুল কলেজে পড়াকালীন তিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। যদিও কাঁথি সাংগঠনিক তৃণমূলের জেলা সভাপতি তরুণ কুমার মাইতি বলেন, ‘‘দলীয় পদে থেকে কেউ যদি কোনও অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকেন তা হলে তার দায় দল নেবে না। পুলিশ আইন মেনে কাজ করবে।’’

এদিকে, পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে বাবা মতিউল মহম্মদ ও দাদা এনামূল মহম্মদের চুলের ব্যবসায় তিনি হাত পাকান। এঁরা পরচুলার প্রধান কাঁচামাল ‘গুটি চুল’ সরবরাহ করতেন। দুই ভাই ভগবানপুর ও চণ্ডীপুর থেকে চুল সংগ্রহ করে মায়ানমার ও বাংলাদেশে রফতানি করতেন। মাস ছ’য়েক আগেই বিশ্বভারতীর পড়ুয়া ওই মায়ানমারের ছাত্রের সঙ্গে দমদম বিমানবন্দরে সাহিলের পরিচয় হয়।

কিন্তু আচমকা বিমানবন্দরে কারও সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের পর কেন তাঁরা ব্যবসায় যুক্ত হবে, এই জায়গায় পুলিশের যথেষ্ট খটকা রয়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, মাস দেড়েক আগে এক টন চুল প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার চুক্তিতে মায়ানমারের ওই বিদেশি ছাত্রকে বিক্রি করেছিলেন সাহিল। মাল কেনার সময় বিদেশি ছাত্র ৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা দিয়েছিল বলে দাবি। ৫১ লক্ষ টাকা বাকি ছিল। সেই টাকা ওই ছাত্র মেটাতে চাইছিল না। টাকা উদ্ধারের জন্য গত সপ্তাহে সাহিলেরা দুই ভাই মিলে বোলপুরে গিয়েছিলেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর বোলপুর থেকে সাহিলের কালো রঙের গাড়িতে ওই বিদেশি ছাত্র পূর্ব মেদিনীপুরে সাহিলের অফিসে আসে। সেখানে চণ্ডীপুর ও হিংচাগেড়িয়া থেকে সাহিলদের আরও তিন বন্ধু আসে। সবাই মিলে গাড়িতে প্রথমে দিঘা তারপর তালসারি যান।

সাহলদের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে অবশ্য কাঁথি সাংগঠনিক জেলার তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি শেখ আনোয়ার উদ্দিনের কথায়, ‘‘ধৃত যুবক সংখ্যালঘু সেলের কোনও পদে রয়েছেন কিনা মনে নেই। খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখছি।’’ জেলার পুলিশ সুপারকে এ ব্যাপারে একাধিক বার ফোন করা হলে তিনি ফোন তোলেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Visva Bharati University tmc leader arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE