শিলাবতী নদীর বাঁধ কেটে এভাবেই তৈরি হচ্ছিল সুরঙ্গ। নিজস্ব চিত্র
সামনে থেকে দেখলে মনে হবে ছোট্ট কোনও গুহা। আসলে তা সুড়ঙ্গ। আনুমানিক ২৫ ফুট লম্বা ৫ ফুট চওড়া এই সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছে ঘাটালে শিলাবতী নদীবাঁধের নীচে।
একটি রেস্তরাঁর পাশে এই সুড়ঙ্গ ঘিরে রবিবার শোরগোল পড়েছে ঘাটাল শহরে। প্রশ্ন উঠছে যে এলাকা বানভাসি হয়, সেখানে কী ভাবে সকলের নজরদারি এড়িয়ে খোঁড়া হল এই সুড়ঙ্গ!
যে এলাকায় এই সুড়ঙ্গটি খোঁড়া হয়েছিল সেটি পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। জনবহুল এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ধারে চলছিল নির্মাণ। শনিবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে বিক্ষোভ দেখানোর পর। খবর পেয়ে পৌঁছয় পুলিশ। যদিও এ দিন বিকেল অবধি থানায় কোনও অভিযোগ হয়নি।
স্থানীয় সূত্রের খবর, কুশপাতায় অনুকূল আশ্রমের কাছাকাছি শিলাবতী নদীবাঁধের উপরে বহুদিন আগে থেকেই একটি রেস্তরাঁ ছিল। মাস কয়েক আগে সেটির মালিকানা বদল হয়। ওই রেস্তারাঁর নীচ দিয়ে খোঁড়া হচ্ছিল সুড়ঙ্গ। সামনের দিকে টিন দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। পেছনের দিকে বড় পুকুর রয়েছে।
এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সুড়ঙ্গের উপরে ছাদও ঢালাই হয়ে গিয়েছে। নদীবাঁধের অংশের দিকে ইটের দেওয়াল উঠেছে। বাঁধের যে অংশ মাটি কাটা হয়েছে, সেটি এমনিতেই দুর্বল। নদীর জল বাড়লেই ওই অংশ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। ফি বছর ওই অংশে রিং বাঁধ দেয় সেচ দফতর। নদীবাঁধের এমনই অংশে ভিতর দিয়ে বাঁধের মাটি কাটার ফলে ওই অংশের নদীবাঁধ কিছুটা বসে গিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়েরা। অভিযোগ প্রসঙ্গে হোটেলের ম্যানেজার গোপাল পাল বলেন, “সবাই বাঁধে বাড়ি করে। তাই নির্মাণ চলছিল। তবে এমনটা হবে বুঝতে পারিনি।”
নদীবাঁধে বাড়ি তৈরি বেআইনি। পুরসভাও অনুমোদন দিতে পারে না। কিন্তু সকলের চোখের সামনে দিনের পর দিন কী করে কাজ চলল? প্রকাশ্যে বাঁধের মাটি কেটে জড়ো করা হয়েছিল। অথচ ঘাটাল পুরসভা কিম্বা সেচ দফতর-কোনও পক্ষের নজরে এল না! ঘাটাল পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লক্ষ্মীকান্ত রায় মানলেন, “ঘটনাটি খুব অন্যায়। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” ঘাটালের সিপিএম নেতা উত্তম মণ্ডল জানান, “নদী বাঁধের সঙ্গে ঘাটালের স্বার্থ জড়িত। তাই পুর কর্তৃপক্ষ এবং সেচ দফতর দায়িত্ব এড়াতে পারে না।”
কী বলছে পুরসভা? সেচ দফতরেরই বা বক্তব্য কী?
ঘাটাল পুরসভার চেয়ারম্যান বিভাস ঘোষ বলেন, “পুরসভার তরফে কোনও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। নোটিস দিয়ে ওই রেস্টুরেন্ট মালিক ডেকে পাঠানো হবে। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বিষয়টি কানে গিয়েছে মহকুমা প্রশাসনেরও। মহকুমা সেচ আধিকারিক উত্তর হাজরার কথায়, ‘‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন হয়েছে। পুরোটিই বেআইনি নির্মাণ। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ মহকুমা শাসক অসীম পাল বলেন, “সেচ দফতর নিয়ম মেনে পদক্ষেপ করবে।”
ঘাটাল মানেই বন্যা। মাস্টারপ্ল্যান। বানভাসি হওয়ার আশঙ্কা। আর সেখানেই নদীবাঁধের নীচে খোঁড়া হচ্ছিল সুড়ঙ্গ।
সব শুনে কারও মনে পড়ছে কালিদাসের গল্প। কেউ বলছেন, অন্য গল্প আছে নিশ্চয়ই। নাকি এই ‘মাস্টারপ্ল্যানে’র নেপথ্যে আছেন কোনও ‘মাস্টারমাইন্ড’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy