E-Paper

অভাব, ফুটবল ছেড়ে টোটো চালাচ্ছেন আদিবাসী তরুণী

বছর ঊনত্রিশের কালীমণিকে পাওয়া গেল ছোট নাকদনা গ্রামের বাসতা পাড়ায় আলু খেতে। বিঘা দেড়েক জমিতে আলু চাষ করেছিলেন তাঁর দাদা-ভাইয়েরা।

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪ ০৯:১০
জিরাপাড়ার রাস্তায় কালীমণি।

জিরাপাড়ার রাস্তায় কালীমণি। নিজস্ব চিত্র ।

ছিলেন সম্ভবনাময় মহিলা ফুটবলার। সংসার চালাতে এখন তিনি ব্যস্ত টোটোচালক।

গোয়ালতোড়ের জিরাপাড়া অঞ্চলের ছোট নাকদনা গ্রামের বাসিন্দা কালীমণি মাণ্ডি কয়েক বছর আগেও চুটিয়ে ফুটবল খেলেছেন। অঞ্চল বা ব্লক স্তরের দলে তিনি ছিলেন 'অটোমেটিক চয়েস'। খেলতেন মাঝমাঠে। পেয়েছেন পুরস্কারও। এলাকার মেয়েদের নিয়ে ফুটবল দলও তৈরি করেছিলেন। তবে খেলে সংসার চলছিল না। তাই বছর দেড়েক আগে কিস্তিতে টোটো কেনেন।জিরাপাড়া থেকে গোয়ালতোড় পর্যন্ত রাস্তায় টোটো চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তাঁদের ১৩ জনের সংসার। শুক্রবার, নারী দিবসের দিনেও তার ব্যতিক্রম হল না।

বছর ঊনত্রিশের কালীমণিকে পাওয়া গেল ছোট নাকদনা গ্রামের বাসতা পাড়ায় আলু খেতে। বিঘা দেড়েক জমিতে আলু চাষ করেছিলেন তাঁর দাদা-ভাইয়েরা। কয়েকদিন ধরে সেই আলু তোলার কাজ চলছে। দাদা, ভাই, বোন, বৌদিদের সঙ্গে কালীমণিও সেই কাজ করছেন। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরে খেত থেকে উঠে এসে তিনি বললেন, "মেঘলা আবহাওয়া। বৃষ্টি হলে আলুর ক্ষতি হবে। তাই তাড়াতাড়ি আলু তুলে নিচ্ছি। তাই এই ক'দিন টোটো নিয়ে বেরোতে বেলা হচ্ছে।" তাঁর কথায়, ‘‘বাবা মারা যাওয়ার পরে সংসারে অভাব বাড়ে। পড়াশোনা বেশিদূর হয়নি। বছর দেড়েক আগে কিস্তিতে টোটো কিনে চালাতে শুরু করি। মূলত টোটোর আয় থেকেই সংসার চলে। এক ফসলি জমিতে যা চাষ হয় তাও সংসারে কাজে লাগে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা পাই। সম্প্রতি একশো দিনের বকেয়া টাকাও পেয়েছি। সেসবও সংসারে দিয়ে দিই।’’ ফুটবল ছাড়লেন কেন? আদিবাসী তরুণীর আক্ষেপ, ‘‘খেললে কি আর সংসার চলবে! একশো দিনের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে খুবই সমস্যা হচ্ছিল। তাই টোটো চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই।"

প্রতিযোগিতামূলক খেলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেও ফুটবলের সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ আছে কালীমণির। নিজের হাতে মেয়েদের যে দল গড়েছিলেন, তা আছে। সময় পেলে সেই দলের সঙ্গে অনুশীলন করেন। পরামর্শ দেন। টোটো চালানোর মতো পেশাতেও নিজের জায়গা তৈরি করে ফেলেছেন তিনি। কারণ গভীর রাত হোক বা একদম সকাল—এক ফোনেই দুয়ারে টোটো নিয়ে হাজির হয়ে যান তিনি। প্রতিবেশী কৃষ্ণ হেমব্রম, দুলি হেমব্রম বা স্থানীয় বাসিন্দা পিনাকী ঘোষরা মানছেন, ‘‘কালীমণির টোটো আছে বলে এলাকার মানুষের বহু সুবিধা হয়েছে। ভোর হোক বা রাত— ডাকলেই পাওয়া যায়।"

এখানেই শেষ নয়। গোয়ালতোড় ব্লক এলাকায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মহিলাদের মধ্যে কালীমণিই প্রথম, যিনি টোটো চালাচ্ছেন। বাধা আসেনি? তাঁর উত্তর, ‘‘বাড়ির মতোই আমাদের সমাজের অনেকেই এই কাজে আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Adivasis

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy