বৃহস্পতিবার দুপুরে এই গাড়িতেই নির্মাণ সহায়ককে অপহরণের চেষ্টা হয়েছিল। গাড়িটি আটক করেছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
একেবারে যেন সিনেমার দৃশ্য!
বৃহস্পতিবার দুপুরে বেলপাহাড়ি বিডিও অফিস চত্বর থেকে পঞ্চায়েতের এক নির্মাণ সহায়ককে মারধর করে অপহরণের চেষ্টা হল। তবে উপস্থিত সরকারি কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতায় রক্ষা পেয়েছেন তিনি। অভিযোগ, তৃণমূলের এক অঞ্চল সভাপতি ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোরাই অপহরণ করতে এসেছিলেন। অপহরণে ব্যবহৃত গাড়িটিকে আটক করে চালককে গ্রেফতার করেছে বেলপাহাড়ি থানার পুলিশ। তবে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি-সহ মূল অভিযুক্তরা পলাতক। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে দু'টো নাগাদ ওই কাণ্ডের সময় উপস্থিত ছিলেন বেলপাহাড়ি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি চিন্ময় মাহাতো ওরফে বুবাইও।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান-সহ সব পঞ্চায়েত কর্মীরা ব্লক অফিসে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছিলেন। প্রশিক্ষণ শেষে ব্লক অফিসের ক্যান্টিনে খাওয়াদাওয়া সেরে সবে বেরিয়েছিলেন ভুলাভেদা পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক সুজিত ধল। অভিযোগ। আচমকা ব্লক অফিস চত্বরে গাড়ি নিয়ে হাজির হন ভুলাভেদা অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি নিখিল সিং, তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ ঠিকাদার শিশির সিং-সহ জনা পাঁচেক। সুজিতকে নাগালে পেয়ে টেন্ডার সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে প্রশ্ন তুলে বেধড়ক মারধর শুরু হয়। পরে সুজিতকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তোলা হয়। সুজিতের চিৎকারে ছুটে আসেন ব্লক অফিসের কর্মীরা। গাড়িটি বেরনোর আগেই ব্লক অফিস চত্বরের মূল দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। উল্টোদিকে থাকা বেলপাহাড়ি থানার পুলিশও চলে আসে।
ততক্ষণে অবশ্য সুজিতকে ফেলে গাড়ি নিয়ে চম্পট দেয় অভিযুক্তরা। ধরা পড়ে যান গাড়ির চালক। ধৃত চালক নির্মল সরেনের বাড়ি স্থানীয় বাঁকশোলে। এসডিপিও (বেলপাহাড়ি) উত্তম গরাঁই বলেন, ‘‘নির্মাণ সহায়কের অভিযোগের ভিত্তিতে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজা হচ্ছে।’’
পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রের খবর, ভুলাভেদা পঞ্চায়েতে টেন্ডার পাওয়া নিয়ে ওই নির্মাণ সহায়ককে বার বার চাপ দেওয়া হচ্ছিল। ভুলাভেদা পঞ্চায়েতের প্রধান জ্যোৎস্না সাউ বলেন, ‘‘এ দিন আমিও ব্লক অফিসে গিয়েছিলাম। প্রশিক্ষণ শেষেই বাড়ি ফিরে যাই। তারপর হামলা হয়েছে বলে শুনেছি।’’ জ্যোৎস্না জানান, পঞ্চায়েতে কিছু কাজের জন্য ই-টেন্ডার ডাকা হয়েছে। সূত্রের খবর, ব্লক সভাপতি চিন্ময় মাহাতো ও অঞ্চল সভাপতি নিখিল সিংয়ের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদাররা ই-টেন্ডারে কাজ ধরতে পারছিলেন না। তাই টেন্ডার বাতিল করার জন্য নির্মাণ সহায়ককে চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ। ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘নির্মাণ সহায়ক অনৈতিক কাজে রাজি হননি বলেই তাঁকে মারধর করে অপহরণের চেষ্টা হয়।’’
ওই নির্মাণ সহায়কের অভিযোগের ভিত্তিতে মারধর, খুন ও অপহরণের চেষ্টার অভিযোগে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তবে অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি নিখিল সিং, ঠিকাদার শিশির সিং-সহ চার মূল অভিযুক্তই পলাতক। নিখিলের ফোন বন্ধ ছিল। আর ব্লক তৃণমূল সভাপতি চিন্ময় মাহাতোর দাবি, ‘‘গোলমালের খবর পেয়ে আমি ব্লক অফিসে গিয়ে দেখি মূল দরজা বন্ধ। কী ব্যাপারে গোলমাল বলতে পারব না। আর এলাকায় সবাই তৃণমূলের লোক। কী ঘটেছে খোঁজ নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy