Advertisement
E-Paper

ছেলের খোঁজে ৩০ বছর পথে পথে ঘুরছেন বৃদ্ধ

পরীক্ষায় ফেল করে নিখোঁজ হয়েছিল ছেলে। পরের কয়েক সপ্তাহ ছেলের খোঁজে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব—সকলের বাড়িতে হন্যে হয়ে ঘুরলেও ছেলের খোঁজ পাননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪৫
ছেলের খোঁজ পেতে পথে বৃদ্ধ সন্তোষ কুমার মাইতি। নিজস্ব চিত্র

ছেলের খোঁজ পেতে পথে বৃদ্ধ সন্তোষ কুমার মাইতি। নিজস্ব চিত্র

পরীক্ষায় ফেল করে নিখোঁজ হয়েছিল ছেলে। পরের কয়েক সপ্তাহ ছেলের খোঁজে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব—সকলের বাড়িতে হন্যে হয়ে ঘুরলেও ছেলের খোঁজ পাননি। উপায়ান্তর না দেখে পুলিশের দ্বারস্থও হয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও লাভ না হওয়ায় আজও ছেলের খোঁজে পথে পথে ঘুরছেন ৯০ বছরের বৃদ্ধ সন্তোষ কুমার মাইতি। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। কানেও ঠিকমতো শুনতে পান না। অশক্ত পায়ের ভরসা লাঠি। তবু মৃত্যুর আগে যদি ছেলের মুখ দেখতে পান, এই আশায় থেমে নেই তাঁর অনুসন্ধান।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ভুপতিনগর থানার বায়েন্দা গ্রামের বাসিন্দা সন্তোষবাবুর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলের নাম কৃষ্ণানন্দ আর ছোট ছেলের নাম দয়ানন্দ। সুভাষপল্লি হাইস্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ত দয়ানন্দ। ১৯৮৯ সালের ২ জানুয়ারি, স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার ফল বেরোলে দেখা যায় দয়ানন্দ ফেল করেছে। বছর সতেরোর দয়ানন্দ সেদিনের পর স্কুল থেকে আজ পর্যন্ত আর বাড়ি ফেরেনি। সপ্তাহ দুয়েক এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজির পর ২০ জানুয়ারি ভূপতিনগর থানায় ছেলে নিখোঁজের ভিযোগ জানিয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষক সন্তোষবাবু।

১৯৯৩ সালে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেওয়ার পর থেকে ছেলের খোঁজ পেতে হন্যে হয়ে ঘুরছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বার বার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি। কিন্তু তারা কোনও সাহায্যই করেননি।’’

আরও পড়ুন: রবার্ট বঢরাকে ইডি-র জেরা ছ’ঘণ্টা, স্বামীর পাশে আছি, বললেন প্রিয়ঙ্কা

জানালেন, ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে বড় ছেলেকে নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা হয়নি। বিষয়টি তাঁর নজরে আনার জন্য ছেলের নিখোঁজ সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র মুখ্যমন্ত্রীর স্থানীয় দফতরে জমা দিয়ে এসেছিলেন। কলকাতায় ভবানীভবনেও বহুবার ছেলের খোঁজে এসেছেন। সিআইডির কথা শুনে ২০০৬ সালের ২৭ এপ্রিল ভবানীভবনে নতুন করে অভিযোগও দায়ের করেন। দ্বারস্থ হয়েছেন লালবাজারেরও। কিন্তু আজও ছেলের নিখোঁজ রহস্যের কোনও কিনারা হয়নি। কাঁথি আদালতের আইনজীবী বিশ্বজিৎ সিংহ বলেন, “গত ৫ বছর ধরে সন্তোষবাবুকে এই বৃদ্ধ বয়সেও আদালত চত্বরে ঘোরাঘুরি করতে দেখে আসছি। ছেলের জন্য বিভিন্ন জায়গায় বসে চোখের জল ফেলেন।’’ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’

আরও পড়ুন: লড়াই এ বার রাজধানীতে, বিজেপিকে উৎখাত করতে বিরোধী সমাবেশে দিল্লি যাচ্ছেন মমতা​

বড় ছেলে কৃষ্ণানন্দ মাইতি বলেন, “ভাই নিখোঁজ হওয়ার বছর দুয়েক পর প্রতিবেশীদের কয়েকজন জানিয়েছিলেন কলকাতার শিয়ালদহ, ধর্মতলা ও বৌবাজার এলাকায় তাঁরা ভাইকে দেখেছেন। কিন্তু আজও ভাইয়ের খোঁজ পাইনি।’’ তবে মাইতি পরিবারের লোকজন জানান, কয়েক বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দফতর থেকে একটা চিঠি এসেছিল। তাতে জানানো হয়েছিল, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

আজও ওই চিঠির ভরসাতেই ছেলে ফিরে পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন সন্তোষবাবু।

Missing Person Emotional Contai
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy