Advertisement
E-Paper

কটকে মারা গেলেন সেই আশাকর্মী

গত ২০ অক্টোবর থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি ছিলেন জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত শঙ্করী। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গত ১৪ নভেম্বর ছুটি তাঁকে দিয়ে দেন চিকিৎসকেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২০

জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার পরে স্বামী-শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন গুণিনেন কাছে। কিন্তু রোগাক্রান্ত যুবতী নিজে আশাকর্মী হওয়ায় গোটা ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায়। জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা তৎপর হয়ে ওই আশাকর্মীকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসার পরে বাড়িও ফিরে যান ওই যুবতী। তবে শেষ রক্ষা হল না। ওডিশার কটকের এক নার্সিংহোমে বুধবার মারা গেলেন শঙ্করী বেরা (৩০) নামে ওই আশাকর্মী। মৃত্যুর শংসাপত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার উল্লেখ করেছেন চিকিৎসকেরা।

গত ২০ অক্টোবর থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি ছিলেন জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত শঙ্করী। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গত ১৪ নভেম্বর ছুটি তাঁকে দিয়ে দেন চিকিৎসকেরা। তবে শরীরের বিভিন্ন অংশ অসাড় হয়ে পড়েছিল। তাই স্নায়ুর চিকিৎসার জন্য গত ১৭ নভেম্বর কটকের কণিকাচকের এক নার্সিংহোমে তাঁকে ভর্তি করান পরিজনেরা। সেখানেও চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন শঙ্করী। তবে বুধবার সকালে অবস্থার অবনতি হয়। আর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগড়ের মকরামপুরে তাঁর অন্ত্যেষ্টি মিটেছে।

প্রায় এক মাসের লড়াইয়ের পরেও শঙ্করীর মৃত্যু মানতে পারছেন না তাঁর সহকর্মী ও গ্রামবাসীরা। পরিবারও শোকস্তব্ধ। ১৯ নভেম্বর জ্বর নিয়ে শঙ্করী যখন মকরামপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হয়েছিলেন, তখনও তাঁর এমন পরিণতির কথা ভাবতে পারেনি সহকর্মীরা। তবে ক্রমে অবস্থার অবনতি হয়। ২০ নভেম্বর তাঁকে ভর্তি করানো হয় মেদিনীপুর মেডিক্যালে। কিন্তু সেখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁকে সবংয়ের তেমাথানিতে এক গুণিনের কাছে নিয়ে যান।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হয় ওই আশাকর্মীর। দীর্ঘদিন আইসিইউতে রেখে চিকিৎসার পরে তাঁর অবস্থার উন্নতি হয়। সাধারণ শয্যায় আনা হয় শঙ্করীকে। এর পরে গত ১৪ নভেম্বর ফিজিওথেরাপির পরামর্শ দিয়ে ছুটি দেওয়া হয় শঙ্করীকে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা মশা বাহিত রোগের নোডাল অফিসার রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “আমরাই বুঝিয়ে শঙ্করীকে এনে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করেছিলাম। এনসেফ্যালাইটিস ধরা পড়ায় চিকিৎসাও চলছিল। সুস্থ হওয়ায় চিকিৎসকেরা ছুটি দিয়ে দিয়েছিলেন। তবে বিভিন্ন অঙ্গ অসাড় হয়ে থাকায় ফিজিওথেরাপি করতে বলা হয়েছিল।”

স্নায়বিক দুর্বলতা কাটাতেই শঙ্করীকে কটকে নিয়ে যান পরিজনেরা। গত ১৭ নভেম্বর তাঁকে কটকের এক নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু বুধবার সকাল থেকে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। দুপুরে মারা যান ওই আশাকর্মী। তাঁর স্বামী দীপক বেরা বলছিলেন, “এক মাস ধরে লড়াই করেও স্ত্রীকে বাঁচাতে পারলাম না। উন্নত চিকিৎসার জন্যই কটকে গিয়েছিলাম।”

বুধবার রাতেই মকরামপুরের অভিরামপুরের বাড়িতে পৌঁয় শঙ্করীর দেহ। মকরামপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আশাকর্মীদের ইন-চার্জ ইভা ঘোড়াই বলছিলেন, “বাঁচার জন্য অনেক লড়াই করল শঙ্করী। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাও শেষ পর্যন্ত ওকে বাঁচানো গেল। আমরা হতাশ।” এ প্রসঙ্গে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার মন্তব্য, “এনসেফ্যালাইটিস সেরে যাওয়ায় ছুটি দেওয়া হয়েছিল ওই আশাকর্মীকে। তারপর ওঁর পরিবারের লোকেরা কটক নিয়ে গিয়েছিল বলে শুনছি। খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।”

Asha Worker Cuttack
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy