আদালতের পথে।—নিজস্ব চিত্র।
হলদিয়ার চৈতন্যপুরে অটোচালক হিসেবে তাঁকে দেখা যেত। সেখান থেকে একটি বেসরকারি লগ্নি সংস্থার শীর্ষকর্তা পদে বসেছিলেন নিরাপদ মাইতি আমানতকারীদের কাছ থেকে প্রচুর টাকা সংগ্রহের পর প্রতারণার অভিযোগে দিঘার একটি হোটেল থেকে ধৃত নিরাপদ মাইতি বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা ইউনাইটেড মেডিসিন অ্যান্ড সারজিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন বলে পুলিশের দাবি। গত রবিবার দিঘায় তমলুক থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া নিরাপদবাবুকে মঙ্গলবার তমলুক মহকুমা আদালতে তোলা হলে ৮ দিনের পুলিশ হেফজাতের নির্দেশ হয়।
নিরাপদবাবুর গ্রেফতারের খবর পেয়ে এদিন পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়াও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ডায়মন্ডহারবার, বজবজ, মগরাহাট, জয়নগর প্রভৃতি এলাকা থেকে ওই সংস্থার এজেন্ট ও আমানতকারী কয়েক’শ তমলুক আদালত চত্বরে এসেছিলেন। তাঁরা আদালত চত্বরে জড়ো হয়ে নিরাপদর বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে শাস্তির দাবি জানায়। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সাতগাছিয়া এলাকার মহামায়াপুর গ্রামের বাসিন্দা শম্ভু কর্মকার বলেন, ‘‘আমি নিরাপদবাবুর সংস্থার এজেন্ট হিসেবে কাজ করে সংস্থার বজবজ শাখায় ১৪ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছিলাম । কিন্তু আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার আগেই সংস্থার অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।’’ বিষ্ণুপুর থানার গাজিপুর গ্রামের বাসিন্দা সুফিয়া বিবির অভিযোগ, ‘‘নিরাপদবাবুর সংস্থার এজেন্ট হিসেবে এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা তুলে বজবজ শাখায় জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমানতকারীদের ওই টাকা ফেরত দেওয়ার আগেই সংস্থার অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমানতকারীদের চাপে আমরা বাড়িতে থাকতে পারছি না।’’ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সরিষা এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ ইয়াসিন মোল্লা এ দিন বলেন, ‘‘আমি ওই সংস্থার এজেন্ট ও আমানতকারী হিসেবে সংস্থার ডায়মন্ডহারবার শাখায় ৮ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু ওই টাকা ফেরত পাইনি।’’
নিরাপদবাবুর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ। তমলুকে তোলা নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে , হলদিয়ার চৈতন্যপুর এলাকার বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের নিরাপদ মাইতি এক সময় হলদিয়ার চৈতন্যপুরে অটো চালাতেন। ১৯৯৩ সালে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে সুতাহাটা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হয়েছিলেন। এরপর বেসরকারি লগ্নি সংস্থার হয়ে কাজ করেছিলেন নিরাপদ। পরবর্তী সময়ে নিজের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নিয়ে বেসরকারি লগ্নি সংস্থা ইউনাটেড গ্রুপ গড়েন। ওই গ্রুপের অধীনে ইউনাইটেড মেডিসিন অ্যান্ড সারজিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন নিরাপদ মাইতি। কলকাতার লেনিন সরণিতে ওই বেসরকারি লগ্নি সংস্থায় নিরাপদবাবুই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে সংস্থার অনেক এজেন্ট দাবি করেন।
এমনকি ওই বেসরকারি লগ্নি সংস্থার তরফে ২০১২ সালের জুলাই মাসে মালদহে ভেন কেয়ার ডেন্টাল অ্যান্ড আই হসপিটাল একটি দাঁত ও চক্ষু হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিরাপদবাবু সহ সংস্থার অন্য কর্তাদের পাশাপাশি অভিনেত্রী তথা রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায় ও প্রাক্তন ফুটবলার তথা কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই নামের কাউকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। অনুরোধে অনেক অনুষ্ঠানেই যাই। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই গিয়েছিলাম।’’ এ বিষয়ে বারবার দেবশ্রী রায়কে ফোন করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy