Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ঘোর আর কাটল না অসুস্থ রবির

চিরঘুমের দেশে চলে গেল রবি। সোমবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানায় মারা গেল নতুন অতিথি শাবক হাতিটি। প্রাথমিক ভাবে প্রাণী চিকিৎসকদের সন্দেহ, মাথায় ক্ষত থাকলেও হাতিটির শরীরের অভ্যন্তরে কোনও সমস্যা ছিল। ময়না তদন্তের পরেই এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

তখনও বেঁচে রবি। —নিজস্ব চিত্র।

তখনও বেঁচে রবি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ০০:১৯
Share: Save:

চিরঘুমের দেশে চলে গেল রবি।

সোমবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানায় মারা গেল নতুন অতিথি শাবক হাতিটি। প্রাথমিক ভাবে প্রাণী চিকিৎসকদের সন্দেহ, মাথায় ক্ষত থাকলেও হাতিটির শরীরের অভ্যন্তরে কোনও সমস্যা ছিল। ময়না তদন্তের পরেই এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

রবিবার লালগড় রেঞ্জের বাঁশবেড়ের জঙ্গল থেকে বছর চারেকের অসুস্থ বাচ্চা পুরুষ হাতিটিকে উদ্ধার করেন বনকর্মীরা। হাতিটির মাথায় আঘাত ছিল। ঘুম পাড়ানি ওষুধে হাতিটিকে অজ্ঞান করা হয়। তারপর প্রাথমিক চিকিৎসার পরে হাতিটিকে ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসা হয়। চিড়িয়াখানায় পৌঁছে রবিবার রাতে জ্ঞান ফেরেনি হাতিটির।

রবিবারের অতিথি। তাই আদর করে চিড়িয়াখানার কর্মীরা হাতিটিকে ‘রবি’ নামে ডাকতে থাকেন। চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, রবিবার রাতে নবাগত রবিকে ৯ বোতল স্যালাইন দেওয়া হয়। সারারাত চিকিৎসক ও চিড়িয়াখানার কর্মীরা হাতিটির শুশ্রূষা করেন। সোমবার সকালে আরও চার বোতল স্যালাইন দেওয়ার পর শালবল্লির ঘেরাটোপের ভিতর কিছুক্ষণের জন্য উঠে দাঁড়িয়েছিল হাতিটি। ওই সময় কিছুটা কলাপাতা ও বটপাতাও খায় সে। তারপর দুপুরে ফের সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে। বিকেলে আচ্ছন্ন অবস্থায় হাতিটির শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। চিকিৎসক সজলকুমার দত্ত হাতিটিকে ফের স্যালাইন এবং ওষুধ-ইঞ্জেকসন দেন। সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টা নাগাদ হাতিটির হৃদস্পন্দন স্তব্ধ হয়ে যায়।

রবিবার বিকেল থেকে নাগাড়ে জখম হাতিটির শুশ্রূষা করছিলেন চিড়িয়াখানার কর্মী সাহেবরাম মুর্মু, শিবু মাহাতো, বিমল মুর্মু, মিঠু মাহাতোরা। রবির শারীরিক অবস্থা নিয়ে তাঁদের উদ্বেগের অন্ত ছিল না। রবির মৃত্যুর পরে ছল ছল চোখে তাঁরা জানালেন, “মাত্র এক দিনেই বড্ড মায়া পড়ে গিয়েছিল। সকালে টলমল পায়ে দাঁড়িয়ে আমাদের হাত থেকে খেয়েছিল হাতিটি।”

শালবল্লির যে ঘেরাটোপে রবিকে রাখা হয়েছিল, সেটি আসলে চিড়িয়াখানার পুরনো আবাসিক ফাল্গুনীর থাকার জায়গা। গত ফেব্রুয়ারিতে বাঁকুড়ার বড়জোড়া থেকে দলছুট পুরুষ শাবক ফাল্গুনীকে উদ্ধার করা হয়েছিল। ফাল্গুন মাসের অতিথি হওয়ায় চিড়িয়াখানা-কর্তৃপক্ষ নাম দেন ‘ফাল্গুনী’। চিড়িয়াখানার কর্মীরা জানালেন, ফাল্গুনী এখন একেবারে পুষ্যি হয়ে গিয়েছে। ফলে, তাকে নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে চিড়িয়াখানার ভিতরে মুক্ত পরিবেশে কর্মীদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায় ফাল্গুনী। আশা ছিল, রবি সুস্থ হলে ফাল্গুনিী তাকে বন্ধু হিসেবে পেত। অসুস্থ রবিকে দুর থেকে দেখে সারা দিনই হাঁকডাক করেছিল ফাল্গুনি। রবির মৃত্যুর পরে সেও থম মেরে গিয়েছে।

ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হোলেইচ্চি বলেন, “অসুস্থ হাতিটির মৃত্যু হয়েছে। উদ্ধারের সময় হাতিটির মাথায় পুরনো ক্ষত ছিল। ময়নাতদন্তের পরে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করে বলা যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE