Advertisement
E-Paper

তমলুকে স্বস্তি তৃণমূলে

পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার সুতাহাটা, নন্দীগ্রাম-১ ও তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ও পাঁশকুড়া ব্লকের বিডিও অফিসের সামনে বিরোধীদের উপর আক্রমণ নিয়ে সরব হয়েছিল বামফ্রন্ট, বিজেপি, কংগ্রেস।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৮ ০২:০৭
তল্লাশি চলছে পথচলতি গাড়িতেও। সোমবার ছবি তুলেছেন পার্থপ্রতিম দাস।

তল্লাশি চলছে পথচলতি গাড়িতেও। সোমবার ছবি তুলেছেন পার্থপ্রতিম দাস।

পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গিয়ে বিডিও অফিসের সামনে শাসক দলের লোকজনের হাতে বিরোধী দলের লোকজনের আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ ছিল আগেই।

পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার সুতাহাটা, নন্দীগ্রাম-১ ও তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ও পাঁশকুড়া ব্লকের বিডিও অফিসের সামনে বিরোধীদের উপর আক্রমণ নিয়ে সরব হয়েছিল বামফ্রন্ট, বিজেপি, কংগ্রেস। যার প্রেক্ষিতে মহকুমা শাসকের অফিসে মনোনয়ন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শনিবার পাঁশকুড়া ও শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ আসনের বাম ও বিজেপি প্রার্থীরা দলবেঁধে তমলুকের মহকুমা শাসক অফিসে এসে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন।

কিন্তু সোমবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনে খোদ জেলা প্রশাসনিক অফিসের কার্যালয় ও অফিসের সামনে রাস্তার নিয়ন্ত্রণ চলে যায় শাসকদলের কর্মীদের হাতে। এদিন সকাল থেকেই তমলুক শহরে জেলা প্রশাসনিক অফিসের সামনে হলদিয়া–মেচেদা রাজ্য সড়ক আটকে তল্লাশি অভিযান শুরু করে তৃণমূলের লোকজন। তল্লাশি অভিযানের সময় পুলিশের সামনেই জেলাশাসকের অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে আসা বামফ্রন্ট, বিজেপি ও কংগ্রেস প্রার্থী-কর্মীদের আটকে মারধর, নথিপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তল্লাশির হাত থেকে রেহাই মেলেনি তমলুক শহরে চিকিৎসা করাতে আসা রোগী ও তাঁদের পরিজনদেরও। শাসক দলের বাধ্য কর্মীদের দাপট থেকে ‘বাঁচতে’ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন পর্যন্ত দেখাতে হয়েছে বলে জানিয়ছেন অনেক রোগীর বাড়ির লোকেরা। এমনকী রেহাই মেলেনি জেলাশাসকরে দফতরের কর্মীদেরও। দফতরে ঢুকতে গেলে তাঁদেরও তৃণমূল বাহিনীর প্রশ্ন, তল্লাশির মুখে পড়তে হয়েছে। তারপরেই ছাড় মিলিছে।

এদিন সকাল ৬ টা থেকে জেলাশাসকের অফিসের সামনে শিবির করে তৃণমূলের কয়েক’শো কর্মী-সমর্থকদের জমায়েতের পাশাপাশি তাদের তালে তাল মেলানোর অভিযোগ উঠেছে তমলুক থানা-সহ জেলা পুলিশের বিরুদ্ধেও। বিরোধীদের অভিযোগ, পুলিশের সামনেই রাস্তায় তৃণমূলের তল্লাশি অভিযান চললেও নীরব দর্শক হয়েই দাঁড়িয়ে থেকেছে পুলিশ।

এদিন সকালে জেলাশাসকের অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে এসেছিলেন পাঁশকুড়ার ঘোষপুর পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রার্থী বাহার আলি, সানোয়ার আলি। বাহারের অভিযোগ, ‘‘ট্যাক্সিতে চেপে আমরা সকাল সাড়ে ৯ টা নাগাদ জেলাশাসকের অফিসের সামনে পৌঁছলে একদল তৃণমূলের লোক ছুটে এসে জানতে চান কী করতে এসেছি। কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেব শুনেই হুমকি দিয়ে চলে যেতে বলে। শুধু তাই নয়, আমার ব্যাগ থেকে ভোটার কার্ড, আধারকার্ড, ব্যাঙ্কের পাশবই বের করে নিয়ে খালি ব্যাগ ফেরত দেয়। কাছেই পুলিশ থাকলেও কোনও সাহায্য করেনি।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির অভিযোগ, ‘‘জেলাশাসকের অফিসের ভিতরে তৃণমূলের লোকজন জমায়েত করে আমাদের প্রার্থীদের মনোনয়নে বাধা দিয়েছে। পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি।’’ এদিন পাঁশকুড়া, ময়না, কোলাঘাট থেকে মনোনয়ন জমা দিতে আসা কংগ্রেস প্রার্থীরা বাধা পাওয়ার পরে জেলা পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে অবস্থানে বসেন। জেলা পুলিশ সুপারের কাছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মনোনয়ন জমায় বাধার অভিযোগ জানিয়ে নিরাপত্তা চান। জেলা কংগ্রেস সভাপতি আনোয়ার আলি বলেন, ‘‘পুলিশ সুপারের কাছে সাহায্য চেয়েও মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য নিরাপত্তা পাওয়া যায়নি।’’ প্রার্থীদের মনোনয়নে বাধা পাওয়ার অভিযোগ তুলে এদিন বিকেলে তমলুক হাসপাতাল মোড়ে বিক্ষোভ দেখায় এসইউসি নেতা-কর্মী-সমর্থকরা।

তবে জেলাশাসকের দফতরের সামনে তৃণমূলের শিবির নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ নিয়ে এদিন জেলাশাসকের কোনও বক্তব্য মেলেনি। তাঁকে বার বার ফোন করা হলেও কোনও জবাব মেলেনি।

একই ভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে জেলার পুলিশ সুপারকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

যদিও জেলাশাসকের অফিসের সামনে ও ভিতরে দলের সমর্থকদের জমায়েতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তমলুক শহর তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি চঞ্চল খাঁড়া। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য এদিন জেলা শাসকের অফিসে এসেছিলেন। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনেই আমাদের লোকজন ছিল। রাস্তায় তল্লাশি করা ও বিরোধীদলের মনোনয়নে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’

জেলার এক পুলিশ কর্তা কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘‘এই জেলায় শান্তি আছে। যে ভাবে শান্তি থাকে আর কী!’’

West Bengal Panchayat Elections 2018 Panchayat Poll Midnapore Violation TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy