Advertisement
১১ মে ২০২৪

তমলুকে সিপিএমকে সরিয়ে শেষ হাসি লক্ষ্মণ শেঠেরই

পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বরাবরই ডানপন্থীদের প্রভাব বেশি। সেই প্রত্যাশা বজায় রেখেই ২০১৫ সালের পুরভোটেও তৃণমূলেরই দখলে থাকছে তমলুকের পুরবোর্ড। তবে সকলকে তাক লাগিয়ে পুরসভার তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এল লক্ষ্মণ শেঠের নেতৃত্বাধীন ভারত নির্মাণ পার্টি। গতবার তমলুক পুরসভায় তিনটি আসন দখলে রাখা সিপিএমের ভাঁড়ার এ বার শূন্যই।

ভারত নির্মাণ মঞ্চের জয়ী প্রার্থী স্নিগ্ধা মিশ্রকে ঘিরে উচ্ছ্বাস সমর্থকদের।—নিজস্ব চিত্র।

ভারত নির্মাণ মঞ্চের জয়ী প্রার্থী স্নিগ্ধা মিশ্রকে ঘিরে উচ্ছ্বাস সমর্থকদের।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৫
Share: Save:

পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বরাবরই ডানপন্থীদের প্রভাব বেশি। সেই প্রত্যাশা বজায় রেখেই ২০১৫ সালের পুরভোটেও তৃণমূলেরই দখলে থাকছে তমলুকের পুরবোর্ড। তবে সকলকে তাক লাগিয়ে পুরসভার তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এল লক্ষ্মণ শেঠের নেতৃত্বাধীন ভারত নির্মাণ পার্টি। গতবার তমলুক পুরসভায় তিনটি আসন দখলে রাখা সিপিএমের ভাঁড়ার এ বার শূন্যই। তাই জেলা রাজনীতিতে সিপিএমকে এক নতুন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল লক্ষ্মণ শেঠের নতুন দলের এই জয়।

বামেদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড গত বার জিতেছিল বাম শরিক সিপিআই। এই বছরও ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে বাম শরিক সিপিআই। এ দিন ভোটের ফলপ্রকাশের পরই জানা যায়, তৃণমূল প্রার্থী কমল বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৩৯২ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হয়েছে ভারত নির্মাণ পার্টি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী চন্দন দে ওরফে মানা। কলেজ রাজনীতিতে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই করা চন্দনবাবু সিপিএমের তমলুক শহর জোনাল কমিটির সদস্য ছিলেন। লক্ষ্মণ শেঠের অনুগামী হিসেবে পরিচিত চন্দনবাবু এ বার পুরসভা ভোটে প্রথমবার দাঁড়িয়ে জয়ী হলেন।

পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে গতবার জিতেছিল তৃণমূল। এ বার ওই ওয়ার্ডে ভারত নির্মাণ পার্টি সমর্থিত নির্দল প্রার্থী ছিলেন স্নিগ্ধা মিশ্র। স্নিগ্ধাদেবী তমলুকের প্রাক্তন সাংসদ সত্যগোপাল মিশ্রের পুত্রবধূ। সিপিএমের প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও এ বার তৃণমূল প্রার্থী স্মিতা সামন্তকে ২৭২ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন স্নিগ্ধাদেবী। বামফ্রন্ট প্রার্থীকে পেছনে ফেলে তৃণমূলকে হারিয়ে জিতেছে লক্ষ্মণ শেঠের দলের দুই প্রার্থী।

শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে পুরপ্রধান দেবিকা মাইতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জেতা নির্দল প্রার্থী অলক সাঁতরাকে সমর্থন করেছিল বামফ্রন্ট, বিজেপি, কংগ্রেস। বিদায়ী পুরপ্রধান দেবিকা মাইতিকে ৭২২ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন অলকবাবু। তবে লক্ষ্মণ শেঠের দাবি, অলকবাবুও তাঁদের দলের সমর্থিত নির্দল প্রার্থী। অলকবাবু এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি।

পুরভোটের সময় নিজের দলের প্রার্থীদের হয়ে প্রকাশ্যে কোনও প্রচার চালালনি লক্ষ্মনবাবু। তা সত্বেও নতুন দল তৈরির পরে প্রথমবার পুর নির্বাচনে লড়াই করে দলীয় প্রার্থীদের জয় নিয়ে লক্ষ্মণবাবু এ দিন তমলুকে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘‘তমলুক শহরের মানুষ ভোটে যে রায় দিয়েছেন তাতে তৃণমূল এককভাবে পুরবোর্ড গঠন করতে পারবে। আমরা তিনটি আসনে জয়লাভ করেছি। আমরা বিরোধী দলের মর্যাদা চাই।’’ লক্ষ্মণবাবু আরও বলেন, ‘‘আমরা চাইছি তমলুকে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্তভাবে পুরসভার কাজ করতে। শহরের উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা পুরবোর্ডকে সর্বতোভাবে সাহায্য করব। কিন্তু পুরবোর্ড যদি দুর্নীতি করে তবে তাঁর প্রতিবাদ করব।’’

যদিও পুরসভার নির্বাচনে লক্ষ্মণবাবুর দলের এই জয় নিয়ে সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির বক্তব্য, ‘‘লক্ষ্মণবাবুর দলের প্রার্থীদের তৃণমূলের একাংশ সাহায্য করেছে। তাতেই এই জয়। আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিল। তাই আশানুরূপ ফল হয় নি।’’ লক্ষ্মণ শেঠের ভারত নির্মাণ মঞ্চের এমন উত্থানকে কী চোখে দেখছে তৃণমূল? তৃণমূলের তমলুক শহর সভাপতি দিব্যেন্দু রায়ের কথায়, ‘‘সিপিএমের ভোটাররা দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দিয়েছে। সিপিএমের অনেক সমর্থক বিকল্প হিসেবে ওই নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করেছে। তমলুকে লক্ষ্মণবাবুর আলাদা করে কোনও প্রভাব নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE