Advertisement
E-Paper

দাসপুরের ডাকাতিতে বিহার-যোগ

এ বার দাসপুরের খুকুড়দহে সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনার কিনারাও করে ফেলল পুলিশ। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, এই ঘটনায় বিহার-যোগ রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৭ ০১:১১
উদ্ধার হওয়া গয়না দেখাচ্ছেন পুলিশ সুপার। নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার হওয়া গয়না দেখাচ্ছেন পুলিশ সুপার। নিজস্ব চিত্র

গুলিতে জখম এক দুষ্কৃতী ধরা পড়েছিল আগেই। এ বার দাসপুরের খুকুড়দহে সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনার কিনারাও করে ফেলল পুলিশ। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, এই ঘটনায় বিহার-যোগ রয়েছে। দুষ্কৃতী দলের ৯ জনের মধ্যে ৫ জনই বিহারের ছাপরার বাসিন্দা। তাদের নামও জানতে পেরেছে পুলিশ। এর মধ্যে ১ জন ধরা পড়েছে। বাকি ৪ জনের খোঁজ চলছে। তাদের খোঁজে পুলিশের একটি দল বিহারেও যাবে। আর দুষ্কৃতী দলের বাকি ৪ জন স্থানীয় বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “দাসপুরের ডাকাতির ঘটনার কিনারা হয়েছে। দু’জনকে আমরা ধরেছি। এক জন বিহারের ছাপরার, অন্য জন স্থানীয়। বাকি যারা আছে তল্লাশি চালিয়ে তাদেরও দ্রুত গ্রেফতার করে ফেলব।’’

দাসপুরের খুকুড়দহে সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার সন্ধ্যায়। মালিক দেবাশিস সামন্তর কাঁধে খুরের কোপ দিয়ে বেশ কিছু রুপোর বাট এবং সোনার গয়না নিয়ে দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয় বলে অভিযোগ। সঙ্গে নিয়ে যায় তিনটি মোবাইলও। ঘটনার রাতেই রীতিমতো পিছু নিয়ে এক দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলে পুলিশ। তার আগে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পুলিশের গুলির লড়াই হয়। পুলিশের দাবি, সঙ্গীদের ছোড়া গুলিতেই জখম হয় এক দুষ্কৃতী।

খুব কম সময়ের মধ্যে দাসপুরের ডাকাতির ঘটনার কিনারা হওয়ায় পুলিশ সুপার ভারতীদেবী বলছিলেন, “ডাকাতরা ধস্তাধস্তি করতে করতে পাঁশকুড়ার মধ্যে ঢুকে পড়ে। পুলিশের সঙ্গে ওদের সঙ্গে লড়তে লড়তে যায়, অনেকটা সিনেমার মতোই। ওরা পুলিশকে লক্ষ করে ১৯টি গুলি চালিয়েছে।’’ ডাকাতদের পিছু নেওয়া পুলিশ দলের নেতৃত্বে ছিলেন ঘাটালের এসডিপিও বিবেক বর্মা। তাঁর প্রশংসা করে ভারতীদেবীর মন্তব্য, ‘‘বিবেক খুব ভাল কাজ করেছেন। মোটর সাইকেলে ডাকাত দলের পিছু ধাওয়া করাটা খুব সহজ নয়। এসডিপিও- র কানের কাছ থেকে ৩-৪টি গুলি বেরিয়ে গিয়েছে। একটা গুলি প্রায় কান ছুঁয়ে গিয়েছে। বিবেক তো এক সময় শুনতেও পাচ্ছিলেন না।’’ এক সময়ে ঝাড়গ্রামের এসডিপিও ছিলেন বিবেক বর্মা। বহু অভিযানে গিয়েছেন, মাওবাদী ধরেছেন। ভিন্ রাজ্যে গিয়ে ছদ্মবেশেও ডাকাত পাকড়াও করেছেন। মাস কয়েক আগে তাঁর ঘাটালে বদলি হয়। দাসপুরের এক পুলিশকর্মীও মানছেন, “এসডিপিও স্যার দুঃসাহসিক কাজ করেছেন। ডাকাত দল একবার এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে গেলে ঘটনার কিনারা করা মুশকিল হত।’’

ধৃতদের কাছ থেকে দু’টি ব্যাগ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার মধ্যে থেকে ১০০ গ্রাম সোনা এবং ৭০ গ্রাম রুপো মিলেছে। তিনটি মোবাইলও মিলেছে। দুষ্কৃতীরা তিনটি বাইকে দাসপুরে এসেছিল। ওই তিনটি বাইকও উদ্ধার হয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, দুষ্কৃতীরা ক্রেতা সেজেই সোনার দোকানে এসেছিল। খবর পেয়ে ডাকাত দলের পিছু ধাওয়া করেন ঘাটালের এসডিপিও বিবেক। ভারতীদেবী বলছিলেন, “দাসপুরের এই ঘটনাটা অন্য রকম তিনটি কারণে। প্রথমত, ঘটনার তিন মিনিটের মধ্যে পুলিশ পৌঁছে যায়। ওরা গুলি ছোড়ার পরেও এসডিপিও থামেননি। সমানে ধাওয়া করে গিয়েছেন। আমার অফিসারের গায়েও গুলি লাগতে পারত। আর একটা অমিতাভ মালিক দেখতে পেতেন।’’ পুলিশ সুপারের আরও মন্তব্য, ‘‘দ্বিতীয়ত, আমি খুব গর্বিত যে একজন অফিসার জঙ্গলমহল থেকে এসে এ ভাবে ডাকাতদের ধরতে সমর্থ হয়েছেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ঘটনার কিনারা করা সম্ভব হয়েছে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর তৃতীয়ত, সিভিক ভলান্টিয়ার এবং ভিলেজ পুলিশরা খুব সক্রিয় ভাবে কাজ করেছে।’’

পুলিশ জানতে পেরেছে, ছাপরা থেকে যে ৫ জন এসেছিল তাদের নাম জয়প্রকাশ রাও, সোনু রাও, বিশাল যাদব, জন্মেঞ্জয় রাও এবং কৃষ্ণা যাদব। আর স্থানীয় যে ৪ জন জড়িত তারা হল— কাশীনাথ বুড়াই, দিলীপ বুড়াই, মুক্তি পাঁজা এবং পিন্টু। পিন্টুর পদবি এবং ঠিকানা এখনও জানতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ সুপার বলেন, “দিলীপ মুক্তি পাঁজার জামাই। এর আগে ওডিশায় সোনার দোকানে ডাকাতি করতে গিয়ে ভদ্রক জেলে কিছু দিন ছিল। গত বছর ভদ্রক জেল থেকে বেরোয়।’’ ঘটনার দিন গুলিতে জখম হয়েছিল জয়প্রকাশ। সে এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার বিকেলে ডেবরার কাছ থেকে কাশীনাথকেও ধরা হয়েছে।

Bharati Ghosh Robbery Bihar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy